Advertisement
E-Paper

সমাধিফলক

শালবনির ২৯৪ একর জমিতে পশ্চিমবঙ্গের শিল্প-ভবিষ্যতের সমাধি রচনার কাজটি অনেকখানি অগ্রসর হইল। ক্ষতিপূরণের টাকা ফেরত না চাহিয়াই জিন্দল গোষ্ঠী স্থানীয় মানুষের নিকট হইতে কেনা জমি ফিরাইয়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত করিয়াছে। মুখ্যমন্ত্রী উচ্ছ্বসিত। সারদা হইতে খাগড়াগড়, সর্বব্যাপী অপশাসনের অভিযোগে তাঁহার টালমাটাল রাজনীতি ফের পায়ের নীচে জমি পাইয়াছে বলিয়াই জ্ঞান করিতেছেন হয়তো।

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০১

শালবনির ২৯৪ একর জমিতে পশ্চিমবঙ্গের শিল্প-ভবিষ্যতের সমাধি রচনার কাজটি অনেকখানি অগ্রসর হইল। ক্ষতিপূরণের টাকা ফেরত না চাহিয়াই জিন্দল গোষ্ঠী স্থানীয় মানুষের নিকট হইতে কেনা জমি ফিরাইয়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত করিয়াছে। মুখ্যমন্ত্রী উচ্ছ্বসিত। সারদা হইতে খাগড়াগড়, সর্বব্যাপী অপশাসনের অভিযোগে তাঁহার টালমাটাল রাজনীতি ফের পায়ের নীচে জমি পাইয়াছে বলিয়াই জ্ঞান করিতেছেন হয়তো। শিল্প সংস্থার হাত হইতে ছিনাইয়া লওয়া জমি। সিঙ্গুরে পারেন নাই, শালবনিতে পারিয়াছেন। রাজনৈতিক সংকীর্ণতাই তাঁহার অভিজ্ঞান। অতএব, তিনি স্বভাবতই বুঝিতে পারেন নাই, ইহা তাঁহার জয় নহে, পশ্চিমবঙ্গের পরাজয়। অবশ্য, পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যত্‌ লইয়া তাঁহার উদ্বেগের কোনও প্রমাণ গত সাড়ে তিন বত্‌সরে মিলে নাই। পশ্চিমবঙ্গের এই পরাজয়ের গ্লানি তাঁহার মরমে প্রবেশ করিবে, ইহা দুরাশা। তাঁহার উচ্ছ্বাস, অতএব, স্বাভাবিক। শালবনির ইস্পাত কারখানা হইতেই পশ্চিমবঙ্গ ঘুরিয়া দাঁড়াইতে পারিত। শিল্পসংস্থাটি সাতশত কোটি টাকা অকারণে ব্যয় করে নাই— পশ্চিমবঙ্গে তাহাদের আগ্রহ ছিল। প্রয়োজন ছিল শুধু সরকারি সহযোগিতার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যত দূর সম্ভব, অসহযোগিতা করিয়াছে। জমির ঊর্ধ্বসীমা লইয়া টালবাহানা হইতে বিদ্যুত্‌ উত্‌পাদনের পথে বাধা সৃষ্টি করা, অথবা জমি ফেরত দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন, যতগুলি অকর্তব্য ছিল, মমতা করিয়াছেন। বিরোধী অবতারে তিনি টাটা মোটরসকে তাড়াইয়াছিলেন। শাসক হইয়া জেএসডব্লিউ-কে বিদায় করিলেন। এই রাজ্যে স্থানীয় শিল্পপতিদের লইয়া নদীবক্ষে রাত্রিব্যাপী বিচিত্রানুষ্ঠানই হইবে।

শিল্পের প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিমাতৃসুলভ মনোভাবের কথাটি শিল্পমহল বিলক্ষণ জানে। কিছু দিন পূর্বে আদি গোদরেজ রাখঢাক না করিয়াই বলিয়া দিয়াছিলেন, গোটা দেশ যখন বিনিয়োগ টানিবার প্রতিযোগিতায় নামিয়াছে, তখন এমন শিল্পবিরোধী জমিনীতি লইয়া পশ্চিমবঙ্গ কী করিবে? যাঁহারা মুখ ফুটিয়া কথাগুলি বলেন নাই, তাঁহারাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে হাসিমুখে ছবি তুলিয়া চলিয়া গিয়াছেন। এই রাজ্যে বিনিয়োগের প্রশ্নে তাঁহাদের নিকট হইতে স্মিত নীরবতা ভিন্ন কিছুই মিলে নাই। মুখ্যমন্ত্রী তবুও অনড়। কিছু দিন পূর্বে জমি আইন সংস্কারের নামে একটি প্রহসন করিয়াছেন মাত্র। সিঙ্গুরের জমি লইয়া কুনাট্য চলিতেছে। তাহার সহিত যোগ হইল শালবনি। যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর কর্তব্য ছিল প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া এবং সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা, সেখানে তিনি ২৯৪ একর জমি ফিরিয়া পাইয়া উল্লসিত।

প্রশ্ন শুধু জমিনীতির নহে। প্রশ্ন এই রাজ্যের শাসকদের মানসিকতার, জমিনীতি যাহার একটি প্রকাশমাত্র। এই রাজ্যের শাসকদের নিকট শিল্প গুরুত্বহীন। তাঁহাদের ক্ষুদ্র রাজনীতির সর্বগ্রাস বাঁচাইয়া যদি শিল্প টিকিতে পারে তো টিকিবে, নচেত্‌ তাহা লইয়া শাসকদের মাথাব্যথা নাই। শিল্পের অনুকূল পরিবেশ গড়িতে যাহা প্রয়োজন, তাহার কিছুই এই রাজ্যে নাই। শাসকরা রাখিতে পারেন নাই। বিনিয়োগকারীরা এই মানসিকতাটিকেই ডরান। যে রাজ্যে তাঁহারা পুঁজি লগ্নি করিবেন, সেই রাজ্যের অধীশ্বররা যদি কোনও সহযোগিতারই পথ না মাড়ান, তাঁহারা বিনিয়োগ করিবেন কীসের ভরসায়? মুখ্যমন্ত্রী জমির জট ছাড়াইতে পারেন নাই, তাঁহার দলের খুচরা নেতাদের তোলা আদায়ের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টামাত্র করেন নাই, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলাকে স্বহস্তে গঙ্গায় বিসর্জন দিয়াছেন। শালবনিকাণ্ডে তিনি বুঝাইয়া দিলেন, বিনিয়োগকারীর প্রকৃত আগ্রহও তাঁহাকে শিল্পমুখী করিতে পারিবে না।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy