এক বছরের মধ্যে ‘ব্রিজ কোর্স’ করতে হবে। এমনই নির্দেশ রাজ্য শিক্ষা দফতরের। রাজ্যের যে সব শিক্ষকের বিএড ডিগ্রি রয়েছে, অথচ ডিএড বা ডিএলএড নেই, কিন্তু স্কুলে শিক্ষকতা করছেন তাঁদের জন্য এই বিজ্ঞপ্তি।
৫ জুন রাজ্যের শিক্ষা দফতরের তরফে এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ছ’মাসের ‘ব্রিজ কোর্স’ বাধ্যতামূলক। প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে (প্রাইমারি স্কুলের যাঁরা শিক্ষক) যাঁদের নিয়োগ ২০১৮ সালের জুন মাস থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের মধ্যে হয়েছে তাঁদের জন্য এই বিজ্ঞপ্তি। সূত্রের খবর, রাজ্যে প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার এমন শিক্ষক রয়েছেন যাঁরা বিএড উত্তীর্ণ হয়ে স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। তাঁদের এক বছরের মধ্যে অনলাইনে এই কোর্স করতে হবে। যদি এই কোর্স না করেন, তা হলে তাঁদের চাকরি থাকবে না বলেও জানানো হয়ছে।
চলতি বছরের এপ্রিলে ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশনের (এনসিটিই) তরফে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, রাজ্যের দেওয়া নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে দেশের সমস্ত স্কুলের ইন-সার্ভিস বিএড ডিগ্রিপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষকদের এই কোর্স করতেই হবে। এর পর দেশের কিছু রাজ্যে এই নির্দেশ শুরু হলেও পশ্চিমবঙ্গে এত দিন এই নির্দেশ জারি হয়নি। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাজ্য শিক্ষা দফতরের তরফে এই নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
এনসিটিই-র তরফে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, কাউন্সিলের নিয়মানুসারে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওপেন স্কুলিং-এর তরফে অনলাইনে এবং দূরশিক্ষা পদ্ধতিতে বিএড প্রশিক্ষিতেরা এই ‘ব্রিজ কোর্স’ করতে পারবেন। যদিও এই ব্রিজ কোর্স নিয়ে বেশ কিছু বিতর্ক আগে দেখা দিয়েছিল। যা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্তও গড়ায়।
২০১৮ সালের ২৮ জুন এনসিটিই-র তরফে প্রথমে একটি গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে জানানো হয়, বিএড প্রশিক্ষিতেরা প্রাথমিকের শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত হতে পারবেন। পরবর্তী কালে এই যোগ্যতার মানদণ্ডকে চ্যালেঞ্জ করে বিভিন্ন রাজ্য থেকে মামলা দায়ের করা হয়।
আরও পড়ুন:
সেই সমস্ত মামলা পর্যবেক্ষণের পরে ২০২৩ সালের ১১ অগস্ট সুপ্রিম কোর্ট জানায়, প্রাথমিকের শিক্ষক পদে আবেদনের জন্য প্রার্থীদের বিএড প্রশিক্ষিত হওয়া যথেষ্ট নয়। তাঁদের ডিএলএড অথবা ডিএড ডিগ্রিও থাকা প্রয়োজন। একই সঙ্গে শীর্ষ আদালত এও জানায়, দ্রুত পূর্বে নিযুক্ত বিএড প্রশিক্ষিতদের একটি ‘ব্রিজ কোর্সে’র মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ২০২৪ সালের ৮ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট এই মর্মে এনসিটিই-কে নির্দেশ দেয়, ‘ব্রিজ কোর্স’-এর প্রশিক্ষণ দ্রুত সম্পূর্ণ করতে হবে। এর পর চলতি বছর এনসিটিই-র তরফে ‘ব্রিজ কোর্স’ বাধ্যতামূলক জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। যা দেশের প্রতিটি রাজ্যকে মানতে হবে এমনও নির্দেশ ছিল ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আছে এবং এনসিটিই’র গাইডলাইন আছে, তাই এই ধরনের প্রত্যেক শিক্ষককে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই প্রশিক্ষণ নিতেই হবে। তা না হলে চাকরি চলে যাবে। রাজ্যেরও দায়িত্ব প্রতিটি শিক্ষক যাতে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন সেটা নিশ্চিত করা এবং কেউ বাদ পড়ে যাচ্ছেন কি না সেটার নজরদারি করা।’’
দেশ জুড়ে প্রায় ৩ থেকে ৪ লক্ষ শিক্ষক-শিক্ষিকা ওই নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে চাকরি পেয়েছেন। বিপুল সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি বাঁচাতেই এই বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে, এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।