Advertisement
E-Paper

মোকাবিলার পথ

মাওবাদী সন্ত্রাস জিয়াইয়া রাখায় কি রাজ্যগুলির কায়েমি স্বার্থ রহিয়াছে? সরকার কি মাওবাদীদের হাতে বিস্ফোরক পৌঁছানো বন্ধ করিতে যথার্থই আন্তরিক? জঙ্গি সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনে সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন (আফস্পা) কি প্রকৃতই জরুরি? তিনটি প্রশ্নেরই যে-জবাব সিআরপির বিদায়ী ডিরেক্টর জেনারেল দিয়াছেন, তাহা সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলিবার পক্ষে যথেষ্ট। যিনি এই কথাগুলি বলিতেছেন, দীর্ঘ সিআরপি জীবনের অভিজ্ঞতায় এ সকল কথা বলার এক্তিয়ারও তাঁহার জন্মিয়াছে।

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০৫

মাওবাদী সন্ত্রাস জিয়াইয়া রাখায় কি রাজ্যগুলির কায়েমি স্বার্থ রহিয়াছে? সরকার কি মাওবাদীদের হাতে বিস্ফোরক পৌঁছানো বন্ধ করিতে যথার্থই আন্তরিক? জঙ্গি সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনে সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন (আফস্পা) কি প্রকৃতই জরুরি? তিনটি প্রশ্নেরই যে-জবাব সিআরপির বিদায়ী ডিরেক্টর জেনারেল দিয়াছেন, তাহা সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলিবার পক্ষে যথেষ্ট। যিনি এই কথাগুলি বলিতেছেন, দীর্ঘ সিআরপি জীবনের অভিজ্ঞতায় এ সকল কথা বলার এক্তিয়ারও তাঁহার জন্মিয়াছে। তিনি কোনও বিক্ষুব্ধ আধিকারিকও নহেন, প্রাক্তন সেনাপ্রধানের মতো সরকারের বিরুদ্ধে তাঁহার নিজের কেরিয়ার সংক্রান্ত অভিযোগও নাই। তিনি নীতিগত কয়েকটি বিষয়ে নিজের অভিমত ব্যক্ত করিয়াছেন। সেই অভিমত যদি দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের মত এবং জনসাধারণের অভিজ্ঞতার সহিত মিলিয়া যায়, তাহার দায় তাঁহার নয়।

মাওবাদ জিয়াইয়া রাখায় রাজ্যের কায়েমি স্বার্থ প্রসঙ্গে বিদায়ী ডিজির বক্তব্য আপাতদৃষ্টিতে বিস্ফোরক হইলেও বক্তব্যের তিনি যে ব্যাখ্যা দিয়াছেন, তাহা প্রণিধানযোগ্য। সন্ত্রাসদীর্ণ এলাকার জন্য রাজ্যগুলি এক দিকে সশস্ত্র নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন বাবদ, অন্য দিকে রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, পানীয় জল সরবরাহ ইত্যাদি পরিকাঠামোগত উন্নয়ন বাবদ প্রভূত বাড়তি অর্থ দাবি করিয়া থাকে, পাইয়াও থাকে। সন্ত্রাস প্রশমিত হইলে সেই তহবিলে তালা পড়িয়া যাইতে পারে। অথচ সন্ত্রাসীদের হাতে বিস্ফোরক পৌঁছানোর রাস্তা বন্ধ করিতে কোনও সরকারকে উদ্যোগী দেখা যায় না। জঙ্গিরা সহজেই জিলেটিন স্টিক, খনিতে ব্যবহারযোগ্য মাইন ও অন্যান্য বিস্ফোরক নির্মাণের উপকরণ হাতে পায় কেমন করিয়া? কেন বারংবার বলা সত্ত্বেও সারের দোকান হইতে যথেচ্ছ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিক্রয় হইয়া চলিয়াছে? সিআরপির ডিজি দেখিয়াছেন, এই সব বিস্ফোরকই জঙ্গিদের সবচেয়ে মারাত্মক অস্ত্র, সর্বাধিক সংখ্যক সিআরপি জওয়ানের মৃত্যুর কারণ। ডিজির আরও বক্তব্য, সন্ত্রাস দমনে সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন অপ্রয়োজনীয়। তিনি মনে করেন, দেশের ফৌজদারি দণ্ডবিধি সন্ত্রাসবাদীদের মোকাবিলায় যথেষ্ট। সে জন্য বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগের কোনও দরকার নাই।

বিশেষ ক্ষমতা আইন সশস্ত্র বাহিনীকে অহেতুক নিরঙ্কুশ ক্ষমতা প্রদান করে, যাহার বলে বাহিনীর জওয়ানরা জবাবদিহির দায় হইতে মুক্ত হইয়া যান। গণতন্ত্রে এই দায়মুক্তি এক মারাত্মক বিচ্যুতি। কেননা ইহার ফলে সন্দেহবশে সম্পূর্ণ নির্দোষ, নিরস্ত্র মানুষদের গ্রেফতার, জিজ্ঞাসাবাদ বা হেনস্থা করিতে, স্বীকারোক্তি আদায়ে শারীরিক নিগ্রহ, এমনকী পলায়ন বা আক্রমণের চেষ্টা করিতেছিল এই অজুহাতে হত্যার আশঙ্কাও বাড়িয়া যায়। জম্মু-কাশ্মীরে, নাগাল্যান্ডে, মিজোরামে, অসমে, মণিপুরে, ত্রিপুরায় বহু কাল ধরিয়াই জঙ্গি সন্দেহে ধৃতদের অদৃশ্য হইয়া যাওয়ার বা ‘সংঘর্ষে নিহত’ হওয়ার ঘটনা ঘটিয়া চলিয়াছে। সম্প্রতি এমনই এক ঘটনার ফৌজি তদন্তে অভিযুক্ত সেনা-অফিসাররা কাশ্মীরে নির্দোষ ব্যক্তিকে হত্যা করার দায়ে শাস্তি পাইয়াছে। কিন্তু এমন অভিযুক্ত হওয়া বা শাস্তি পাওয়ার ঘটনা ব্যতিক্রমী। প্রচলিত আইনে, ফৌজদারি আদালতে এই অভিযুক্তদের বিচার করার দাবি কিংবা বিশেষ ক্ষমতা আইন রদ করার দাবিটি তাই কোনও অসার দাবি নয়। গণতন্ত্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সমাজের প্রতি যে দায়বদ্ধতা আছে, তাহা পালনের দাবি।

anandabazar editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy