মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ হয়ে গিয়েছে ২ মে। কিন্তু এখনও রাজ্যের সরকারি স্কুলে একাদশে ভর্তি প্রক্রিয়া থমকে। কারণ, ওবিসি মামলা! পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ কী, কী ভাবে ভর্তি নেওয়া হবে শিক্ষার্থীদের— সব কিছু নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ স্কুল কর্তৃপক্ষ তথা শিক্ষকেরা। অন্য দিকে শিক্ষা সংসদ জানিয়েছে, সরকার কোনও গাইডলাইন না দিলে তারা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।
প্রতি বছরই মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পর দিন থেকেই শুরু হয় যায় স্কুলে স্কুলে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু। এই বছরও তেমনটাই হয়েছিল। রাজ্য সরকার অনুমোদিত, সরকার পোষিত এবং সরকারি স্কুল— এই তিন ধরনের স্কুল রয়েছে। এর মধ্যে রাজ্য সরকার অনুমোদিত, সরকার পোষিত স্কুলে ভর্তির প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। বাকি রয়েছে সরকারি স্কুলের ভর্তি।
বারাসাত প্যারীচরণ সরকার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট মাস্টার ইন-চার্জ বাবলু সমাদ্দার বলেন, ‘‘আমরা সাধারণ বিভাগে আপাতত ভর্তি নিয়ে নিয়েছি। নম্বরের ভিত্তিতে এই ভর্তির প্রক্রিয়া হয়েছে আমাদের স্কুলে। আমরা পড়ুয়াদের স্বার্থে ভর্তি নিয়ে নিয়েছি নম্বরের ভিত্তিতে।’’
প্রতি বছরের মতো এ বছরেও নিয়ম মেনে রাজ্যের ৩৯টি সরকারি স্কুলে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল। গত ১০ মে পর্যন্তও চলেছে ভর্তি। কিন্তু ১৩ মে মেধাতালিকা প্রকাশ করার কথা। সূত্রের খবর, হঠাৎ করেই স্কুল শিক্ষা দফতর থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়, ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে। যদিও সরকারি কোনও বিজ্ঞপ্তি যায়নি প্রধান শিক্ষকদের কাছে। হোয়াটসঅ্যাপে জানানো হয়েছে বলেই খবর। ভর্তি বন্ধ করার কারণ হিসেবে অনেকের ধারণা, এখন ওবিসি মামলা চলছে। তাই যতক্ষণ না মামলার কোনও কিনারা হচ্ছে ততক্ষণ পুনরায় ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে না।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সরকারি স্কুল এমনিতেই ধুঁকছে। অনেকে সুযোগ পেলে অন্য স্কুলেও চলে যাবে। আমরা সরকারের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি। যতক্ষণ না সরকারের তরফে কোনও গাইডলাইন আসছে ততক্ষণ আমরা কিচ্ছু করতে পারব না’’।
আরও পড়ুন:
বছরের জুন-জুলাই-অগস্ট। এই তিন মাসই স্কুলে পড়াশোনার জন্য মূল সময় বলে মনে করে শিক্ষা মহলের একাংশ। কারণ, এর পরেই দুর্গাপুজোর ছুটি, কালীপুজোর ছুটি পড়ে যায়। আবার কিছু দিন ক্লাস হওয়ার পর বড়দিনের ছুটি পড়ে। তার পর আবার নতুন বছর। পরীক্ষার পর্ব শুরু হয়ে যায়। এই সময় পঠনপাঠন ব্যাহত হওয়া মানে সাড়া বছর স্কুল যে রুটিনে চলবে তা থেকে পিছিয়ে যাবে বলে মনে করছেন নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কিছু শিক্ষক।
অন্য দিকে, চলতি বছর থেকে সিমেস্টারে উচ্চ মাধ্যমিক শুরু। সেই মতো একাদশের পরীক্ষাও সিমেস্টার পদ্ধতিতেই হয়। তাই পরীক্ষার সময়েও এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছে শিক্ষা মহলের একাংশ।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, ‘‘তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের তুলনায় ২০২৫ সালে সরকারি স্কুলের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেশ কমেছে। ২০২৫ সালের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সমস্যা অবিলম্বে যদি নিরসন না করা হয়, তা হলে আমাদের আশঙ্কা, বহু পড়ুয়া সরকারি স্কুল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।’’