Advertisement
E-Paper

সম্রাটের প্রতিবেশী

ইউক্রেনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হইয়া অর্বুদপতি ব্যবসায়ী পেত্রো পোরোশেঙ্কো বলিয়াছিলেন, দক্ষিণের ডনেট্স্ক প্রদেশে রুশপন্থীদের সশস্ত্র বিদ্রোহ দমন করা কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার। জয়ের পরে তিনি সেই প্রতিশ্রুতি পালনে কালক্ষেপ করেন নাই। প্রথম পর্বের অভিযানে অন্তত তিনি সফল। এই সাফল্যের প্রেক্ষিতটি তাৎপর্যপূর্ণ। ইতিপূর্বে বন্দরপ্রদেশ ক্রাইমিয়ায় সেখানে বসবাসকারী রুশদের বিদ্রোহের পর ইউক্রেন হইতে আপনাকে বিচ্ছিন্ন করিয়া রাশিয়ার সহিত সংযুক্তি ঘোষণা করিয়াছে। রুশ সৈন্যদের অংশগ্রহণ, প্ররোচনা ও প্রহরাতেই বিদ্রোহীদের পক্ষে ইউক্রেনের বাহিনীকে পর্যুদস্ত করিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করা ও রুশ সাম্রাজ্যে লীন হওয়া সম্ভব হয়।

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৪ ০০:০৮

ইউক্রেনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হইয়া অর্বুদপতি ব্যবসায়ী পেত্রো পোরোশেঙ্কো বলিয়াছিলেন, দক্ষিণের ডনেট্স্ক প্রদেশে রুশপন্থীদের সশস্ত্র বিদ্রোহ দমন করা কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার। জয়ের পরে তিনি সেই প্রতিশ্রুতি পালনে কালক্ষেপ করেন নাই। প্রথম পর্বের অভিযানে অন্তত তিনি সফল। এই সাফল্যের প্রেক্ষিতটি তাৎপর্যপূর্ণ। ইতিপূর্বে বন্দরপ্রদেশ ক্রাইমিয়ায় সেখানে বসবাসকারী রুশদের বিদ্রোহের পর ইউক্রেন হইতে আপনাকে বিচ্ছিন্ন করিয়া রাশিয়ার সহিত সংযুক্তি ঘোষণা করিয়াছে। রুশ সৈন্যদের অংশগ্রহণ, প্ররোচনা ও প্রহরাতেই বিদ্রোহীদের পক্ষে ইউক্রেনের বাহিনীকে পর্যুদস্ত করিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করা ও রুশ সাম্রাজ্যে লীন হওয়া সম্ভব হয়। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সে-সময় কেবল ইউক্রেনকে হুমকিই দেন নাই, বিপুল শক্তিধর রুশ সমরসজ্জাকে সক্রিয় ভাবে ব্যবহারও করিয়াছেন ইউক্রেনকে টুকরো টুকরো করিতে। ক্রাইমিয়ার পর ছিল ডনেট্স্ক-এর পালা। একই কৌশলে এখানেও রুশদের দিয়া স্বাধিকারের সশস্ত্র আত্মঘোষণার প্রস্তুতি চলিতেছিল। ইতিমধ্যে রুশ প্রধানমন্ত্রী মেদভেদেভ ক্রাইমিয়া সফরে গিয়া তাহার রাশিয়ায় লীন হওয়ার সিদ্ধান্তে সিলমোহর আঁকিয়া দেন।

কিন্তু আপাতত ইউক্রেনের আরও বিভাজনের আশঙ্কা বোধহয় রোধ করা সম্ভব হইবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইউক্রেনের নূতন প্রেসিডেন্ট পোরোশেঙ্কোকে যাবতীয় সাহায্যের আশ্বাস দিয়াছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নও ইউক্রেনের অবিভাজ্যতার পক্ষে দাঁড়াইতেছে। অন্য দিকে, পোরোশেঙ্কো বিদ্রোহীদের সহিত শান্তি-আলোচনার প্রস্তাব দিয়াছেন। সুইজারল্যান্ডের মধ্যস্থতায় একটি সংঘর্ষ-বিরতি ও শান্তি-প্রক্রিয়ার প্রস্তাবও রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন সমর্থন করিয়াছেন। তিনি নূতন এক দফা হুমকি যেমন দিয়াছেন, তেমনই আলোচনার মাধ্যমে দুই পক্ষের বিরোধ-মীমাংসার পরামর্শও দিয়াছেন। ক্রাইমিয়ার বেলায় কিন্তু তিনি তেমন কোনও পরামর্শ দেন নাই।

ভবিষ্যৎ অবশ্য অনিশ্চিত। ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের অঙ্গীভূত হইতে চাওয়াতেই রাশিয়ার শাসকরা সে-দেশে অন্তর্ঘাত শুরু করেন। কিয়েভ ইউরোপের দিকে ঝুঁকিলে রুশ অভিবাসীতে বোঝাই ক্রাইমিয়ায় রুশ নাশকতা শুরু হয়। তীব্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাস মোকাবিলার মতো কোনও উদ্যোগ লওয়ার অবস্থা তখন নৈরাজ্যকবলিত কিয়েভের ছিল না। নূতন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরেই বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনের নকশা প্রস্তুত হয়। রাশিয়া ইউক্রেনকে খণ্ড-খণ্ড করিবার যে পরিকল্পনা করিয়াছিল, ডনেট্স্ক অঞ্চলকে ইউক্রেন হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া দিবার যে ছক সাজাইয়াছিল, আপাতত তাহা বানচাল হইয়াছে। তবে অতীতে জারের সাম্রাজ্যের অংশ এবং তাহার পর সোভিয়েত সাম্রাজ্যেরও অঙ্গরাজ্য ইউক্রেনের স্বাধিকারের দাবি ক্রেমলিন মানিয়া লইতে পারে নাই। তদুপরি ইউক্রেন ইউরোপের সহিত নিবিড় অর্থনৈতিক সংহতি গড়ার পথে অগ্রসর হইলে মস্কোর গোঁসা আরও বাড়িয়াছে। সাম্রাজ্যিক উত্তরাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার তাগিদই ভ্লাদিমির পুতিনকে ইউক্রেনের প্রতি বিমাতৃসুলভ মনোভাব গ্রহণে তাড়িত করিতেছে। সেই সঙ্গে বৃহৎশক্তি হওয়ার অভিমান, বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশ ও জনগোষ্ঠীকে বশংবদ রাখার রাজতন্ত্রী খোয়াবও ইউক্রেনের স্বাধীন ইচ্ছা ও পছন্দের পথে মূর্তিমান বাধাস্বরূপ। রুশ ভূখণ্ডের সহিত ভৌগোলিক সংলগ্নতার অভিশাপ হয়তো আরও বহু কাল ইউক্রেনবাসীকে ভোগ করিতে হইবে।

editorial editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy