Advertisement
E-Paper

হয়তো অগত্যা

পূর্বসূরি দ্বিতীয় জন পল কিংবা ষোড়শ বেনেডিক্ট-এর ন্যায় কট্টরপন্থী যে তিনি নহেন, পোপ ফ্রান্সিস দায়িত্বগ্রহণের পর হইতেই তাহা বুঝাইয়া দিতেছেন। পোপত্ব অর্জনের পূর্বে জন পল এবং বেনেডিক্ট ছিলেন ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক। ফ্রান্সিসের জীবনরেখা ভিন্ন। তিনি একদা ছিলেন দ্বাররক্ষী, নাইটক্লাব-এর শৃঙ্খলারক্ষক, টেকনিশিয়ান এবং সাহিত্যের শিক্ষক। দৃষ্টিভঙ্গিতেও তিনি স্বতন্ত্র।

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০১

পূর্বসূরি দ্বিতীয় জন পল কিংবা ষোড়শ বেনেডিক্ট-এর ন্যায় কট্টরপন্থী যে তিনি নহেন, পোপ ফ্রান্সিস দায়িত্বগ্রহণের পর হইতেই তাহা বুঝাইয়া দিতেছেন। পোপত্ব অর্জনের পূর্বে জন পল এবং বেনেডিক্ট ছিলেন ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক। ফ্রান্সিসের জীবনরেখা ভিন্ন। তিনি একদা ছিলেন দ্বাররক্ষী, নাইটক্লাব-এর শৃঙ্খলারক্ষক, টেকনিশিয়ান এবং সাহিত্যের শিক্ষক। দৃষ্টিভঙ্গিতেও তিনি স্বতন্ত্র। ভ্রূণহত্যা, সমকামিতা, মহিলাদের পৌরোহিত্য অর্জনের আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি বিতর্কিত বিষয়ে তিনি যে পরিবর্তনপন্থী, তাহা তাঁহার নানা সময়ের মন্তব্যে স্পষ্ট। সম্প্রতি তিনি পন্টিফিকাল আকাদেমি অব সায়েন্সেস-এর অধিবেশনে বলিয়াছেন, বিশ্বসৃষ্টির বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ‘বিগ ব্যাং’ এবং পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাবের মূলে ডারউইন-কথিত বিবর্তনের ধারণা ঈশ্বর-বিশ্বাসের পরিপন্থী নহে। তাঁহার মতে, বাইবেলে বিশ্বসৃষ্টির বর্ণনা পড়িয়া মনে হইতে পারে, ঈশ্বর বুঝি এক জাদুকর, যাহা খুশি করিতে পারেন; ইহা সত্য নহে, সৃষ্টি তাঁহার কৃপা হইলেও, তৎপরবর্তী ঘটনাবলি যৎপরোনাস্তি নীতি-নিয়ম-অনুসারী। বিজ্ঞানের দুই মহাতত্ত্ব সম্পর্কে তাঁহার এই দাবিও, যথারীতি, সংবাদের শিরোনামে।

সপ্তদশ শতাব্দীতে আধুনিক বিজ্ঞানের জন্মপর্বে ধর্মের সহিত তাহার সম্পর্ক ছিল রীতিমত সৌহার্দ্যের। ওই বিজ্ঞানের সূত্রপাত যাঁহাদের পরিশ্রমে, তাঁহারা ছিলেন নিতান্ত ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টান। তাঁহারা বিশ্বাস করিতেন প্রকৃতি পর্যবেক্ষণে ঈশ্বরের লীলাখেলা দেখিবার সুযোগ মিলে। আইজাক নিউটন আবিষ্কার করিয়াছিলেন এই গূঢ় সত্য যে, গাছের আপেল যে কারণে মাটিতে পড়ে, সে কারণেই চন্দ্র পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। স্বর্গে আর মর্তে একই অনুশাসন। কিন্তু সেই যে কারণ, মহাকর্ষ যাহার নাম, তাহা কী কারণে? নিউটন-এর নিকট মহাকর্ষ ঈশ্বরের অভিপ্রায় ভিন্ন অন্য কিছু নহে। তাঁহার অন্তর্ধানের প্রায় তিন শত বৎসর পরে ধর্ম আর বিজ্ঞানের সম্পর্ক আর অবিমিশ্র মধুর নহে। বস্তুত, বিজ্ঞানিকুলের বিচারে সম্পর্কটি এখন চারিটি গোত্রে বিভক্ত। এক, সংঘাত: এ দাবি যে, ধর্মবিশ্বাস অবৈজ্ঞানিক চিন্তার সেরা নিদর্শন, কারণ ধর্ম অবাস্তব দাবিতে আস্থা, আর বিজ্ঞান যুক্তি-প্রমাণের কষ্টিপাথরে দাবির বিচার। দুই, সহাবস্থান: বিজ্ঞানের অন্বিষ্ট বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের স্বরূপ উদ্ঘাটন, আর ধর্মের লক্ষ্য মানবজীবনের অর্থ সন্ধান, কোনও বিরোধ নাই। তিন, সংলাপ: বিজ্ঞান আর ধর্ম যেহেতু জ্ঞানার্জনের দুই পথ, সুতরাং চিন্তার আদানপ্রদান কাম্য। চার, সমন্বয়: বিজ্ঞান আর ধর্ম নাকি একই মুদ্রার দুই পৃষ্ঠ, ঈশ্বরের লীলাখেলা বুঝিবার দুই উপায়। বিগ ব্যাং ও বিবর্তন সম্পর্কে পোপের দাবি যে শেষোক্ত গোত্রের, তাহা না বলিলেও চলে।

এক শক্তিশালী ধর্ম সম্প্রদায়ের শীর্ষগুরু কেন বিজ্ঞানের দুই মহাতত্ত্ব সম্পর্কে ওই মত ব্যক্ত করিলেন? বিগ ব্যাং-এ ব্রহ্মাণ্ডের আকস্মিক সৃষ্টি হইলেও, তাহার ব্যাখ্যায় যে সৃষ্টিকর্তার কল্পনার প্রয়োজন নাই, তাহা তো জানা গিয়াছে। এক এক প্রজাতির প্রাণী যে আলাদা আলাদা ভাবে ঈশ্বর-সৃষ্ট নহে, বরং প্রজাতির অন্তরে বিবর্তন যে সত্য ঘটনা, তাহাও প্রমাণিত। তবে পোপ বিজ্ঞানে ঈশ্বরের ভূমিকা প্রতিষ্ঠায় তৎপর কেন? সম্ভাব্য উত্তর: এই কালে বিজ্ঞান নিজস্ব দাবিগুলি প্রমাণে দ্রুতগতিতে অগ্রসরমান। তাই পোপ হয়তো উপলব্ধি করিয়াছেন একবিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানের কট্টর বিরোধিতায় ধর্মেরই ক্ষতি। বরং, তাহার দাবিগুলি মানিবার পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হওয়া বিচক্ষণতার লক্ষণ।

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy