গবেষণাগার তৈরি, বিষয়ভিত্তিক পাঠ্যসূচি বানানো, পড়ুয়াদের ‘‘শেখা হোক উপার্জনের হাতিয়ার’’— এই লক্ষ্যে বেহালা কলেজের মুকুটে জুড়ল আরও এক পালক। কলেজ এখন স্বশাসিত। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর তরফে বেহালা কলেজকে স্বশাসিত স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ২০২৩-এ ‘ন্যাক’-এর মূল্যায়নে এ++ গ্রেড পেয়েছিল এই কলেজ। তার পর থেকে স্বশাসিত হওয়ার লক্ষ্যে এগোচ্ছিল প্রতিষ্ঠান।
কলেজের অধ্যক্ষা শর্মিলা মিত্র বলেন, ‘‘দু’বছর আগে ‘ন্যাক’ যখন এ++ গ্রেড দিয়েছিল তখনই তাঁরা জানিয়েছিলেন আমরা স্বশাসিত কলেজ হওয়ার উপযুক্ত। সেই মতো ওই বছরই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও আমরা সে ভাবে সাড়া পাইনি। তারপর ২০২৪-র শেষের দিকে ইউজিসি-কে সরাসরি আবেদন জানাই। তাদের প্রয়োজনীয় সমস্ত নথিও জমা দেওয়া হয়েছিল। তারপর ইউজিসি আমাদের আবেদনের সদুত্তর দেয়।’’
ইউজিসি-র যুগ্মসচিব মনোজ কুমার বুধবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে লেখা চিঠিতে ৩০ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত নির্দেশ দিতে বলেছেন। রাজ্যের শিক্ষাসচিবকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। অধ্যক্ষা জানিয়েছেন কলেজে ইতিমধ্যে যে হেতু অভিন্ন পোর্টাল দ্বারা স্নাতক স্তরে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে, তাই স্নাতকের পাঠ্যক্রমে কোনও বদল আনা হচ্ছে না। তবে পরবর্তী বছর থেকে বেহালা কলেজ স্বশাসিত ভাবে স্নাতকে ভর্তির পাঠ্যক্রম চালু করবে। চলতি বছর কলেজ স্নাতকোত্তর স্তরে ভর্তি শুরু করতে চলছে স্বশাসিত ভাবে। সেই মতো প্রস্তুতিও শুরু করে দেওয়া হয়েছে।
শর্মিলা বলেন, ‘‘কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যে পাঠ্যসূচি তৈরি হয়, অনেক সময় দেখা যায় বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক অনেক কলেজেই থাকে না। তাতে সমস্যায় পড়তে হয় পড়ুয়াদের। স্বশাসিত হওয়ার সব থেকে ভাল দিক আমরা পড়ুয়াদের মেধার ভিত্তিতে পাঠ্যসূচি তৈরি করতে পারব। যাতে পড়ুয়াদের শুধু ডিগ্রি অর্জনই নয় পরবর্তী সময় পেশাগত দিক নির্বাচনেও কোনও সমস্যা হবে না।’’ পাশাপাশি তিনি আরও জানান, গবেষণাগার তৈরির জন্য ইউজিসি থেকে সরাসরি গ্রান্ট-এর আবেদন করা যাবে। বিজ্ঞান কলা বিভাগের গবেষণাগারে শুধু পড়ুয়ারাই নয় শিক্ষক-শিক্ষিকারাও নানা প্রকল্পের কাজ করতে পারবেন।
একই সঙ্গে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের কথাও তুলে ধরেন শর্মিলা। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক সময় দেখা যায় আমাদের কলেজের বহু পড়ুয়া অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পিএইচডি-র জন্য নাম নথিভুক্তই করতে পারে না। কলেজ স্বশাসিত হওয়ার ফলে সেই দিকও খোলা থাকবে পড়ুয়াদের জন্য’’। স্নাতক উত্তীর্ণের পর উচ্চ শিক্ষার স্বার্থে রাজ্যে বা দেশের বাইরে পড়তে চাইলে যাতে পড়ুয়াদের কোনও সমস্যা না হয়, সেই দিকেও নজর দেবে বেহালা কলেজ। সেই মতো পাঠ্যসূচি তৈরির ভাবনায় এগোচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান।
স্নাতক স্নাতকোত্তর ছাড়া বর্তমানে কলেজের চার হাজার স্কোয়্যার ফুট নিয়ে ড্রোন পাইলট ট্রেনিং-এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ ছাড়াও বিগত ১০ বছর ধরে ফটোগ্রাফির উপর সার্টিফিকেট কোর্স করানো হয়। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন পরিষদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভ্রমণ এবং পর্যটন নিয়ে কোর্স রয়েছে। কলেজের বহু পড়ুয়া স্নাতকের পাশাপাশি রিসাইকিলিং ক্র্যাফট নিয়ে সার্টিফিকেট কোর্সেও পড়ছে বলে জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন:
উল্লেখ্য, প্রতি ৫ বছর অন্তর কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যায়ন করে ইউজিসি-র ন্যাক। বিগত বহু বছর ধরে ইউজিসি স্বীকৃত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাদান, তাঁদের গবেষণা পদ্ধতি, পরিকাঠামো-সহ আরও অনেক বিষয় খুঁটিনাটি পর্যালোচনা করে থাকে ন্যাক। পাশাপাশি, এই দিকগুলির শ্রেষ্ঠত্বের উপর নির্ভর করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে গ্রেড দেওয়া হয় ন্যাকের তরফে। তালিকা অনুযায়ী ২০২৩-এ মোট ৪-এর মধ্যে বেহালা কলেজের স্কোর হয়েছিল ৩.৫৮। যার দরুন কলেজ এ++ গ্রেড পেয়েছিল ২০২৩। আগামী ১০ বছর স্বশাসিত ভাবে ঠিক মতো চলতে পারলে নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তীতে এই কলেজ ডিমড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃত পাবে।