Advertisement
E-Paper

ব্যসনে চৈব

করাচি বিমানবন্দরে তেহরিক-ই-তালিবান-পাকিস্তান-এর জঙ্গিদের দুঃসাহসী আক্রমণ দেখাইয়া দিয়াছে, পুলিশ কিংবা সেনাবাহিনী দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিধানে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। আগ্নেয়াস্ত্রসজ্জিত, বিস্ফোরক-বাঁধিয়া-ঘোরা ফিদাইন জঙ্গিরাই সে-দেশের এজেন্ডা নির্ধারণ করিবে। ঠিক যখন মনে করা হইতেছিল, বিমানবন্দর জঙ্গিমুক্ত, যখন উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের তালিবান ঘাঁটিগুলিতে পাক সেনাবাহিনী বোমাবর্ষণ করিতেছে, তখনই আবার করাচির বিমান নিরাপত্তা সংস্থার রক্ষীদের সহিত তালিবানদের লড়াই বাধে।

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৪ ১৩:৪৯

করাচি বিমানবন্দরে তেহরিক-ই-তালিবান-পাকিস্তান-এর জঙ্গিদের দুঃসাহসী আক্রমণ দেখাইয়া দিয়াছে, পুলিশ কিংবা সেনাবাহিনী দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিধানে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। আগ্নেয়াস্ত্রসজ্জিত, বিস্ফোরক-বাঁধিয়া-ঘোরা ফিদাইন জঙ্গিরাই সে-দেশের এজেন্ডা নির্ধারণ করিবে। ঠিক যখন মনে করা হইতেছিল, বিমানবন্দর জঙ্গিমুক্ত, যখন উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের তালিবান ঘাঁটিগুলিতে পাক সেনাবাহিনী বোমাবর্ষণ করিতেছে, তখনই আবার করাচির বিমান নিরাপত্তা সংস্থার রক্ষীদের সহিত তালিবানদের লড়াই বাধে। তাহারা বিপজ্জনক ভাবে অসামরিক বসতি এলাকায় লুকাইয়া রহিয়াছে, যাহাতে সহসা সর্বাত্মক ফৌজি প্রত্যাঘাত না আসে। পরিস্থিতি এখনও সঙ্কুল। দেশে একটি নির্বাচিত সরকার রহিয়াছে। তাহার হাতে একটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শক্তিশালী সেনাবাহিনীও আছে। কিন্তু যে বাহিনী বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করিতেও অপারগ, সে সাধারণ নাগরিককে নিরাপত্তা দিবে কীরূপে?

তেহরিক-ই-তালিবান-পাকিস্তান-এর সহিত নওয়াজ শরিফের সরকার কিছু কাল আগেও আলোচনা চালাইতেছিল। মার্কিন বহুজাতিক বাহিনী আফগানিস্তান ছাড়িয়া গেলে সেই শূন্যতা কেমন ভাবে পূরণ করা যাইবে, তাহাই ছিল আলোচনার প্রতিপাদ্য। স্পষ্টতই, শান্তি-আলোচনার সুযোগ লইয়া তালিবান জঙ্গিরা আরও সংঘবদ্ধ ও সংহত হইয়াছে। অনুরূপ ঘটনা শ্রীলঙ্কাতেও ঘটিয়াছিল, যখন ‘লিবারেশন টাইগার’রা সরকারের সহিত শান্তি-আলোচনার আড়ালে দম ফেলার ফুরসত খুঁজিয়া নিজেদের আরও সংহত করিয়া তোলে। গণতন্ত্র বা প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থার কোনও আবেদন তালিবানদের কাছে নাই। নওয়াজ শরিফ তথাপি তালিবান নেতৃত্বকে বৈঠকে টানিবার চেষ্টা করিয়াছেন। ব্যর্থ চেষ্টা।

লক্ষণীয়, তালিবান হামলার সময়-নির্বাচন এমন ভাবে করা হইয়াছে, যখন ভারতের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অভিষেক-লগ্নকে শুভেচ্ছা ও সহযোগিতায় স্মরণীয় করিয়া রাখিতে পাক প্রধানমন্ত্রী নয়াদিল্লি সফর করিয়া ফিরিয়াছেন। তালিবান যে ভারত-পাক সুসম্পর্ক চাহে না, ইহা সুবিদিত। জম্মু-কাশ্মীরে মুজাহিদ হিসাবে লড়িবার ও প্রাণ দিবার জন্য অনেক তালিবান ফিদাইনই মানববোমা হইতে প্রস্তুত। শরিফের দিল্লি-যাত্রা যে তাহারা অনুমোদন করে নাই, লস্কর-ই-তইবা-র নেতা হাফিজ সইদের আপত্তিতেই তাহা প্রকট। এ কথা ঠিক যে, হাফিজ সইদের মতো মৌলবাদী কট্টরপন্থীকে ইসলামাবাদ দীর্ঘ কাল ধরিয়া পোষণ করিয়াছে। ইহাও অনস্বীকার্য যে, পাকিস্তানের দেওবন্দি মাদ্রাসাগুলি হইতেই তালিবানের জন্ম ও বিকাশ। আফগানিস্তানে মুজাহিদিন যুদ্ধের মহড়া শেষ হইলে তাহারাই কাবুল দখল করিয়া লয় এবং সন্নিহিত পাকিস্তানের সমাজ, রাজনীতি এমনকী সামরিক আমলাতন্ত্রেও তাহাদের প্রভাব থাকিয়া যায়। কিন্তু আজ পাকিস্তান ও তাহার গণতন্ত্র নিজেই তালিবানি জেহাদের শিকার। সেখানে গণতন্ত্রের শিখাটিকে জ্বালাইয়া রাখিতে হইলে তালিবানকে কঠোর হস্তে দমন করা জরুরি। এ ব্যাপারে নয়াদিল্লির সহযোগিতার অভাব হওয়া উচিত নয়। কিছু উন্মাদ করাচির হামলার জন্য ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়ী করিলেও তাহাকে নির্মল হাস্যরসের উপাদান রূপেই গ্রহণ করিতে হইবে। দৃশ্যত, নূতন কেন্দ্রীয় সরকারের কূটনীতিকাররা জটিল পরিস্থিতির মোকাবিলায় সতর্ক। আশার কথা।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy