Advertisement
E-Paper

রাজনীতির গ্রাস

স্নাতক পাঠ্যক্রমকে কেন্দ্র করিয়া দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাহা ঘটিল, তাহা মূল সমস্যার লক্ষণমাত্র। মূল সমস্যা এখানেই যে, এ দেশে উচ্চশিক্ষার উপর অনৈতিক এবং অস্বাস্থ্যকর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ জারি রহিয়াছে। এই মৌলিক ব্যাধির নিরাময় না হইলে এমন অচলাবস্থা আবারও অন্য কোনও প্রসঙ্গ বা উপলক্ষকে কেন্দ্র করিয়া অচিরে আবির্ভূত হইবে। বুঝা দরকার, স্বশাসনের অধিকারপ্রাপ্ত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ধরনের প্রশাসনিক ও সারস্বত সিদ্ধান্ত এই ভাবে ইউজিসি শাসনদণ্ড দ্বারা চালিত হইতে পারে না।

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৪ ০০:৩৬

স্নাতক পাঠ্যক্রমকে কেন্দ্র করিয়া দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাহা ঘটিল, তাহা মূল সমস্যার লক্ষণমাত্র। মূল সমস্যা এখানেই যে, এ দেশে উচ্চশিক্ষার উপর অনৈতিক এবং অস্বাস্থ্যকর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ জারি রহিয়াছে। এই মৌলিক ব্যাধির নিরাময় না হইলে এমন অচলাবস্থা আবারও অন্য কোনও প্রসঙ্গ বা উপলক্ষকে কেন্দ্র করিয়া অচিরে আবির্ভূত হইবে। বুঝা দরকার, স্বশাসনের অধিকারপ্রাপ্ত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ধরনের প্রশাসনিক ও সারস্বত সিদ্ধান্ত এই ভাবে ইউজিসি শাসনদণ্ড দ্বারা চালিত হইতে পারে না। একবিংশ শতকের ভারতেও যদি উচ্চশিক্ষার গতিবিধি এবং রীতিপদ্ধতি এই ভাবে কোনও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানের কুক্ষিতে আবদ্ধ রাখিবার চেষ্টা চলে, তবে সংকট উপস্থিত না হওয়াই আশ্চর্য। তাই পাঠ্যক্রম বিতর্কের প্রত্যক্ষ মীমাংসার বাহিরে গিয়া গভীরতর পদ্ধতিগত দিক হইতে বিষয়টি বিবেচনা করা বিশেষ জরুরি।

কোনও কেন্দ্রীয় নিয়ামক সংস্থার প্রয়োজন কোথায় ও কেন, ইহাই গোড়ায় ভাবা দরকার। উচ্চশিক্ষা তো ঠিক সাধারণ পণ্য নহে যে দেশের সর্বত্র সর্বসাধারণের ক্ষেত্রে তাহা একই ভাবে পৌঁছাইয়া দিতে হইবে। যে প্রতিষ্ঠান তুলনায় অগ্রগণ্য, অধিকতর উৎকর্ষমুখী, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা দেশের সেরাদের মধ্যে পড়ে, তাহার যাহা প্রয়োজন, তাহা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনের সঙ্গে এক না হওয়াই স্বাভাবিক। কোনও একক কেন্দ্রীভূত শাসন ছাড়াই প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিজস্ব প্রয়োজন মিটাইতে দেওয়া যায়। অন্যান্য উন্নত দেশে তাহাই ঘটে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়কে যখন স্বশাসনের তকমা দেওয়া হয়, নিশ্চয়ই এই যুক্তিই মান্য হইয়াছিল। কার্যক্ষেত্রে ইউজিসি যদি তাহার পায়ে পায়ে শৃঙ্খল জড়াইতে চায়, তবে যে কেবল স্বশাসন বিষয়টি অনর্থক হইয়া পড়ে তাহাই নহে, উৎকর্ষ-সাধনাও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

‘ক্ষতি’র ধরনটি দ্বিতীয় যুক্তির সহিত জড়িত। ইউজিসি যদিও সমানেই দাবি করে, তাহার উপর প্রত্যক্ষ কোনও সরকারি ছড়ি-শাসন নাই, ইহা যে কেবল কথার কথা, অর্থাৎ অসত্য, তাহা সকল পক্ষই অবগত। বিগত সরকারের আমলে ইউজিসি দেশের সাধারণ ধারার বিরুদ্ধে গিয়া দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকল্প পাঠ্যক্রম অনুমোদন করিয়াছিল, বর্তমান সরকারের শাসন শুরু হইবার সঙ্গে সঙ্গে ইউজিসি সেই অনুমোদন বাতিল করিতে তৎপর; ইহাতে রাজনৈতিক হিসাব কড়ায়-গণ্ডায় রহিয়াছে। প্রমাণ রহিয়াছে যে, ইউজিসি কেবল শিক্ষা-আইনের অন্ধিসন্ধি ধরিয়া চলিতে উন্মুখ নয়, কপিল সিব্বল বা স্মৃতি ইরানিদের অঙ্গুলিনির্দেশ মানিতে অধিকতর ব্যস্ত। এখানেই ক্ষতির সমূহ সম্ভাবনা। উচ্চশিক্ষার অভিমুখ যদি বা কোনও সংস্থা নির্ধারণ করে, তাহার উপরে সরকারি তথা রাজনৈতিক প্রভাব এত প্রত্যক্ষ হইলে তো শিক্ষার রাজনীতিকরণের কিছু বাকি থাকে না। উৎকর্ষমুখী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভাবনাচিন্তার দায় তাহা হইলে কেবল রাজনীতিকদেরই? সারস্বত সমাজের নহে?

সারস্বত ব্যক্তিত্বও অনেক সময়ে স্বার্থচালিত বা সংকীর্ণদৃষ্টিসম্পন্ন হইতে পারেন, সন্দেহ নাই। যেমন এ ক্ষেত্রেও প্রশ্ন উঠিতেছে, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসনের নামে কি উপাচার্যের যথেচ্ছ-শাসন চলিতে পারে? যথেচ্ছাচার আটকাইবার একমাত্র সম্ভাব্য উত্তর ইউজিসি নহে। তুলনায় আধুনিকমনস্ক যে ব্যবস্থা, তাহাতে কোনও ত্রুটি থাকিলে সেই ত্রুটি সংশোধনের বহু উপায় আছে। কিন্তু ত্রুটি আছে বলিয়া তাহাকে ছুড়িয়া ফেলিয়া তড়িঘড়ি অনাধুনিক অতিকেন্দ্রিকতায় ফিরিবার যুক্তিটি হাস্যকর, বিপজ্জনক। এ বারের দিল্লি-কাণ্ড চোখে আঙুল দিয়া দেখাইতেছে, কেন ইউজিসি’র শাসন ও তাহাকে শিখণ্ডী রাখিয়া শাসক দলের প্রভুত্ব উচ্চশিক্ষার পক্ষে বিপজ্জনক।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy