Advertisement
E-Paper

প্রতিনিধিত্বের অধিকার

আগামী বছর মায়ানমারে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। কিন্তু এই নির্বাচনেও সে দেশের প্রধান বিরোধী নেত্রী এবং গণতান্ত্রিক অধিকার আন্দোলনের প্রতীক আঙ সান সু চি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতে পারিবেন না। অর্ধ শতক ধরিয়া মায়ানমারে শাসন চালানো সামরিক কর্তাদের সিদ্ধান্তটি অবশ্য অভিনব নয়, তাহার নিহিত যুক্তিপরম্পরাতেও নূতনত্ব কিছু নাই।

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৪ ০০:৩২

আগামী বছর মায়ানমারে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। কিন্তু এই নির্বাচনেও সে দেশের প্রধান বিরোধী নেত্রী এবং গণতান্ত্রিক অধিকার আন্দোলনের প্রতীক আঙ সান সু চি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতে পারিবেন না। অর্ধ শতক ধরিয়া মায়ানমারে শাসন চালানো সামরিক কর্তাদের সিদ্ধান্তটি অবশ্য অভিনব নয়, তাহার নিহিত যুক্তিপরম্পরাতেও নূতনত্ব কিছু নাই। জননেত্রী সু চিকে ক্ষমতার গদি হইতে দূরে সরাইয়া রাখিতে ইহা আগেই গৃহীত হইয়াছিল। সংবিধানে এই মর্মে বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হইয়াছিল যে, কোনও বিদেশি নাগরিককে বিবাহ করা কিংবা সেই নাগরিকের সন্তানের জননী হওয়া কোনও মহিলা মায়ানমারে কখনও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়িতে পারিবেন না। বিধানটি ২০০৮ সনে জাতীয় সংবিধানে প্রবেশ করান ফৌজি শাসকরা। সেটি রদ করা বা সংশোধন-পরিমার্জন করার জন্য একটি সংসদীয় কমিটিও গঠিত হয়। দেখা যাইতেছে, অধিকাংশ কমিটি-সদস্যই অনুচ্ছেদটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত রাখার পক্ষপাতী।

দীর্ঘ কাল ফৌজি শাসনের সুযোগসুবিধা ভোগ করিতে অভ্যস্ত জেনারেলরা ভালই বুঝিয়াছিলেন, সু চি নিজের মাতৃভূমি ত্যাগ করিবেন না, জঙ্গি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে স্বদেশেই থাকিয়া যাইবেন। তাই খিড়কি-পথে তাঁহার রাজনৈতিক উত্থানের সম্ভাবনা প্রতিহত করা দরকার। সে জন্যই সংবিধান সংশোধন। স্বৈরতন্ত্রীরা যুগে যুগে প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করিতে এমন পন্থা লইয়াছে। হয় প্রতিপক্ষকে পৃথিবী হইতে সরাইয়া দিয়াছে, নতুবা নানা কৌশলে তাঁহাদের ক্ষমতায়নের সম্ভাবনা বানচাল করিয়াছে। সু চিকে দীর্ঘ দুই দশক জেলে পুরিয়া রাখিয়াও যখন জনমন হইতে তাঁহাকে মুছিয়া ফেলা গেল না, উপরন্তু তিনি প্রথম সীমিত সুযোগেই দেখাইয়া দিলেন, তাঁহার জনসমর্থন ও গণভিত্তি অটুট, তখন তাঁহার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অধিকার লইয়াই শাসকরা প্রশ্ন তুলিয়া দিল। বিচিত্র অজুহাত পেশ করিয়া বলা হইল, কোনও বিদেশির স্ত্রী বা মা মায়ানমারের নির্বাচনে দাঁড়াইতে পারিবেন না। তত দিনে সু চির স্বামী প্রয়াত, ব্রিটিশ নাগরিক তাঁহার দুই পুত্রও প্রবাসী। অথচ পাছে সু চির অবর্তমানে তাঁহার সন্তানদের মধ্যে কেহ রাজনীতিতে হাত পাকাইয়া ভবিষ্যতে কখনও শাসনক্ষমতার দাবিদার হইয়া ওঠে, তাই সেই সম্ভাবনার ‘গোড়া মারিয়া রাখিতে’ সংবিধানে এমন অদ্ভুত শর্ত আরোপিত হইল।

অনেকে আশা করিয়াছিলেন, বিশেষত পাশ্চাত্যে এই আশা দানা বাঁধিতেছিল যে, এই বার হয়তো মায়ানমারের সংস্কারবাদী প্রেসিডেন্ট সংবিধানের ওই বৈষম্যমূলক অনুচ্ছেদটি রদ করিতে উদ্যত হইবেন। কিন্তু গোটা বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য গঠিত কমিটিতে সেনাবাহিনীর প্রাক্তন অফিসার কিংবা তাহাদের প্রতিনিধিরাই গরিষ্ঠ, ৩১ জনের কমিটিতে মাত্র দুই জন ছিলেন সু চির দলের। স্বভাবতই বিধানটি রদ হয় নাই। অর্থাৎ সু চি এ বারও ভোটে লড়িতে পারিবেন না। ফৌজি একনায়করা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে গণতন্ত্রী হইয়া উঠিতে পারেন না। পাকিস্তানে, বাংলাদেশে, মিশরে তাহার প্রমাণ মিলিয়াছে। মায়ানমারেও মিলিতেছে। সু চিকে হয়তো নূতন করিয়া আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হইতে হইবে। সেই আন্দোলনের মূল দাবিই হইবে ফৌজি শাহির ক্ষমতা হ্রাস। তবে সেই আন্দোলন সম্ভবত একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। তাহার জন্য এখনও পথ চলিতে হইবে, দেশবাসীকে আরও অনেক বেশি সংগঠিত করিতে হইবে। গণতন্ত্রের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নহে।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy