Advertisement
E-Paper

নতুন সুযোগের সামনে দিল্লি ও ওয়াশিংটন

অনেক দিন পরে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের পিছনে সহদৃষ্টি কাজ করছে, সঙ্গে রয়েছে তন্নিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং অনুকূল পরিবেশ।এশিয়ার ভবিষ্যত্‌কে সুস্থিত ও সমৃদ্ধ করে তোলার জন্য এই মহাদেশের বিভিন্ন দায়িত্বশীল দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন আমেরিকার মূল লক্ষ্য। এই পরিপ্রেক্ষিতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে দেখে। অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা দু’দিক থেকেই ভারত তার কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

রিচার্ড এম রসো

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০০

এশিয়ার ভবিষ্যত্‌কে সুস্থিত ও সমৃদ্ধ করে তোলার জন্য এই মহাদেশের বিভিন্ন দায়িত্বশীল দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন আমেরিকার মূল লক্ষ্য। এই পরিপ্রেক্ষিতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে দেখে। অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা দু’দিক থেকেই ভারত তার কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। নব্বইয়ের দশক থেকে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল অর্থনৈতিক যোগাযোগ। ভারতের অর্থনীতিকে জোরদার করাই সচরাচর এশিয়ার সঙ্গে নতুন ভারসাম্য আনার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছে, কিন্তু কখনও কখনও অন্য সব কিছু সরিয়ে রেখে প্রতিরক্ষার প্রশ্নটি সবচেয়ে প্রাধান্য পেয়েছে, যেমন অসামরিক পরমাণু প্রযুক্তি চুক্তির ক্ষেত্রে। গত সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ওয়াশিংটন সফরের সময় একটি যৌথ বিবৃতিতে দু’দেশের সম্পর্কের এই নতুন সমীকরণেই জোর দেওয়া হয়েছে।

ভারত সম্পর্কে মার্কিন নীতিকারদের দৃষ্টিভঙ্গিতে একটা নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে। পনেরো বছর আগেও ভারতকে বিচার করা হত প্রধানত ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ভিত্তিতে। ক্রমে ভারত রাজনৈতিক ভাবে অশান্ত একটি অঞ্চলের মধ্যে সুস্থিতির প্রতিমূর্তি রূপে গণ্য হতে থাকে। এখন আমেরিকার মূল উদ্দেশ্য হল, এশিয়ার উজ্জ্বল ভবিষ্যত্‌ তৈরিতে ভারতের ক্রমবর্ধমান ভূমিকার উপর নজর দেওয়া। এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই উত্‌সাহ এখন ভারতের আচরণেও প্রতিফলিত হচ্ছে। এ বছরের গোড়ার দিকে দ্য সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ, ওপিনিয়ন ডায়নামিকস-এর সঙ্গে এশীয়-প্যাসিফিক দেশের ৪০০ কূটনীতিবিশারদকে নিয়ে এক সমীক্ষা চালায়। এই গোষ্ঠীর সদস্যদের ধারণা ছিল, আগামী দশ বছরে ক্ষমতার পাল্লা চিনের দিকে আরও ঝুঁকে পড়বে, অর্থনীতির উন্নতির সম্ভাবনা জোরালো হবে, কিন্তু এই অঞ্চলে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়বে। এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে একমাত্র ভারতেই এই ধারণা প্রবল ছিল যে, আমেরিকাই হবে প্রধানতম অর্থনৈতিক সহযোগী।

‘এশিয়ার দিকে ঝোঁক’ (এশিয়া পিভট) কথাটা আসার অনেক আগেই মার্কিন নেতারা ‘ভারতের দিকে ঝোঁক’ দেখিয়েছিলেন। এই ঝোঁক স্পষ্ট রূপ পেল ২০০৫-এ, অসামরিক পরমাণু সহযোগিতার প্রস্তাব যখন ঘোষিত হল। ভারতের অর্থনীতি তখন দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছিল, বিনিয়োগ ও ব্যবসার প্রসার হচ্ছিল। আমেরিকাও ভারতের সঙ্গে জোরদার অর্থনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করতে চাইছিল।

কিন্তু এশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে ‘আনুষ্ঠানিক ভাবে’ নতুন ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার প্রায় সমসময়েই ভারত-মার্কিন সম্পর্কের অগ্রগতি কিছুটা ব্যাহত হয়। ভারতে পরমাণু প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সীমাহীন দায়বদ্ধতা সংক্রান্ত আইন পাশ হওয়ায় ও ভারতের যুদ্ধবিমানের বরাত হারানোর পরে নিরাপত্তা বিষয়ক সহযোগিতার ব্যাপারে মার্কিন নীতিকাররা আশাহত হন। তার উপরে ভারতে এমন কিছু নীতি (পেটেন্ট ইত্যাদি ক্ষেত্রে) অনুসৃত হয়েছে, যা অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির অনুকূল নয়।

ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সম্পর্কের অবস্থাটাকে দু’ভাবে দেখা যায়। এক দিকে, বাণিজ্য ও লগ্নির বাস্তবটা বিচার করা যায়। অন্য দিকে, বাণিজ্যিক নীতির রূপকার ও বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন ও করছেন, তার মাধ্যমেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের হিসেব নেওয়া যায়। গত কয়েক বছরে দু’দিক থেকেই অবনতি দেখা গেছে। লেনদেন কমেছে; এফডিআই ও এফআইআই, দু’রকমের বিনিয়োগেই ভাটার টান দেখা গিয়েছে। পাশাপাশি, দিল্লির পূর্ববর্তী সরকারের অর্থনৈতিক নীতিতে মার্কিন বাণিজ্য নীতির উপদেষ্টারা অসন্তুষ্ট হয়েছেন এবং মার্কিন সরকারকে ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি অনুসরণের সুপারিশ করেছেন।

ছ’মাস আগে ভারতে নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকে ভারত সম্পর্কে মার্কিন ব্যবসায়ী মহল ও নীতিকারদের দৃষ্টিভঙ্গির ব্যবধান বাড়ছে। মোদী সরকার সত্যই কতটা সংস্কার করতে চায়, সে প্রশ্নে বিশেষজ্ঞরা খুব সতর্ক। এর কারণ: ডব্লিউটিও-র ট্রেড ফেসিলিটেশন চুক্তির ব্যাপারে ভারতের আচরণ, মোদী সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট সম্পর্কে অতি-প্রত্যাশা ও অতীতের কিছু ক্ষতিকর আর্থিক নীতি প্রত্যাহারে যথেষ্ট অগ্রগতির অভাব। অন্য দিকে, ব্যবসায়ীদের মনোভাব অনেক বেশি ইতিবাচক। ২০১৩-র তুলনায় চলতি বছরে এফডিআই অনেক বেড়েছে, এফআইআই তো রেকর্ড গড়ার পথে।

ভারত এশিয়া-ঝোঁকের ‘শরিক’ হয়নি বটে, কিন্তু এই প্রবণতার অন্তর্নিহিত আদর্শের প্রশ্নে, বিশেষত অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে দু’তরফের চিন্তায় একটা সাযুজ্য আছে। যে সব প্রশ্নে দু’দেশের মতানৈক্য আছে, গত সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ওয়াশিংটন সফরের শেষে যৌথ বিবৃতিতে সেগুলির কথা খোলাখুলি বলা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবসম্মত অর্থনৈতিক সহযোগিতার পরিধি প্রসারের সম্ভাবনাও চিহ্নিত হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ওবামার দ্বিতীয় বার ভারতে আসার সিদ্ধান্ত একটা সুযোগ সৃষ্টি করেছে যৌথ বিবৃতির বিষয়গুলিতে অগ্রগতির সুযোগ। অনেক দিন পরে আবার মনে হচ্ছে, ভারত-মার্কিন সম্পর্কের পিছনে একটা সহদৃষ্টি কাজ করছে, তার সঙ্গে রয়েছে তন্নিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং অনুকূল পরিবেশ।

ওয়াশিংটন ডিসি’তে সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এ কূটনীতিবিদ

post editorial richard m roseau
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy