প্রায় ন’বছর পর রাজ্যে ফের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করা হচ্ছে। এর আগে ২০১৬-র ২৭ নভেম্বর এবং ৪ ডিসেম্বর নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নিয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। কিন্তু তার পরেই প্রকাশ্যে আসে ওএমআর কারচুপি, টাকার বিনিময়ে চাকরির বিক্রির মতো অভিযোগ। ফলে একেবারে বন্ধ হয়ে যায় এসএসসি নিয়োগ পরীক্ষা। অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চলতি বছর ৭ এবং ১৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নেবে এসএসসি।
পরীক্ষার আগে শনিবার এসএসসি-র চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার সংবাদমাধ্যমকে জানান, পরীক্ষার্থীদের কী কী নিয়ম মানতে হবে।
পরীক্ষাকেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা:
- প্রশ্ন ফাঁস রুখতে প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরার বন্দোবস্ত রাখতে হবে।
- মোবাইল-সহ কোনও বৈদ্যুতিন যন্ত্র নিয়েই পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে পারবেন না পরীক্ষার্থীরা। এই একই নিয়ম প্রযোজ্য ভেন্যু সুপারভাইজ়ার এবং অবজ়ার্ভারদের জন্যও। তাঁদের ফোন ভেন্যু সুপারভাইজ়ারের ঘরে রেখে পরীক্ষার হলে ঢুকতে হবে।
- এ ছাড়াও প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রে মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের দেহতল্লাশি (ফ্রিস্কিং) করা হবে। মহিলা পরীক্ষার্থীদের জন্য আলাদা এনক্লোজ়ারের ব্যবস্থা প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রে রাখতে হবে। থাকবেন মহিলা নিরাপত্তারক্ষী।
পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্বে কারা?
- পরীক্ষার হলে ইনভিজিলেটর না থাকলেও প্রতি ২৫ জন পরীক্ষার্থীর জন্য এক জন করে অবজ়ার্ভার থাকবেন। বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের অধ্যাপক এবং শিক্ষকরা ওই কাজের দায়িত্বে থাকবেন।
- ভেন্যু সুপারভাইজ়ার হবেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান। তবে, জরুরি পরিস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান ওই প্রতিষ্ঠানের অন্য কোনও শিক্ষককে এই দায়িত্ব দিতে পারবেন। তা এসএসসি-কে আগে থেকে তা জানিয়ে দিতে হবে।
এক নজরে পরীক্ষার নিয়মাবলী। গ্রাফিক্স: আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক।
ওএমআর শিট ব্যবহারের বিধি:
- ২০১৬-এর এসএসসি-র পরীক্ষায় ওএমআর শিট কারচুপির ঘটনা ঘটেছিল। তাই ২০২৫-এর পরীক্ষায় ওএমআর নিয়ে বাড়তি সতর্কতা জারি করেছে কমিশন। নতুন নিয়োগ বিধি অনুযায়ী, পরীক্ষার্থীরা ওএমআর-এর কার্বন কপি সঙ্গে করে বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন। প্যানেল এবং ওয়েটিং লিস্টের মেয়াদ থাকবে নিয়োগের প্রথম কাউন্সেলিংয়ের পরে এক বছর পর্যন্ত। তবে রাজ্য সরকারের আগাম অনুমতি নিয়ে তার মেয়াদ আরও ছ’মাস বৃদ্ধি করতে পারবে কমিশন।
- এসএসসি-র চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ওএমআর শিটে উত্তর ব্যতীত অন্য যে কোনও মন্তব্য বা ছবি আঁকা থাকলে পরীক্ষা বাতিল করা হবে। পাশাপাশি, উত্তরপত্রে কোনও অশ্লীল মন্তব্য, নিষিদ্ধ ছবি, বা বিশেষ প্রতীক চিহ্ন থাকলে, তা বিশেষ ভাবে চিহ্নিত করতে হবে। এই কাজ সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার ঘরের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরই করতে হবে। এমন ওএমআর শিট চিহ্নিত করে তা আলাদা খামে রাখতে হবে। প্রয়োজনে সেই পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল পর্যন্ত করবে কমিশন।
- বিধিতে এ-ও বলা হয়েছে, প্যানেলের মেয়াদ শেষের পরে দু’বছর ওএমআর শিট সংরক্ষণ করা হবে। ওএমআর শিটের স্ক্যান করা প্রতিলিপি প্যানেলের মেয়াদ শেষের ১০ বছর পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে।
- পরীক্ষার কিছু দিন পরে ‘আনসার কি’ প্রকাশ করা হবে এসএসসি-র ওয়েবসাইটে। পরীক্ষার্থীরা কার্বন কপির উত্তরের সঙ্গে তা মিলিয়ে নিতে পারবেন।
অ্যাডমিট কার্ড সংক্রান্ত তথ্য:
- পরীক্ষায় কারচুপি রুখতে প্রতিটি অ্যাডমিট কার্ডে বার কোড লাগানোর ব্যবস্থা করেছে এসএসসি। দেহতল্লাশির পাশাপাশি ওই কোড স্ক্যান করে তবেই পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হবে। সরকারি পরিচয়পত্র ছাড়া অন্য কোনও নথি নিয়ে পরীক্ষার হলে ঢুকতে পারবেন না পরীক্ষার্থীরা।
- এ ছাড়াও ফোন বা মূল্যবান সামগ্রী পরীক্ষার্থীর ব্যাগে থাকলে তা পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে রাখাতে হবে, সে জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকবে। পরীক্ষার্থীরা ওই কেন্দ্রের নিরাপত্তা আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলে বিশেষ স্থানে ব্যাগ রাখার জন্য টোকেন সংগ্রহ করে নিতে পারবেন।
রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এক্স হ্যান্ডেলে পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন শনিবার। তিনি লিখেছেন, পরীক্ষার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে পারেন, সে জন্য প্রশাসন ৬৩৬টি কেন্দ্রে নিরাপত্তা এবং স্বচ্ছতা সুনিশ্চিত করতে তৎপর।