Advertisement
E-Paper

নূতন দিশায়

ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ কাঠমান্ডু সফরে যাইতেছেন। তাঁহার লক্ষ্য ভারত-নেপাল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নূতন দিশা প্রদান। তাঁহার এই সফর অদূর ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেপাল সফরের প্রস্তুতিও বটে। মোদী ইতিমধ্যেই ভুটান সফর সাঙ্গ করিয়াছেন।

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৪ ০০:০০

ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ কাঠমান্ডু সফরে যাইতেছেন। তাঁহার লক্ষ্য ভারত-নেপাল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নূতন দিশা প্রদান। তাঁহার এই সফর অদূর ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেপাল সফরের প্রস্তুতিও বটে। মোদী ইতিমধ্যেই ভুটান সফর সাঙ্গ করিয়াছেন। তাঁহার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানেই সার্ক গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানাইবার মধ্যে প্রতিবেশীদের সহিত সুসম্পর্ক গড়ার যে প্রয়াস ছিল, তাহার অঙ্গ হিসাবে প্রথমেই তিনি ভুটান সফর করেন। পরবর্তী গন্তব্য নেপাল। তিনি কাঠমান্ডু গেলে তাহা হইবে ইন্দ্রকুমার গুজরালের পর গত সতেরো বৎসরে কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রথম নেপাল সফর। সুষমা স্বরাজ সেই গুরুত্বপূর্ণ সফরেরই পটভূমি রচনা করিতে গিয়াছেন।

নেপালের সহিত ভারতের সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের। এক সময় এই প্রতিবেশী দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও নয়াদিল্লির বড় ভূমিকা ছিল। এখনও নেপালের অধিকাংশ অত্যাবশ্যক পণ্য ভারত হইতেই রফতানি হয়। নেপালের পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ভারতীয় শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলির ভারী বিনিয়োগও আছে। দুই দেশের সীমান্তে যাতায়াতের কোনও কড়াকড়ি না-থাকায় এক দেশের মানুষ অনায়াসে অন্য দেশে যান। অথচ এমন একটি মিত্র দেশের সহিত ভারতের সম্পর্ক ইদানীং তত মধুর নয়। বিশেষত মাওবাদীদের সংক্ষিপ্ত শাসনকালে এই সম্পর্ক রীতিমত বিষাইয়া ওঠে। উত্তরে চিনের সহিত বর্ধমান ঘনিষ্ঠতা এবং নেপালের পরিকাঠামো ক্ষেত্রে চিনা বিনিয়োগ কাঠমান্ডুকে উত্তরোত্তর বেজিংয়ের উপর নির্ভরশীলও করিতেছে। এখন আর ইহা ধরিয়া লওয়ার সুযোগ নাই যে, ভুটানের মতো বাংলাদেশ বা নেপালও দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ শিরোধার্য করিয়া চলিবে। মলদ্বীপের সাম্প্রতিক ঘটনাবলিই তাহার প্রমাণ। নরেন্দ্র মোদী বা সুষমা স্বরাজের কাজটি তাই বেশ কঠিন।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে আগের উষ্ণতা ফিরাইয়া আনার প্রধান উপায় অর্থনৈতিক সহযোগিতা। নেপালের জনসাধারণের দুঃসহ দারিদ্র ঘুচাইবার জন্য ভারতের আর্থিক সহযোগিতা ও অনুদান এ ক্ষেত্রে নির্ণায়ক হইতে পারে। তবে সর্বাগ্রে দরকার, দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত অসম চুক্তিগুলির নবীকরণ ও সংশোধন। ভারত এলাকার বৃহৎশক্তি হওয়ায় অনেক প্রতিবেশীর সঙ্গেই তাহার বাণিজ্য চুক্তিতে অসাম্য রহিয়াছে। ওই সব চুক্তিতে ভারত সুবিধাজনক অবস্থানে রহিয়াছে। দৃষ্টান্ত জল-বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ সংক্রান্ত বন্দোবস্ত। জলের উৎস অর্থাৎ নদীগুলি নেপালে অবস্থিত, অথচ সেই উৎস ব্যবহার করিয়া উৎপাদিত বিদ্যুতের সিংহভাগ ভারতের বখরায়। ইহা লইয়া দিল্লির বিরুদ্ধে নেপালের ক্ষোভও কম নয়। নেপালে রাস্তাঘাট, সেতু, কলকারখানা নির্মাণ এবং তাহার কৃষি ও শিল্পে ভারতীয় প্রযুক্তির বিনিয়োগও কাঠমান্ডুর কাম্য। নেপালের মন জয় করিতে হইলে, বিশেষত তাহাকে চিনের দিকে আরও ঝুঁকিয়া পড়া হইতে নিরস্ত করিতে হইলে ভারতকে এ ব্যাপারে মনোনিবেশ করিতে হইবে। কিছু সমস্যাও রহিয়াছে, যেমন অপরাধীদের প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত চুক্তি এবং অমীমাংসিত সীমান্ত সমস্যা। ভারতে সন্ত্রাস চালাইতে জঙ্গিরা প্রায়শ নেপালের জমি ব্যবহার করিয়া থাকে। ইহা বন্ধ করিতে কাঠমান্ডুকে চাপ দিতে হইবে। সীমান্ত-বিরোধও দ্রুত মিটাইয়া ফেলা আবশ্যক। সুষমা স্বরাজকে একই সঙ্গে নিশ্চিত করিতে হইবে যাহাতে নেপাল আরও বেজিং-মুখী হইয়া না পড়ে।

anandabazar editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy