Advertisement
E-Paper

‘ন্যূনতম সরকার’ নহে

গত মে মাস হইতে দিল্লির সরকারি অলিন্দে পেশাদারিত্বের হাওয়া বহিতেছে। পেশাদারিত্ব আনিবার প্রয়াসটি যে কর্মীদের টেবিলেই থমকাইয়া যায় নাই, মন্ত্রীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হইতেছে, তাহার অন্তত কিছু প্রমাণ মন্ত্রিসভার রদবদলে নরেন্দ্র মোদী পেশ করিলেন। পেশাদারিত্বের দাবিই হইল, কেহ কোনও কাজে সফল না হইলে তাঁহাকে সেই দায়িত্ব হইতে সরাইয়া দিতে হইবে।

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০১

গত মে মাস হইতে দিল্লির সরকারি অলিন্দে পেশাদারিত্বের হাওয়া বহিতেছে। পেশাদারিত্ব আনিবার প্রয়াসটি যে কর্মীদের টেবিলেই থমকাইয়া যায় নাই, মন্ত্রীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হইতেছে, তাহার অন্তত কিছু প্রমাণ মন্ত্রিসভার রদবদলে নরেন্দ্র মোদী পেশ করিলেন। পেশাদারিত্বের দাবিই হইল, কেহ কোনও কাজে সফল না হইলে তাঁহাকে সেই দায়িত্ব হইতে সরাইয়া দিতে হইবে। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্বে থাকা কয়েক জন মন্ত্রীর কাজের মান আশানুরূপ ছিল না। সেই তালিকায় যেমন রেলমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া ছিলেন, তেমনই ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন। প্রকাশ জাবড়েকরও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের দায়িত্বে তেমন দাগ রাখিতে পারেন নাই। নরেন্দ্র মোদী তাঁহাদের অপেক্ষাকৃত গুরুত্বহীন মন্ত্রকে পাঠাইয়াছেন। অন্য দিকে, এই রদবদলে যাঁহারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাইলেন, তাঁহাদের মধ্যে মনোহর পর্রীকর ইতিমধ্যেই প্রশাসক রূপে দক্ষতার পরিচয় দিয়াছেন, অন্যদেরও সফল হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট। অর্থ দফতরের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বপ্রাপ্ত জয়ন্ত সিন্হা যেমন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী, অগ্রণী বহুজাতিক সংস্থায় কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। অলিম্পিকে পদকজয়ী রাজ্যবর্ধন রাঠৌর, গায়ক বাবুল সুপ্রিয়রাও মন্ত্রিসভায় স্থান পাইয়াছেন। মন্ত্রিত্বে তাঁহারা সফল হইবেন কি না, সে প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যতের গর্ভে। কিন্তু, পেশাদারি সাফল্য তাঁহাদের কয়েক কদম আগাইয়া রাখিবে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষিতেও মন্ত্রিসভার এই রদবদল তাৎপর্যপূর্ণ। সুরেশ প্রভুকে রেলের ন্যায় মন্ত্রকের দায়িত্ব দিয়া, এবং শিবসেনার যাবতীয় দাবি অগ্রাহ্য করিয়া নরেন্দ্র মোদী মাতোশ্রীর উদ্দেশে একটি দ্ব্যর্থহীন বার্তা পাঠাইলেন। নূতন জোটধর্মের বার্তা। চৌধুরী বীরেন্দ্র সিংহকে গ্রামোন্নয়ন দফতরে বসানোও বার্তাবহ। অন্য দল হইতে বিজেপিতে যোগ দিলে যে যথেষ্ট গুরুত্ব পাওয়া সম্ভব, মোদী কথাটি বুঝাইয়া দিলেন। অন্য দিকে, উত্তর প্রদেশ ও বিহার হইতে এই দফায় মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাইলেন যথাক্রমে আরও চার ও তিন জন। মন্ত্রিসভায় এই দুই রাজ্যের মোট প্রতিনিধিসংখ্যা এখন ২১ জন। যে রাজ্যগুলিতে বিজেপি পায়ের নীচে শক্ত জমি খুঁজিয়া পাইতেছে, স্পষ্টতই মোদী তাহাদের গুরুত্ব অস্বীকার করেন নাই। যে রাজ্যে পা ফেলিবার জমির সন্ধান চলিতেছে, মন্ত্রিসভায় সেই পশ্চিমবঙ্গও প্রতিনিধি পাইল। বাবুল সুপ্রিয় প্রতিমন্ত্রী হইয়াছেন বটে, কিন্তু মন্ত্রকটি গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৬ সালের নির্বাচনকে যে তাঁহারা লঘু করিয়া দেখিতেছেন না, বিজেপি নেতৃত্ব সে বিষয়ে সংশয়ের কোনও অবকাশ রাখিলেন না।

কিন্তু, রাজ্য রাজনীতি ও জাতপাতের যাবতীয় সমীকরণ মিলাইবার তাড়নায় সরকারে মন্ত্রীর সংখ্যা বাড়িয়া দাঁড়াইল ৬৬। সংখ্যাটি পরিচিত, দ্বিতীয় দফার ইউপিএ মন্ত্রিসভাতেও সদস্যসংখ্যা ছেষট্টিই ছিল। অবশ্য, আরও ১৫টি কুর্সি খালি আছে— মন্ত্রীর সংখ্যা ৮১ পর্যন্ত যাইতে পারে। আগামী সাড়ে চার বৎসরে নরেন্দ্র মোদী তাঁহার পূর্বসূরি অটলবিহারী বাজপায়ীর ৭৭ জন মন্ত্রীর রেকর্ড ভাঙিবেন কি না, ভবিষ্যৎ বলিবে। তবে, তিনি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ভাবে প্রমাণ করিলেন, মন্ত্রিসভা গঠনের প্রশ্নে তিনি ব্যতিক্রমী নহেন, বরং নিতান্তই সনাতনী ঐতিহ্যের বাহক। নির্বাচনের পূর্বে তিনি যে ‘ন্যূনতম সরকার, সর্বোচ্চ সুশাসন’-এর প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন, তাহার প্রথমাংশটি ইতিমধ্যেই অন্তঃসারহীন প্রতিপন্ন হইয়াছে। ৬৬ জন মন্ত্রীকে লইয়া ‘ন্যূনতম সরকার’ হয় না। তবে আশার কথা, মন্ত্রীর সংখ্যা এবং শাসনের মানের মধ্যে কোনও প্রত্যক্ষ ব্যস্তানুপাতিক সম্পর্ক নাই। তাঁহার মন্ত্রিসভার কলেবর ইউপিএ-র সমান হইয়াছে বলিয়াই সেই নীতিপঙ্গুত্ব তাঁহার সরকারকেও গ্রাস করিবে, এমন নিশ্চয়তা নাই। এখন দেখিবার, নরেন্দ্র মোদী কি এই বৃহদায়তন সরকারকে পেশাদারি ভঙ্গিতে চালাইতে পারিবেন? সর্বোচ্চ সুশাসনে পৌঁছাইতে পারিবেন?

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy