Advertisement
E-Paper

বিপন্ন ইউরোপ

ইউরোপীয় ইউনিয়নের আকাশে কৃষ্ণ-ইশারা। সম্প্রতি তাহার পালার্মেন্টের নির্বাচনে দেখা গেল একের পর এক সদস্য দেশে নির্বাচিত হইয়া আসিতেছেন সেই সব প্রার্থী যাঁহারা নির্বাচনী যুদ্ধটি লড়িয়াছিলেন ‘ই ইউ মুর্দাবাদ’ এই মর্মে। ব্রিটেনের জয়ী দল ইউনাইটেড কিংডম ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টি-র (ইউকিপ) সর্বাধিনায়ক নাইজেল ফারাজের মতে, ব্রিটেনের মানুষ বিলক্ষণ জানেন যে তাঁহাদের লক্ষ্য কেবল ব্রিটেনকে ই ইউ-এর সকল সংস্রব হইতে বাহির করিয়া আনা নহে, গোটা ইউরোপকেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন হইতে বাহির করিয়া আনা!

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৪ ০০:০২

ইউরোপীয় ইউনিয়নের আকাশে কৃষ্ণ-ইশারা। সম্প্রতি তাহার পালার্মেন্টের নির্বাচনে দেখা গেল একের পর এক সদস্য দেশে নির্বাচিত হইয়া আসিতেছেন সেই সব প্রার্থী যাঁহারা নির্বাচনী যুদ্ধটি লড়িয়াছিলেন ‘ই ইউ মুর্দাবাদ’ এই মর্মে। ব্রিটেনের জয়ী দল ইউনাইটেড কিংডম ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টি-র (ইউকিপ) সর্বাধিনায়ক নাইজেল ফারাজের মতে, ব্রিটেনের মানুষ বিলক্ষণ জানেন যে তাঁহাদের লক্ষ্য কেবল ব্রিটেনকে ই ইউ-এর সকল সংস্রব হইতে বাহির করিয়া আনা নহে, গোটা ইউরোপকেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন হইতে বাহির করিয়া আনা! ইউকিপ পাইয়াছে প্রায় ২৮ শতাংশ ভোট, লেবার ও কনজারভেটিভ পার্টি উভয়ই তাহার পিছনে, যথাক্রমে ২৫.৪ ও ২৪ শতাংশ ভোট সহ। ফ্রান্সের রক্ষণশীল নেত্রী মরিন ল্য প্যাঁ চালিত ন্যাশনাল ফ্রণ্ট প্রথম বার জাতীয় স্তরে জয়ের স্বাদ পাইয়াছে দক্ষিণপন্থী ইউ এম পি এবং প্রেসিডেন্ট অল্যাঁদ-এর শাসক দল সোশ্যালিস্ট পার্টিকে পিছনে ফেলিয়া। এই দুইটি দেশের ফলাফলই পর্যবেক্ষকদের চক্ষু কপালে তুলিবার পক্ষে যথেষ্ট, আর তাহার সঙ্গে সঙ্গত করিতে আছে অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস বা স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশগুলি। ই ইউ-বিরোধী, অভিবাসন-বিরোধী, নিয়ো-নাত্সি রক্ষণশীল জাতীয় অন্তর্মুখিতার ঢেউ আপাতত ইউরোপের প্রধান দেশগুলিকে গ্রাস করিতেছে।

ল্য প্যাঁ-ও স্পষ্টবক্তা। তাঁহার কথা: একটি বৃহৎ সংগঠনে শক্তিশালী ও শক্তিহীন দেশ থাকিলে যে বিরাট আর্থিক ও সামাজিক দায় প্রথম গোত্রের দেশগুলিকে মিটাইতে হয়, তাহা তাঁহার দেশবাসী অবাঞ্ছিত ও অন্যায় সাব্যস্ত করিতেছেন। দেশের অধিকাংশ সমস্যা ও সংকটের কারণ হিসাবে ইঁহারা ‘বহিরাগত’ অর্থাৎ আইনি ও বেআইনি অভিবাসীদের দায়ী করিয়া থাকেন। কেন একটি দেশ তাহার সীমানার বাহিরের মানুষের বিপুল পরিমাণ দায় বহন করিবে, এবং কেন তাহাদের সুরক্ষিত করাই জাতীয় সরকারের অন্যতম প্রধান কাজ হইবে: ল্য প্যাঁ-র প্রশ্ন। নেদারল্যান্ডস-এ রক্ষণশীল জাতীয়তাবাদীরা ঠিক একই সুরে প্রশ্ন তুলিয়া জয় পাইয়াছে। গ্রিসের আর্থিক সংকটের ভার বহন করিবে ই ইউ, তাহার প্রতিক্রিয়া আগে এত চড়া স্বরে শোনা যায় নাই।

প্রশ্নগুলি যে অনর্থক, তাহা নয়। বিস্ময়করও নয়। বিস্ময়ের ইহাই যে, এত দিন অতি-রক্ষণশীলদের এ সব প্রশ্নের যে উত্তর লিবারেল ও সাধারণ রক্ষণশীল অর্থাৎ কনজারভেটিভরা দিয়া আসিয়াছেন, ভৌগোলিক সমন্বয়ের যুক্তিতে যে ভাবে ইউরোপের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক প্রগতির ব্যাখ্যা দেওয়া হইয়াছে, অধিকাংশ মানুষেরই তাহা মনঃপূত হয় নাই। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি যে মানুষের মনের হদিশ হারাইয়া ফেলিয়াছে, তাহার উদাহরণ এই নির্বাচনী ফল। এই বিরাট নেতি-মানসিকতার সঙ্গে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক মন্দার অভিজ্ঞতার গভীর যোগ। তবে কিনা, নির্দায়, অর্থহীন অভিবাসন-নীতির সরাসরি যোগটি আরও বেশি। দশকের পর দশক ধরিয়া উপযুক্ত নীতি প্রণয়ন করিয়া সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও যাঁহারা নিজেদের সর্বৈব মিথ্যাচারী প্রতিপন্ন করিয়াছেন কেবল অভিবাসী-ভোটব্যাঙ্কের তাড়নায়, নিছক সামাজিক ন্যায়ের মোড়কে তাঁহাদের দায় আর ঢাকা যাইবে না, এই বার্তা পৌঁছাইতেছে। একটি বাস্তব সমস্যা বাস্তব সমাধান দিয়াই মিটাইতে হইবে। প্রাক-নির্বাচনী রেটরিক-এর ক্ষণিক বিস্ফার দিয়া হইবে না। আগ্রাসী জাতীয়তাবাদ হইতে ইউরোপকে বাঁচাইবার প্রয়াস শুরু না হইলে বিপদ।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy