এ মাসেই কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের ক্লাস শুরু হতে চলেছে। সূত্রের খবর, এই বিষয়ে পুলিশের অনুমতি পাওয়া গিয়েছে। ওই অনুমতি পাওয়ার পরই এই বিষয়ে কলেজের উপাধ্যক্ষ উচ্চ শিক্ষা দফতরের এক উচ্চপদস্থ কর্তার সঙ্গে কথা বলেন। এর পরই কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জানা গিয়েছে, সোমবার, অর্থাৎ ৭ জুলাই থেকেই কলেজের পঠনপাঠন চালু হতে চলেছে। এই নিয়ে কলেজের পরিচালন সমিতির বৈঠকও হয়েছে। ওই দিন সকাল আটটা থেকে ক্লাস শুরু হবে। দ্রুত কলেজের ওয়েবসাইটে পঠনপাঠন শুরুর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। তবে, তদন্তের স্বার্থে কলকাতা পুলিশের তরফে মূল ঘটনাস্থল অর্থাৎ ইউনিয়ন রুম, গার্ডরুম ‘সিল’ করে রাখা হবে। এ ছাড়াও কলেজ পড়ুয়া, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের হাজিরার খাতা তদন্তকারী কমিটির অনুমোদন ছাড়া ‘ডিসপোজ়ড অফ’ অর্থাৎ বাতিল বা নষ্ট করা যাবে না।
অন্য দিকে, শুক্রবার ভোররাতেই কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ এবং ফরেন্সিক বিভাগের তরফে কলেজে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হয়। মূল অভিযুক্ত ‘এম’ এবং ‘পি’, ‘জে’ ও ধৃত নিরাপত্তারক্ষীকে কলেজে নিয়ে গিয়ে সে দিনের ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। তা থেকে যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তা নির্যাতিতার বয়ানের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে।
আরও পড়ুন:
চলতি সপ্তাহেই সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের পঠনপাঠন বন্ধ রাখার কারণ জানতে চেয়েছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। পরিচালন সমিতির কাছে রিপোর্ট তলবের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জবাব দেয় কলেজ। কলেজের তরফে জানানো হয়, তদন্তের স্বার্থে পুলিশ কলেজ ক্যাম্পাসের গেট ‘সিল’ করে রেখেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই পঠনপাঠন চালু করা হবে।
বৃহস্পতিবার কলেজের তরফে বলা হয়েছিল, কলেজ প্রাঙ্গণের বাইরে ও ভিতরে পুলিশি প্রহরা থাকায় পঠনপাঠন ব্যাহত হতে পারে। তাই ক্লাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও প্রশাসনিক কাজের জন্য অফিস খোলা থাকছে, এমনটাই কলেজ কর্তৃপক্ষ ডিরেক্টর অফ পাবলিক ইনস্ট্রাকশন-এর (ডিপিআই) মাধ্যমে জানিয়েছিলেন।
শুধুমাত্র কসবা আইন কলেজেও নয়, রাজ্যের সব কলেজেই বন্ধ থাকছে ইউনিয়ন রুম। বৃহস্পতিবার একটি জনস্বার্থ মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি স্মিতা দাসের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, রাজ্যের সব কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিয়ন রুম তালাবন্ধ থাকবে। এই মর্মে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরকে বিজ্ঞপ্তিও জারি করতে হবে।
আদালতের নির্দেশ মেনে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিয়ন রুম বন্ধ করা হয়েছে। নিজস্ব চিত্র।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য শান্তা দত্ত দে জানিয়েছিলেন, ‘‘১০ থেকে ১২ বছর ছাত্রভোট হয়নি। সেই পরিস্থিতিতে ইউনিয়ন রুমের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধ করার বিষয়ে আদালতের কাছেও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে বক্তব্য রাখা হয়েছিল। আদালত তাতে মান্যতা দিয়েছে।’’
উল্লেখ্য, ২৫ জুন কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের ক্যাম্পাসের ভিতর রক্ষীর ঘরে ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ওই কলেজেরই দুই ছাত্র এবং এক প্রাক্তনীকে। ওই প্রাক্তনীই কলেজের অস্থায়ী কর্মী হিসাবেও নিযুক্ত। যদিও মূল অভিযুক্তকে কলেজের চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরা সকলেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গিয়েছে। অভিযোগ, ছাত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তা খারিজ করার পরেই তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। বয়ানে অসঙ্গতি থাকায় কলেজের নিরাপত্তারক্ষীকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
(ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির ঘটনায় যত ক্ষণ না অভিযুক্তকে আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে, তত ক্ষণ তাঁর নাম-পরিচয় প্রকাশে আইনি বাধা থাকে। সেই কারণে আনন্দবাজার ডট কম কসবার ধর্ষণকাণ্ডে তিন অভিযুক্তের নাম এবং ছবি প্রকাশে বিরত থাকছে)