এজেন্সিকে দিয়ে প্রশ্নপত্র তৈরি করানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। এমনই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পর্ষদ জানিয়েছে, স্কুলের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পার্বিক পরীক্ষার (সামেটিভ ইভ্যালুয়েশন) প্রশ্নপত্র কোনও বাইরের এজেন্সি অথবা অন্য কাউকে দিয়ে করানো যাবে না। যদি কোনও স্কুল এই বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পর অন্য এজেন্সি মারফত প্রশ্ন তৈরি করায়, তা হলে সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষককে পর্ষদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
বিগত বছরে দেখা গিয়েছে পার্বিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র শিক্ষকেরা তৈরি না করে বাইরে থেকে কেনা হয়েছে। সেই সব প্রশ্নপত্রের নানান ভুলভ্রান্তি সামনে আসত ছাত্রছাত্রীদের। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সূত্রের খবর, বিভিন্ন অসাধু ব্যবসায়ী ও শিক্ষক সংগঠনের এক অংশ প্রশ্ন বিক্রির সঙ্গে যুক্ত হন। অনেক সময় প্রধান শিক্ষকদের উপর এ বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করা হত বলেও অভিযোগ। এ হেন সমস্যা এড়াতে এমন সিদ্ধান্ত পর্ষদের।
অন্যদিকে স্কুলগুলির মত, স্কুল প্রশ্ন করবে এটা যেমন ঠিক। তেমই স্কুলগুলিকে নিজেদের প্রশ্ন তৈরির জন্য যে অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হয় সেটার কোনও সংস্থান নেই! তার উপর নিয়োগ বাতিলের জেরে পর্যাপ্ত শিক্ষাকর্মীও স্কুলে স্কুলে নেই। দ্য পার্ক ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা বলেন, ‘‘এজেন্সি মারফত প্রশ্ন করলে খরচ অনেকটাই কম হয়। কিন্তু স্কুলের প্রশ্ন স্কুলই করবে এটা একদিকে ভাল। তবে পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ের জন্য যদি কোনও গ্রান্ট স্কুলগুলিকে দেওয়া হয় তা হলে খুব সুবিধা হয়।’’
আরও পড়ুন:
গত বছর সরকারের তরফে কম্পোজিট গ্রান্টের টাকা অর্ধেক পেয়েছিল স্কুলগুলি। বহু সময় স্কুলের চক ডাস্টার এবং পরিকাঠামো উন্নয়নের টাকাই থাকে না। এই অবস্থায় নিজেদের প্রশ্নপত্র তৈরি খরচ অনেক বলেই মনে করছে শিক্ষক মহলের একাংশ। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘মধ্যশিক্ষা পর্ষদ যে নির্দেশ দিয়েছে তা মেনে নিতে হয়তো সকলেই বাধ্য হবে। কিন্তু পর্ষদের এটাও বোঝা উচিত, পরীক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনা করার জন্য সরকার যে কম্পোজিট গ্রান্ট দেয় গতবার তার অর্ধেক দিয়েছিল। এ বছর কত দেবে জানি না। স্কুলগুলোর আর্থিক অবস্থা দিনে দিনে আরও খারাপ হচ্ছে। এত খরচ বহন করবে কী করে!’’
বিজ্ঞপ্তিতে নির্দেশের পাশাপাশি পার্বিক পরীক্ষার সূচিও দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছর চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণির দ্বিতীয় পার্বিক পরীক্ষা শুরু ১ অগস্ট থেকে, চলবে ৮ অগস্ট পর্যন্ত। চতুর্থ থেকে নবম শ্রেণির তৃতীয় পার্বিক পরীক্ষা শুরু ১ ডিসেম্বর থেকে। চলবে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। দশম শ্রেণির টেস্ট শুরু হবে ৩ নভেম্বর। চলবে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত। গত বছরের তুলনায় আট দিন এগিয়ে এলো চলতি বছরের মাধ্যমিকের টেস্ট। এই সূচি প্রকাশের পর পড়ুয়ারা পড়ার সময় সে ভাবে পাবে না বলেই মত শিক্ষামহলের একাংশের। শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, ‘‘এই নির্ঘণ্ট বিদ্যালয়গুলির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে দশম শ্রেণির পরীক্ষা অনেকটা এগিয়ে আসায় সিলেবাস শেষ করার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। আর এখনও হাই স্কুলগুলির সঙ্গে পঞ্চম শ্রেণি যুক্ত রয়েছে। যতদিন না সমস্ত পঞ্চম শ্রেণি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ততদিন পঞ্চম শ্রেণির বিষয়টি এই নোটিসে থাকা উচিত ছিল। একই স্কুলের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আলাদা রুটিন ফলো করা সম্ভব নয়।’’