Advertisement
E-Paper

স্বার্থের কল

আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে হয়তো অচিরে শোকসভা বসিবে, কারণ কিউবা, খাস কিউবা ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ’-এর সহিত হাত মিলাইতেছে। প্রায় ছয় দশক পরে কিউবার সহিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হইতে চলিয়াছে। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পিছনে পোপ দ্বিতীয় ফ্রান্সিস-এর নেপথ্য ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, কানাডার ভূমিকাও।

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০১

আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে হয়তো অচিরে শোকসভা বসিবে, কারণ কিউবা, খাস কিউবা ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ’-এর সহিত হাত মিলাইতেছে। প্রায় ছয় দশক পরে কিউবার সহিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হইতে চলিয়াছে। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পিছনে পোপ দ্বিতীয় ফ্রান্সিস-এর নেপথ্য ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, কানাডার ভূমিকাও। কিন্তু প্রধানত বিবদমান দুই দেশের তাগিদই এই সেতুবন্ধে নির্ণায়ক হইয়াছে। তাগিদটি মুখ্যত অর্থনৈতিক। কিউবার সহিত স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ার প্রাথমিক উদ্যোগটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিক হইতেই আসে। বারাক ওবামা তাঁহার প্রথম পর্বের প্রেসিডেন্ট জমানার সূচনাতেই এ বিষয়ে আভাস দিয়াছিলেন। তবে ফিদেল-রহিত কিউবায় মার্কিন পণ্য ও সংস্কৃতির চাহিদাও কম ছিল না এবং নিয়ন্ত্রিত, রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির রাশ আল্গা হইতেই মার্কিন পুঁজি ও প্রযুক্তির বিনিয়োগের জন্য কিউবার উর্বর ক্ষেত্র প্রস্তুত।

একটা সময় ছিল, যখন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে গাল না পাড়িয়া ফিদেল কাস্ত্রোর দিন শুরু বা শেষ হইত না। মার্কিন পণ্য বয়কট হইতে দেশীয় মার্কিন চরদের শনাক্ত করার কাজে কিউবা সরকারের অনেক সময় ব্যয় হইত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এক দিকে কিউবার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ জারি করা, অন্য দিকে বারংবার ফিদেলকে গুপ্তহত্যায় ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র করিয়াছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন সমর্থিত কিউবায় রুশ সামরিক ঘাঁটিকে ঘিরিয়া ষাটের দশকে দুই বৃহত্‌শক্তির দ্বন্দ্ব এমন তীব্র হয় যে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শঙ্কা ঘনাইয়া ওঠে। রাষ্ট্রপুঞ্জ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চ ক্রমশ দুই দেশের কাজিয়ার মঞ্চ হইয়া ওঠে। ক্রমে ফিদেল বৃদ্ধ হন, রাষ্ট্রের শাসনভার সহোদর ভাই রাউল কাস্ত্রোর হাতে ন্যস্ত করিয়া রাজনৈতিক সন্ন্যাসে অবসৃতও। রাউল দ্রুত উপলব্ধি করেন, কিউবার অর্থনীতিকে উজ্জীবিত করিতে মার্কিন লগ্নি প্রয়োজন, উদারনৈতিক সংস্কারও। ওয়াশিংটনের পক্ষেও কিউবার এই পরিবর্তিত আর্থ-রাজনৈতিক অগ্রাধিকার উপেক্ষা করা সমীচীন নয়, তাহা ওবামা বুঝিতে পারেন। পরিণাম: দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ।

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ধনতন্ত্র যে একটি একদলীয় রাষ্ট্রের সমাজতন্ত্রের তুলনায় উত্‌কৃষ্ট ও উন্নততর ব্যবস্থা, সেই তর্কের অবসান বহু কালই হইয়া গিয়াছে। একদলীয় চিন প্রবল পরাক্রমে যে ‘সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতি’ অনুশীলন করিতেছে, তাহা অর্থনীতির বিচারে সম্পূর্ণত বাজারতন্ত্র। কিউবা কোনও কালেই চিন কিংবা উত্তর কোরিয়ার মতো শোষণমূলক সমাজবাদ অনুশীলন করে নাই, তাহার সমাজতন্ত্রে জাতীয়তাবাদের উপকরণ প্রবল ছিল, যেমন থাকিয়াছে নিকারাগুয়া, চিলি, ব্রাজিল, ভেনেজুয়েলা ও বলিভিয়ায়। তাই দেশবাসীর কল্যাণ, বিশেষত তাহাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য-পরিকাঠামো সমুন্নত করিতে রাষ্ট্রের মনোনিবেশ ছিল গভীর। তবে কৃষি ও শিল্পে উত্‌পাদন পর্যাপ্ত না হওয়ায় কিউবায় চাল, খাদ্যশস্যের ঘাটতি ছিলই। এ বার মার্কিন খামারজাত চাল ও বিন্স কিউবায় পাড়ি দিবে। কিউবার বাজার ছয় শত কোটি ডলারের মার্কিন পণ্যের জন্য কোল পাতিয়া আছে, কিউবা হইতে আমেরিকা আমদানি করিতে আগ্রহী সাড়ে চারশত কোটি ডলারের কফি-চিনি-নিকেল। পৃথিবী পাল্টাইতেছে। দেশের অভ্যন্তরীণ স্বার্থই বহির্দেশীয় রাষ্ট্রের সহিত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নূতন বনিয়াদ। আলিমুদ্দিন অবশ্য তাহা মানিবে না। মানিলে, ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক’ গানটি মরিয়া যাইবে যে!

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy