Advertisement
E-Paper

লালকমল, নীলকমল

পশ্চিমবঙ্গে কি নূতন প্রজাতির তরমুজ ফলিতে চলিয়াছে? সবুজের ভিতরে লাল, লালের ভিতরে এ বার নীল? যদি তাহা ঘটে, তবে কৃষিবিপ্লবের প্রকৃত কৃতিত্ব অবশ্যই ভারতীয় জনতা পার্টির। মোদী, শাহ ও সম্প্রদায়ের ভয়ে সিপিআইএম এবং তৃণমূল কংগ্রেস এক ঘাটে জল খাইতে নামিলে সেই দৃশ্য মোমের পুতুলের জাদুঘর অপেক্ষা কম আকর্ষণীয় হইবে না।

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০১

পশ্চিমবঙ্গে কি নূতন প্রজাতির তরমুজ ফলিতে চলিয়াছে? সবুজের ভিতরে লাল, লালের ভিতরে এ বার নীল? যদি তাহা ঘটে, তবে কৃষিবিপ্লবের প্রকৃত কৃতিত্ব অবশ্যই ভারতীয় জনতা পার্টির। মোদী, শাহ ও সম্প্রদায়ের ভয়ে সিপিআইএম এবং তৃণমূল কংগ্রেস এক ঘাটে জল খাইতে নামিলে সেই দৃশ্য মোমের পুতুলের জাদুঘর অপেক্ষা কম আকর্ষণীয় হইবে না। বিমান বসু এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই এক টেবিলে ফিশ ফ্রাই খাইয়াছেন বটে, কিন্তু জল আর মাছভাজা এক নহে, এক নহে সৌজন্যের টেবিল আর ধর্মনিরপেক্ষতার ঘাটও। নেহরুর একশো পঁচিশ বছরের জন্মজয়ন্তীতে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী এবং সিপিআইএম শীর্ষনায়কদের সমাপতনকে বামপন্থীরা তারস্বরে নিছক সমাপতন বলিয়া উড়াইয়া দেওয়ার চেষ্টা করিয়াছেন বটে, কিন্তু স্বভাবত প্রগল্ভ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝাইয়া দিয়াছেন, ‘সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি’ ঠেকানোর জন্য তিনি সকলের সহিত হাত মিলাইতে সম্মত। তাঁহার সমস্যাও কম নহে, নেহরু জয়ন্তীর ধর্মনিরপেক্ষতা সারিয়াই তাঁহাকে লালকৃষ্ণ আডবাণী প্রমুখের নিকট দৌড়াইতে হয়। বুঝিতে অসুবিধা হয় না, তিনি বিভিন্ন থানে ফুল চড়াইয়া রাখিতে চাহেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে আপাতত তাঁহার প্রধান বিপদ বিজেপি, সুতরাং শত্রুর শত্রুকে আমার বন্ধু করিবার কৌশল অস্বাভাবিক নহে। শত্রুনিপাতের পরে আবার বন্ধুর প্রতি মন দেওয়া যাইবে।

কিন্তু সিপিআইএম? তাঁহারা ‘সাম্প্রদায়িকতা’র বিরুদ্ধে রাজনীতির কোন ঘাটে কাহার সঙ্গে দাঁড়াইয়া নিজেদের রক্ষা করিবেন বলিয়া খোয়াব দেখিতেছেন? বিপৎকালে তাঁহাদের বুদ্ধিনাশ হইয়াছে, তাঁহারা স্থূলে ভুল করিতেছেন। ভেনেজুয়েলা, কিউবা বা বৃহত্তর ভারত লইয়া কিছুকাল তাঁহাদের কম ভাবিলেও চলিবে, আপাতত পশ্চিমবঙ্গই তাঁহাদের, আক্ষরিক অর্থেই, মরণবাঁচন সমস্যা। এবং, শুধুমাত্র বীরভূমের ঘটনাপ্রবাহই দেখাইয়া দিতেছে, সাম্প্রদায়িকতা বনাম ধর্মনিরপেক্ষতার চশমা দিয়া সেই সমস্যাকে দেখিবার আর কোনও অর্থই নাই। রাজ্যের শাসক দল এবং সেই দলের দুর্বৃত্ত-নায়কদের কুক্ষিগত প্রশাসনের অত্যাচার হইতে বাঁচিবার তাগিদে যাঁহারা দলে দলে বিজেপি’তে যাইতেছেন, সেই শরণার্থীদের মধ্যে বিস্তর মুসলমান আছেন। তাঁহারা বিজেপিকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ মনে করেন বলিয়া যাইতেছেন এমন নয়, তাঁহাদের নিকট সাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নটিই আপাতত অর্থহীন, আগে ধনপ্রাণ বাঁচুক। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তাঁহারা সিপিআইএমের পতাকার নীচে থাকিতেন বা আসিতেন, কারণ শাসকের অত্যাচার রুখিতে বিরোধী দলের সংগঠনই হাতিয়ার। কিন্তু বামপন্থীরা বিরোধী হিসাবে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতাই সম্পূর্ণ হারাইয়া ফেলিয়াছেন, বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পরবর্তী তিন বছরে তাঁহারা উত্তরোত্তর দিশাহারা, উদ্ভ্রান্ত। সাম্প্রদায়িকতা নহে, তাঁহাদের প্রধান শত্রু তাঁহারা নিজেরাই। তাঁহারা, এক কথায়, দেউলিয়া।

দেউলিয়া অবস্থা দুই ভাবে প্রকট। এক, পশ্চিমবঙ্গে তথা ভারতে দলের প্রকৃত সমস্যার মোকাবিলা না করিয়া সিপিআইএমের নায়করা ১৯৭৮-এর দলীয় সিদ্ধান্তের নৈয়ায়িক বিচারে কালাতিপাত করিয়া চলিয়াছেন। দুই, রাজ্য রাজনীতির উত্তাল রণক্ষেত্রে তাঁহারা পলাতক। কার্যত প্রতি দিন বিভিন্ন অঞ্চলে আগুন জ্বলিতেছে, সরকারি তথা দলীয় দুঃশাসনের মাত্রা নরকস্পর্শী হইতেছে, বিমান বসু বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সূর্যকান্ত মিশ্ররা হৈমন্তিক অবসাদে নির্বাক, নিশ্চল, বোধকরি শীতঘুমের জন্য প্রস্তুত হইতেছেন। এক কালে তাঁহারা গাহিতেন, ‘বাঁচতে হলে লড়তে হবে, লড়াই করে বাঁচতে হবে’। এখন পদ্মফুল ঠেকাইতে তৃণমূলে আশ্রয় লইতে চাহিতেছেন। তরমুজের দিন ফুরাইয়াছে। এখন লালকমলের আগে নীলকমল জাগে।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy