অবশেষে। কিষেণজি মারা যাওয়ার পর বুড়িশোলের জঙ্গলে পুলিশের তদন্ত চলছে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
২০০৮ সালের নভেম্বরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কনভয়ের পথে মাইন ব্লাস্ট করল মাওবাদীরা। এক পরিচিত মাওবাদীর খোঁজে পুলিশ গেল লালগড়ের ছোটপেলিয়া গ্রামে। সেখানে মহিলাদের সঙ্গে সংঘাত। ছিতামনি মুর্মুর চোখে আঘাত লাগল। প্রতিবাদে শুরু হল আন্দোলন— পুলিশি অত্যাচারের বিরুদ্ধে। হাজার হাজার মহিলাকে দেখা গেল মিছিলে। রাস্তা কেটে লালগড়ে পুলিশের ঢোকা বন্ধ করলেন স্থানীয় মানুষ। ছত্রধর মাহাতো-র কমিটির সঙ্গে প্রশাসনের বৈঠক ও আলোচনা ব্যর্থ হল। এমনই পরিস্থিতি যে ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনে ওই এলাকার বুথগুলি বাইরে বের করে আনতে হল। নির্বাচনের পরে আরও বিপত্তি। রাতে মাওবাদীদের গণ-আদালত বসে আর সকালে রাস্তায় লাশ পড়ে থাকে। এক দিন চ্যানেলগুলি দেখাল রামগড়ের পুরনো পুলিশ ক্যাম্প দাউদাউ করে জ্বলছে আর অনুজ পাণ্ডের বাড়ি ভাঙা হচ্ছে হাতুড়ি মেরে। সিপিএম নেতার অত বাড়ি কী করে হয়— সেই প্রশ্ন আড়াল হয়ে গেল দৃশ্যটির অভিঘাতে। এরই প্রত্যুত্তরে শুরু হয়েছিল পুলিশের অভিযান, যে অভিযান শেষ হয় প্রায় তিন বছর পরে।
ছত্রধরের আন্দোলনে গোড়ার দিকে প্রচুর জনসমর্থন ছিল। সিপিএম-বিরোধী দলগুলিও অবশ্যই তাদের সমর্থন দিচ্ছিল। সেই সময় জেলা প্রশাসন অনেক চেষ্টা করেছিল একটা সমঝোতায় আসার। ছত্রধর মিটিংয়ে প্রশাসনের অনেক কথাই মেনে নিতেন, কিন্তু পরে দেখা যেত তিনি তাঁর মত পরিবর্তন করছেন।
আন্দোলনের একটি দাবি ছিল যে ছিতামনি এবং অন্যদের নির্যাতনের জন্য পুলিশকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। ঘটনার কিছু দিনের মধ্যেই দুঃখপ্রকাশ সরকারের রীতিবিরুদ্ধ। এ ক্ষেত্রে সরকার দুই ধরনের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এক, দাবি মানলে আরও দাবি আসবে। দুই, পুলিশ প্রশাসনের কাছে ভুল বার্তা যাবে। পুলিশের অনেক সিনিয়র অফিসারকে পরে বলতে শুনেছি, সরকার সেই সিদ্ধান্ত নিলে তাঁরা ক্ষুব্ধ হতেন না। প্রশাসন দুঃখপ্রকাশ করলে ছিতামনিরাও সম্ভবত আন্দোলন তুলে নিতেন। তা হলে কি সুযোগ ছিল, সমস্যাটি শুরুতেই শেষ করে দেওয়ার?
আলোচনা যখন ফলপ্রসূ হল না, তখন ঠিক হল, পুলিশ জোর করেই এলাকায় ঢুকবে। কিন্তু মাওবাদীদের সংখ্যা কত, তাদের কাছে কী ধরনের অস্ত্রশস্ত্র আছে, সে সম্বন্ধে স্পষ্ট রিপোর্ট ছিল না। পুলিশ ঢুকলে কত শক্তি নিয়ে ঢোকা উচিত হবে, তাও পরিষ্কার ছিল না। কেন্দ্রীয় বাহিনী কি পাওয়া যাবে, গেলেও তাদের সাহায্য নেওয়া কি উচিত হবে, এগুলো ছিল গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিল— আবার নন্দীগ্রাম হবে না তো?
আইন-শৃঙ্খলা রাজ্যের দেখার বিষয়। এখানে কেন্দ্রের প্রবেশ কোনও দিনই সহজ ছিল না। ২০০৮-এর মুম্বইয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। রাজ্যগুলি বোঝে, কেন্দ্রের সহযোগিতা ছাড়া সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পারা যাবে না। কিছু দিনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় মাওবাদীরাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। বোঝা যায়, রাজ্য চাইলে মাওবাদী দমনে কেন্দ্রের সাহায্য পাওয়া যাবে। কিন্তু বাংলার পরিস্থিতি অন্য রাজ্যের মতো নয়। তৃণমূল কংগ্রেস তখন ইউপিএ-র সদস্য। দলনেত্রী বলেছেন, লালগড়ে মাওবাদী নেই। সিপিএমের নিজস্ব ঝামেলা মেটাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী কেন যাবে? কাজেই, বাহিনী চাইলে পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে রাজ্য সরকার শেষ পর্যন্ত সংশয়ে ছিল। চিদম্বরম কিন্তু রাজি ছিলেন বাহিনী পাঠাতে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার স্পষ্ট রিপোর্ট অবশ্যই তার একটা কারণ। এ ছাড়া রাজনৈতিক কারণও কিছু থেকে থাকতে পারে।
কেন্দ্রীয় সরকার সাহায্য দিতে চাইলেই কি রাজ্যগুলি সেই সাহায্য গ্রহণ করবে? নীতীশ কুমার তো প্রত্যাখ্যান করলেন এই সাহায্য। রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে মাওবাদীদের সম্পর্ক দ্বন্দ্বমূলক— কখনও বন্ধু, কখনও শত্রু। মাওবাদীরা নির্বাচনে যাবে না। কাজেই বাংলার রাজনৈতিক দলগুলি মাওবাদীদের ভয়ের কারণ বলে মনে করেনি। যখনই প্রয়োজন হয়েছে, সাহায্য নিয়েছে নির্দ্বিধায়। তাই রাজ্য সরকার মাওবাদীদের মোকাবিলায় পুলিশ নামাবে, না ‘রাজনৈতিক’ মোকাবিলায় যাবে, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পরিষ্কার ছিল না। বোঝাবুঝির এই বিস্তর ফারাকের মধ্যেই ২০০৯-এর জুন মাসে শুরু হয়ে যায় রাজ্য পুলিশ, সিআরপি আর বিএসএফ-এর যৌথ অভিযান।
শুরুটা হয়েছিল দেখবার মতন। ভাদুতলা, পিড়াকাটা হয়ে পুলিশের একটি বাহিনী লালগড়ে পৌঁছোল পায়ে হেঁটে। পরের দিন লালগড় আর গোয়ালতোড় থেকে একই সঙ্গে দু’টি কোম্পানি বেরিয়ে লালগড়-গোয়ালতোড় রাস্তাটা খুলে দিল। রাস্তায় অনেক জায়গায় মাইন পোঁতা, অতি সন্তর্পণে মাইন অকেজো করে দিয়ে এগোল পুলিশ। দু-এক জায়গায় হালকা লাঠিচার্জ করতে হলেও এই ‘রোড ওপেনিং’ ছিল শান্তিপূর্ণ। ভয় ছিল, মাওবাদীরা বাচ্চা-কোলে মহিলাদের এগিয়ে দেবে পুলিশের সামনে। তেমন কিছুই হয়নি।
প্রথম দিনের আভিযানের ছবি দেখে মনে হল, বিশ্বযুদ্ধের পরে মিত্রবাহিনী ফ্রান্সে ঢুকেছে। অনেক জায়গায় দেখা গেল মহিলারা জল খাওয়াচ্ছেন। মিডিয়ার এই ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ প্রতিবেদনের ক্ষতিপূরণ করতে কিছু বিদ্বজ্জন গেলেন লালগড়ে। ছত্রধরের সঙ্গে মিটিংও করলেন তাঁরা। কিন্তু যখন বুঝলেন যে তাঁরা ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করেছেন, তখন এতটাই বিচলিত হলেন যে তাঁদের কাছে কোনও জোরালো বিবৃতি পাওয়া গেল না।
নন্দীগ্রাম থেকে শিক্ষা নিয়ে লালগড় অভিযানে কিছু বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযানে সাধারণত লাঠিধারী পুলিশ থাকে না, তাই ছোটখাটো বাধা এলেও পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়। এ দিন বন্দুকধারীদের সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণ লাঠি ছিল। শুধু তা-ই নয়, মহিলা পুলিশ ছিলেন একশোরও উপর। কলকাতা পুলিশের এই মহিলাদের লালগড়ে থাকতেও হয়েছিল বেশ কিছু দিন। আমাদের তরফে জুনিয়ার অফিসাররা অভিযানে থাকলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে না, এই জন্য পুলিশ বাহিনীর নেতৃত্ব দেন জেলার পুলিশ সুপার আর ওই অঞ্চলের ডিআইজি। এই বিশেষ ব্যবস্থাগুলি না থাকলে অভিযান এত নির্বিঘ্ন হত না। এ জন্য সাধুবাদ দিতে হয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আর পালনিয়াপ্পন চিদম্বরমকে।
অভিযানের গোড়ার দিকে অযাচিত ভাবেই সাহায্যের প্রস্তাব আসে দু’দিক থেকে। কেপিএস গিল মেদিনীপুরে গিয়ে পুলিশকে বলেন, তিনি লালগড়ে যাবেন, অভিযান ঠিকমত চলছে কি না দেখতে। জেলা পুলিশ তাকে গেস্ট হাউসে বসিয়ে আপ্যায়ন করে নিরস্ত করে। আর শ্রীশ্রীরবিশঙ্কর বলেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী নিজে যদি তাকে ডাকেন, তিনি এসে মাওবাদীদের বোঝাতে পারেন যে, হিংসার পথ ঠিক পথ নয়! বুদ্ধদেববাবু রাজি হননি।
শুরুটা ভাল হলেও, কিছু দিন পরেই সমস্যা টের পাওয়া যায়। বহু দিন ওই এলাকায় পুলিশের প্রবেশ বন্ধ, তাই নতুন করে গোয়েন্দা শাখা ঢেলে সাজতে হয়। নির্ভরযোগ্য খবর পেতে সময় লেগে যায়। তত দিন এরিয়া ডমিনেশনের কাজই চালিয়ে যেতে হয়। তাতে মাওবাদীদের কোনও অসুবিধা হয়নি। রাতের অন্ধকারে নিঃশব্দে অভিযান চালাতে হলে এলাকার সঙ্গে যথেষ্ট পরিচিতি দরকার। তাও সম্ভব হয় কয়েকটা মাস কেটে যাওয়ার পরে। মাওবাদীদের কিন্তু সময় লাগে না পুলিশের গতিবিধির খবর পেতে।
মিডিয়াকে বোঝানো যায় না এত দেরি হচ্ছে কেন। কিষেণজি প্রশাসনের অস্বস্তি অনেক গুণ বাড়িয়ে দিলেন। টিভি চ্যানেলে প্রায়ই তার ফোন-ইন শোনা যায়। তার ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকেরা রোজই তাঁর ফোন পান। ওর ব্যাপ্তি যে সাইবারজগতে, আমাদের ইট-কাঠের জগতে নয়, সে কথা কেউ বুঝতে চান না। কিষেণজির যারা সাক্ষাত্কার নিয়েছিলেন, সেই সাংবাদিকদের লেখা পড়েও জেনেছি যে, সাক্ষাতের দিন ঠিক হলে তাদের কাছে নির্দেশ আসত মেদিনীপুর শহরে যাওয়ার। সেখানে গিয়ে অপেক্ষা। তার পর ঝাড়গ্রাম। সেখানে আবার অপেক্ষা। রাতের বেলায় বাইকের পিছনে বসে নিরুদ্দেশ যাত্রা। কিষেণজির সম্পূর্ণ সহযোগিতায়, তাঁরই নির্দেশ মতো তাঁর কাছে পৌঁছতে লেগে যেত তিন বেলা। আর রাইটার্সের বারান্দায় বসে যাঁরা তার ফোন পেতেন, তাঁরা ভাবতেন, এই তো আমি কথা বলছি, আর এরা ধরতে পারছে না? সেল ফোন সত্যিই মানুষকে মানুষের কাছে নিয়ে আসে!
কিষেণজি বরাবরই নিরাপত্তা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন, এ কথাটা ঠিক নয়। একাধিক বার তিনি অল্পের জন্য বেঁচে যান। হাথিলট গ্রামের সংঘর্ষে তার পায়ে বুলেট লাগে, কিন্তু তিনি পালিয়ে যেতে পারেন। খুব দ্রুত কোনও জায়গা ছেড়ে বহু দূর চলে যাওয়ার ক্ষমতা ছিল কিষেণজির। মোবাইল ফোন থেকে কারও লোকেশন পাওয়া যায় না। তার জন্য প্রয়োজন জিপিএস সম্পন্ন ট্রান্সমিটার। এক বার এক মহিলা রাজি হয়েছিলেন এ রকম একটি যন্ত্র তাঁর কাছে নিয়ে যেতে। কিষেণজির অবস্থান পাওয়া গেলেও তাঁকে সে বার ধরা যায়নি। শেষমেশ বুড়িশোলের জঙ্গলে এই যন্ত্রের সাহায্যেই তাঁর অবস্থান পাওয়া যায়।
কিষেণজির শেষ এনকাউন্টার কি সাজানো ঘটনা? আজাদের মৃত্যুর সময়ও এই প্রশ্ন উঠেছিল। কিষেণজির বেলায় প্রশ্ন ছিল, তাঁর দেহরক্ষীরা গেলেন কোথায়? সেই সময় সরকারের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তুতি চলছিল। এই ব্যাপারে তাঁকে কোথাও একলা আসতে বলা হয়েছিল কি? সেখানেই কি তাঁকে ধরে ফেলা হয়? আজাদের মৃত্যুর সময়ও এই কথা উঠেছিল। সেই ঘটনার দুই বছরের মধ্যে কিষেণজি একই ফাঁদে পা ফেলবেন, তা হয় না। তা ছাড়া, কিষেণজি তাঁর ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকদের একটা আভাস দিয়ে যাবেন না?
নিরাপত্তাবাহিনী বা সাংবাদিকেরা যখনই কিষেণজির ধারেকাছে গিয়েছেন, তখনই দেখেছেন তাঁর নিজস্ব রক্ষী-বলয়। তবে, কিষেণজি কখনও একলা থাকেননি, তা নয়। ওই মাপের নেতার নিশ্চয় প্রয়োজন হত একা থাকার, গোপন বৈঠক করার। বুড়িশোলের ঘটনার কিছু দিন আগেও খবর ছিল কিষেণজি রাজ্যের বাইরে। উনি যে ফিরেছেন, সে খবর পুলিশের কাছে ছিল না। হয়তো তিনি দেহরক্ষীদেরও জানাননি। শেষের দিকে হয়তো তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুচরদেরও পুরোপুরি বিশ্বাস করতেন না। পুলিশ সে দিন সকালে খবর পায় যে, সুচিত্রা মাহাতোকে জঙ্গলে দেখা গিয়েছে। পরে জানা যায়, কিষেণজিও সঙ্গে আছেন। মোটামুটি কোথায় আছেন বোঝা যেতে জেলা পুলিশ অভিযান চালায় কোবরাকে সঙ্গে নিয়ে। কিষেণজি জীবন্ত ধরা পড়লে মাওবাদীরা কিছু থানা আক্রমণ করত, কিছু গাড়ি পোড়ানো হত— কিন্তু লাভ সরকারের বেশি হত।
সরকারের কি উচিত ছিল এই ঘটনার তদন্তে কমিশন বসানো? অসুবিধা হল, পুলিশকে যদি প্রমাণ করতে হয় যে এনকাউন্টার সত্যিই হয়েছে, তবে কখন, কোথা থেকে, কার মাধ্যমে খবর এসেছিল, সব কথাই প্রকাশ্যে আনতে হয়। যাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুলিশকে খবর দিয়েছেন, তাঁদেরই বিশ্বাসভঙ্গ করতে হয়। তা হলে কি তদন্ত না হওয়াই ভাল? তা-ও নয়। এই ধরনের ঘটনায় তদন্ত বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। সাক্ষীদের নিরাপত্তা রক্ষার উপায় একটা বেরোবেই। লালগড়ে আজ সবাই নিশ্চিত জানেন, কিষেণজিকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষে এটা সুখের বিষয় নয়। এ ধারণা স্থায়ী হলে তাঁর যুগে যুগে ফিরে আসা ঠেকাব কী করে?
(শেষ)
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভূতপূর্ব মুখ্যসচিব
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy