বিপন্ন পুরাকীর্তি
পুরুলিয়া শহর থেকে সাতাশ কিলোমিটার ও জয়পুর গ্রাম থেকে সাত কিলোমিটার দূরে কংসাবতী নদীর দক্ষিণ পাড়ে দেউলঘাটা অবস্থিত। অতীতে ভ্রমণপিপাসু বহু পর্যটক ও পুরাতত্ত্ববিদের ভ্রমণবৃত্তান্ত থেকে জানা যায়, কয়েক দশক আগে কাঁসাই নদীর তীরে দেউলঘাটায় পুরাকীর্তির নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়েছিল হাজার বছরের প্রাচীন একাধিক মন্দির। ২০০২ সালের সেপ্টেম্বরে এখানকার সবচেয়ে বড় ইটের দেউলটি ভেঙে পড়ে। দেউলটির আয়তন ছিল ২৬ বর্গফুট, উচ্চতা প্রায় ৬০ ফুট। পর্যটকদের ডায়েরি ও আশপাশের পড়ে থাকা পাথরের ধ্বংসস্তূপ নিশ্চিত বলে দেয়, এক কালে এখানে অনেকগুলি পাথরের দেউল ছিল। এক একটি মন্দিরের উপর এক একটি আমলক শোভাবর্ধন করত। তাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আমলকও (কলস) অসংখ্য মন্দিরের অস্তিত্বের কথাই প্রকাশ করে। বর্তমানে দুটি ইটের দেউল জীর্ণ ও ভগ্নদশায় দাঁড়িয়ে আছে। তাদের গায়ে ঘাস লতাপাতা গজিয়ে শুধু সৌন্দর্যহানি করছে না, ডেকে আনছে ঘোর বিপদ।
টালির ঘরে রাখা বিগ্রহগুলি ভাস্কর্যে ও কারুকার্যে অতুলনীয়। এই বিগ্রহগুলির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দ্বিতীয় ঘরে রাখা চার ফুট উচ্চতার দেবী দুর্গার অষ্টভুজা এক অনুপম পাথরের মূর্তি। দেবী রীতিমত অলংকৃত, আট হাতে নানা রকম প্রহরণ। ১৮৬৪-৬৫ সালে এশিয়াটিক সোসাইটির জার্নালের (পার্ট-১, ১৮৬৬) এক লেখায় এই অঞ্চলের পুরাকীর্তির শিল্পসুষমার ভূয়সী প্রশংসা ছিল। এ রকম অসাধারণ শিল্পশৈলীর স্থান হওয়া উচিত ছিল মিউজিয়মে, তা না-হয়ে দিনের পর দিন তেল সিঁদুর মাখামাখি হয়ে ধ্বংসের পথে এগিয়ে চলেছে। করম অর্জুন পলাশ গাছের ছায়া-ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অনন্য দেউলঘাটা ইতিহাস পুরাতত্ত্ব প্রকৃতি সব ধরনের পর্যটকরাই এখানে মনের খোরাক পেতে পারেন। কিন্তু এখানে থাকার কোনও সুব্যবস্থা নেই।
মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর যত বার পুরুলিয়া এসেছেন বলে গেছেন, ‘পুরুলিয়াকে গড়ে তুলব রুপসী বাংলা হিসাবে’। আরও বলে গেছেন, ‘ধর্মের পীঠস্থান দেউলঘাটাকে গড়ে তুলব পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে’। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর তিন বছর পার হয়ে গেলেও বিন্দুমাত্র কাজ হয়নি দেউলঘাটা পর্যটনকেন্দ্রের। জায়গাটি পরিদর্শন করে গেছেন রাজ্যের প্রাক্তন পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহ থেকে শুরু করে এলাকার মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো, ডি এম এবং অন্য আধিকারিকরাও। এঁরা সবাই বিভিন্ন ভাবে আশ্বাস দিয়ে গেছেন যে, খুব তাড়াতাড়ি দেউলঘাটা পাবে পর্যটনকেন্দ্রের রূপ। অথচ এত আশ্বাসের পরেও আগের রূপ নিয়েই দাঁড়িয়ে আছে দেউলঘাটা। এখনও পর্যন্ত আসেনি বিদ্যুত্। ব্লক প্রশাসন একটি সোলার লাইট লাগিয়েই রয়েছে চুপচাপ।
দেউলঘাটা দ্রুত পর্যটনকেন্দ্রের রূপ পাবে এই আশ্বাস পূর্ণ করতে জেলা প্রশাসন, ব্লক ও সরকার দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নিক।
রেখা মাহাতো। কলকাতা-১৫৬
গগনেন্দ্রনাথ
শৈলেনকুমার দত্ত (‘বিড়াল ও বাঙালির সম্পর্ক কি আজকের’, সম্পাদক সমীপেষু, ১১-৮) বিড়াল পোষা অনেক বিখ্যাত জনের মধ্যে ঠাকুরবাড়ির অবনীন্দ্রনাথের নাম উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এই প্রসঙ্গে বলি, ঠাকুরবাড়িতে বিড়াল পোষায় সবাইকে টেক্কা দিয়েছিলেন গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি শুধু একটি পার্সিয়ান বিড়াল পোষেনইনি। তার উত্কৃষ্ট কার্টুন এঁকে তাকে অমর করেও গেছেন।
সুদীপ জোয়ারদার। পাগলাচণ্ডী, নদিয়া