Advertisement
E-Paper

বিপজ্জনক

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁহার সীমা অতিক্রম করিয়াছেন, এই সংবাদটি সুদূর অতীতে চাঞ্চল্যকর ঠেকিতে পারিত। এখন বঙ্গবাসীর গা-সহা হইয়া গিয়াছে। তিনি বিরোধী নেত্রী হিসাবে বা মুখ্যমন্ত্রী রূপে এত দিন যাহা করিয়াছেন (অথবা করেন নাই), যাহা বলিয়াছেন (অথবা বলেন নাই), তাহার অনেকগুলির অবস্থানই ঔচিত্যের সীমার অপর পারে।

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০১

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁহার সীমা অতিক্রম করিয়াছেন, এই সংবাদটি সুদূর অতীতে চাঞ্চল্যকর ঠেকিতে পারিত। এখন বঙ্গবাসীর গা-সহা হইয়া গিয়াছে। তিনি বিরোধী নেত্রী হিসাবে বা মুখ্যমন্ত্রী রূপে এত দিন যাহা করিয়াছেন (অথবা করেন নাই), যাহা বলিয়াছেন (অথবা বলেন নাই), তাহার অনেকগুলির অবস্থানই ঔচিত্যের সীমার অপর পারে। তাঁহার রাজনৈতিক জীবন তাঁহাকে বাক্শৌণ্ডিক রূপে প্রতিষ্ঠা করিয়াছে। স্মর্তব্য, ‘শৌণ্ডিক’ শব্দটির বহু অর্থের মধ্যে ‘বিখ্যাত’ও একটি। কিন্তু, অমিত প্রগলভতার বিপদ, তাহা থামিতে জানে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানেন না, কোন সীমাটি কোনও অবস্থাতেই অতিক্রম করা চলে না। মুখ্যমন্ত্রী বলিয়া বসিয়াছেন, বর্ধমান বিস্ফোরণটি আসলে রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (সংক্ষেপে, ‘র’)-এর ষড়যন্ত্র। কোনও প্রমাণ ছাড়া এমন মারাত্মক কথা কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দূরস্থান, কোনও দায়িত্বশীল রাজনীতিক, অথবা কোনও সচেতন নাগরিকও বলিবেন না। বস্তুত, ‘র’-এর নামে এমন অভিযোগ করিতে সন্ত্রাসবাদীরাও একাধিক বার ভাবিবে বলিয়াই অনুমান। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই বিবেচনা বোধ নাই। ছাত্রদের বেয়াদবি হইতে ধর্ষণের ঘটনা অথবা সাংসদের হুমকি, সব ক্ষেত্রেই তিনি যেমন বিনা অনুসন্ধানে, ভিত্তিহীন ভাবে রায় ঘোষণা করিতে অভ্যস্ত, এই ক্ষেত্রেও তাহাই করিয়াছেন। এমন উক্তির পরেও যদি তাঁহাকে ‘দেশদ্রোহী’ না বলা হয়, তবে দেশদ্রোহী কে?

পশ্চিমবঙ্গ যে ক্রমেই সন্ত্রাসবাদীদের অভয়ারণ্য হইয়া উঠিতেছে, এমন কথা মনে করিবার যথেষ্ট কারণ আছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার সেই বাড়বাড়ন্তে প্রত্যক্ষ মদত জোগান, এমন অভিযোগ প্রমাণসাপেক্ষ। কিন্তু, প্রশাসনের সার্বিক অকর্মণ্যতায় যে জঙ্গিদের বিশেষ সুবিধা হইতেছে, তাহাতে সংশয় নাই। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সূত্র পাইয়াও পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ সন্ত্রাসী ঘাঁটি খুঁজিতে পারে না। এমনকী, দুর্জনে বলে, বিস্ফোরণের পর প্রমাণাদি লোপাটের কাজটিও তাহারা যথেষ্ট দক্ষ ভাবে করিতে পারে নাই। এনআইএ-র দল আসিয়া যে জায়গাগুলি হইতে ভূরি ভূরি প্রমাণ লইয়া গিয়াছে, রাজ্য পুলিশ সেই জায়গা হইতেই খালি হাতে ফিরিয়াছিল। অথচ, সেই কেন্দ্রীয় সাহায্য লইতেও মুখ্যমন্ত্রীর গাত্রদাহ। তবে, তাঁহার অপরিণতমনস্ক উক্তিটি আর রাজনৈতিক তরজায় সীমিত থাকিল না। তিনি সন্ত্রাসবাদীদের নৈতিক সমর্থন জোগাইলেন তো বটেই, তাঁহার উক্তিতে অভিযুক্ত সন্ত্রাসীদের কিছু আইনি সুবিধাও হইতে পারে। বস্তুত, শুধু দেশেই নহে, প্রতিবেশী রাষ্ট্রেও সন্ত্রাসবাদীরা তাঁহার এই বরাভয়ে আশ্বস্ত হইবে। সজ্ঞানে এমন কথা কোনও রাজনীতিক বলিতে পারেন, না শুনিলে বিশ্বাস হইত না।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমস্যা, কোথায় দলীয় রাজনীতিকের সীমা ফুরায় আর প্রশাসকের দায়িত্বের এক্তিয়ার আরম্ভ হয়, সেই কথাটি তিনি এত দিনেও বুঝিয়া উঠিতে পারিলেন না। দীর্ঘ ২৩ বৎসর সাংসদ থাকায় তিনি নাকি সমস্ত ষড়যন্ত্রের প্রক্রিয়া সম্বন্ধে সম্যক অবহিত। এতগুলি বৎসর তিনি কাণ্ডজ্ঞানের পাঠ লইলে তাঁহারই উপকার হইত। বিজেপি বা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের রাজনৈতিক বিরোধিতার অধিকার তাঁহার বিলক্ষণ আছে। কিন্তু, এই অধিকার তাঁহাকে দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি একটি প্রতিষ্ঠান সম্বন্ধে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করিবার ছাড়পত্র দেয় না। তাঁহার অবিবেচনা তাঁহাকে জাতীয় স্বার্থের বিপ্রতীপ অবস্থানে দাঁড় করাইয়াছে। তাঁহার উক্তিটি ভারতের স্বার্থবিরোধী, দেশদ্রোহী। সর্বাপেক্ষা আশ্চর্যের, এহেন অন্যায়ের পরও কোনও লজ্জাবোধের চিহ্নমাত্র নাই। তাঁহার দলীয় মুখপাত্র এনআইএ-প্রধানের রাজনৈতিক রং বিচারে ব্যস্ত। ভারতীয় রাজনীতির কলঙ্কজনকতম অধ্যায়ের (অধি)নায়িকা হওয়াই কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একমাত্র লক্ষ্য?

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy