Advertisement
E-Paper

সাফল্যের দায়

ভোটে জয়ী হইয়াই যখন কোনও রাষ্ট্রনেতা বলেন, ‘সংলাপ’-এর পথে ঐক্য প্রতিষ্ঠার রাজনীতিই হইবে তাঁহার ধর্ম, তখন সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক যে, তাঁহার অর্জিত ক্ষমতার আসনটি ঈষত্‌ নড়বড়ে। ব্রাজিলের পুনর্নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জিউমা হুসেফ-এর আসন নড়বড়ে বলিলে কম বলা হইবে। প্রতিদ্বন্দ্বী এসিয়ো নেভেস অপেক্ষা মাত্র তিন শতাংশ ভোট বেশি পাইয়াছেন ওয়ার্কার্স পার্টির নেত্রী। এবং, লাতিন আমেরিকার বৃহত্তম দেশটির জনাদেশ কার্যত আড়াআড়ি ভাগ হইয়া গিয়াছে— উত্তর ও উত্তর-পূর্বের দরিদ্রতর অঞ্চলে ওয়ার্কার্স পার্টি সফল, রিয়ো ও সাও পাওলো সহ অবশিষ্ট অংশে বিরোধী ব্রাজিলিয়ান সোশাল ডেমোক্র্যাসি পার্টি।

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০৫

ভোটে জয়ী হইয়াই যখন কোনও রাষ্ট্রনেতা বলেন, ‘সংলাপ’-এর পথে ঐক্য প্রতিষ্ঠার রাজনীতিই হইবে তাঁহার ধর্ম, তখন সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক যে, তাঁহার অর্জিত ক্ষমতার আসনটি ঈষত্‌ নড়বড়ে। ব্রাজিলের পুনর্নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জিউমা হুসেফ-এর আসন নড়বড়ে বলিলে কম বলা হইবে। প্রতিদ্বন্দ্বী এসিয়ো নেভেস অপেক্ষা মাত্র তিন শতাংশ ভোট বেশি পাইয়াছেন ওয়ার্কার্স পার্টির নেত্রী। এবং, লাতিন আমেরিকার বৃহত্তম দেশটির জনাদেশ কার্যত আড়াআড়ি ভাগ হইয়া গিয়াছে— উত্তর ও উত্তর-পূর্বের দরিদ্রতর অঞ্চলে ওয়ার্কার্স পার্টি সফল, রিয়ো ও সাও পাওলো সহ অবশিষ্ট অংশে বিরোধী ব্রাজিলিয়ান সোশাল ডেমোক্র্যাসি পার্টি।

চার বছর আগে প্রতিদ্বন্দ্বী অপেক্ষা বারো শতাংশ বেশি ভোট লইয়া জিউমা ক্ষমতায় আসিয়াছিলেন। চার বছরে জনপ্রিয়তার পুঁজি এতটা কমিল কেন? উত্তর: অর্থনীতি, আবার কী? মন্দার গ্রাস চলিতেছে, বেকারি বাড়িতেছে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মান নিম্নগামী, বাজারদর বেলাগাম, লগ্নির অনিশ্চয়তা প্রবল, এবং এই সব সমস্যার সহিত যুক্ত হইয়াছে সরকারি কর্তাদের দুর্নীতির, বিশেষত পেট্রোলিয়ম-রাজস্ব শাসক দলের ভোট কিনিবার কাজে অপব্যবহারের অভিযোগ। বস্তুত, অর্থনীতির এই সমস্যা কাঁধে লইয়াও ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট যে জয়ী হইয়াছেন এবং আপন দলকে বারো বছরের নিরবচ্ছিন্ন শাসনের পরে আরও চার বছরের জন্য ফিরাইতে পারিয়াছেন, তাহা কম কৃতিত্বের নহে। এই সাফল্যের পিছনে রহিয়াছে ভূতপূর্ব প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা প্রবর্তিত বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী কার্যক্রম, বিশেষত সরকারি অর্থে দরিদ্র নাগরিকদের খাদ্য, শিক্ষা এবং চিকিত্‌সা সরবরাহের বিপুল ও সুসংহত আয়োজন, যাহার প্রধান কর্মসূচি ‘বলসা ফামিলিয়া’ ইউপিএ শাসিত ভারত সহ অন্য অনেক দেশের নীতিকে প্রভাবিত করিয়াছে। বারো বছরে চার কোটি নাগরিককে দারিদ্র সীমার উপরে তুলিয়া আনিয়াছেন লুলা এবং তাঁহার শিষ্যা জিউমা। ব্রাজিলের ইতিহাসপ্রসিদ্ধ অসাম্য আজও বিপুল, কিন্তু তাহার মাত্রা অবশ্যই কমিয়াছে। সুতরাং জিউমা এবং তাঁহার গুরু বলিতে পারেন, সাফল্যের কারণও অর্থনীতি, আবার কী?

কিন্তু ১১ কোটি ভোটদাতার প্রায় অর্ধেক যে বামপন্থী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এবং উদার অর্থনীতির প্রবক্তা প্রতিদ্বন্দ্বীর পক্ষে ভোট দিয়াছেন, তাহাই বুঝাইয়া দেয়, দারিদ্র দূরীকরণের জনমনোরঞ্জনী আর যথেষ্ট নহে, দ্রুত উন্নয়ন চাই। দরিদ্র নাগরিকদেরও প্রত্যাশা বাড়িতেছে, তাঁহাদের অবস্থা কিছুটা ভাল হইয়াছে বলিয়াই আরও বেশি বাড়িতেছে, উন্নয়নের গতি না বাড়িলে সেই প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব নহে। ওয়ার্কার্স পার্টির সাফল্যই তাহার সাফল্য ধরিয়া রাখিবার কাজটিকে কঠিনতর করিয়াছে। আর্থিক সংস্কার ভিন্ন উন্নয়ন সম্ভব নহে। জাতীয়করণের বামপন্থা হইতে সরিতে হইবে, জনকল্যাণের জন্য সরকারি ভর্তুকির অঙ্কে রাশ টানিতে হইবে, বাজারকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হইবে। বামপন্থী প্রেসিডেন্টকে অন্তত কিছুটা দক্ষিণায়ন মানিতে হইবে। ব্রাজিলের জনাদেশ সেই কথাই জানাইতেছে। গণতন্ত্রের ইহাই মহিমা, তাহা চরমপন্থীদের ক্রমাগত মধ্য সরণিতে টানিয়া আনে। ব্রাজিলের প্রকৃত বিজয়ীর নাম গণতন্ত্র। এই নির্বাচন আবারও জানাইয়া দিল, এক কালের স্বৈরতন্ত্রপ্রধান লাতিন আমেরিকায় গণতন্ত্রের শিকড় উত্তরোত্তর দৃঢ় হইতেছে।

editorial anandabazar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy