দ্বাদশ পর্যন্ত বাংলা থেকেই পড়াশোনা। কিন্তু সর্বভারতীয় মেডিক্যাল প্রবেশিকা নিট ইউজিতে পাশ করে বাংলার বাইরেই পা রাখতে চান কৃতীরা। দেশের বিভিন্ন নামী মেডিক্যাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই মেধাতালিকার সেরাদের পছন্দের তালিকায় এগিয়ে।
শনিবার প্রকাশিত হয়েছে চলতি বছরের নিট ইউজি (ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট- আন্ডারগ্র্যাজুয়েট)-র ফলাফল। পশ্চিমবঙ্গ থেকে পরীক্ষার জন্য নাম নথিভুক্ত করেছিলেন ১,১০,৩৯৯ জন। পরীক্ষায় বসেন ১,০৬,৬৭৫ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৫,৯০,১৮। রাজ্য থেকে এ বছর মেধাতালিকায় রয়েছেন বেশ কিছু পড়ুয়া। যাঁদের মধ্যে কেউ বাংলা বোর্ড-এর অর্থাৎ উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ, আবার কেউ সিবিএসই বোর্ডের।
প্রথম ২০-র মেধাতালিকায় রয়েছেন বাংলার দু’জন। ১৬ তম স্থানে রচিত সিংহচৌধুরি এবং ২০ তম স্থানে রূপায়ণ পাল।
নিট ইউজি-তে রাজ্য থেকে শীর্ষ স্থানাধিকারী রচিত। পড়েছেন হরিয়ানা বিদ্যামন্দিরে। দিনের ৮-১০ ঘন্টা পরীক্ষার প্রস্তুতিতেই যেত। অবসরে বিনোদন বলতে বিভিন্ন টিভি শো, গল্পের বই আর রান্নাবান্না। রচিত বলেন, “এই ফল একেবারেই প্রত্যাশিত ছিল না। তাই ভীষণ খুশি হয়েছি।” ছেলের ভাল ফলে উচ্ছ্বসিত বাবা-মাও। কৃতিত্ব দিয়েছেন ছেলেকেই। বাবা শীর্ষেন্দু সিংহচৌধুরি বলেন, “এমস দিল্লি থেকেই ওর মেডিক্যাল পড়ার ইচ্ছে। তাই শেষ দু’বছর ও খুব খেটেছে।” রচিতের বরাবরই পছন্দ বায়োলজি। অন্য দিকে তাঁর ঠাকুমাও বর্তমানে শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় ভুগছেন। যা তাঁর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নে অন্যতম চালিকাশক্তি।
মেধাতালিকার ২০-তম স্থানে বর্ধমানের রূপায়ণ পাল। মাধ্যমিকে পঞ্চম, উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম স্থানাধিকারীর নিট ইউজিতেও তাকলাগানো ফল। রূপায়ণ ছোটবেলা থেকেই চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন বোনেন। তাই একাদশ শ্রেণি থেকেই পাখির চোখ ছিল নিট ইউজি। সে সময়ই শুরু প্রস্তুতি। পরীক্ষার ফল ভাল হবে আশা ছিল, তবে মেধাতলিকার ২০-তম স্থানে থাকবেন, তা আশা করেননি বলে জানান রূপায়ণ। কী ভাবে একের পর এক সাফল্য? কী ভাবেই বা প্রস্তুতি? তাঁর কথায়, “আসলে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যই আমি প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। সেটাই উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কাজে আসে। সারাদিনই পড়তাম। কখনও টিউশনে গিয়ে। আবার টিউশন থেকে ফিরে এসে বাড়িতেও চলত রিভিশন, মক টেস্ট।” আর পড়ার ফাঁকে? রূপায়ণ বলেন, “বন্ধুদের সঙ্গে বা বাবা-মার সঙ্গে কথা বলতে ভালবাসি। অবসরে পছন্দ খেলাধুলো আর গল্পের বই।” এর পর এমস দিল্লি থেকেই স্নাতকের ইচ্ছে তাঁর। পছন্দের বিষয় নিউরোলজি আর কার্ডিয়োলজি। রূপায়ণের বাবা-মা—দু’জনেই শিক্ষক। ছেলের সাফল্যে আপ্লুত তাঁরা। ছেলে বাড়ির বাইরে চলে যাবে বলে খানিক দুশ্চিন্তা থাকলেও ওর স্বপ্নপূরণে বরাবরের মতো সর্বতো ভাবে পাশে থাকতে চান তাঁরা।
মেধাতালিকার ১০৬ তম স্থানে রয়েছে অংশুমান সাঁই। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “আমি একেবারেই ভাবতে পারিনি এরকম ফল করতে পারবো। তাই ভীষণ খুশি।” আদতে ওড়িশার বাসিন্দা অংশুমান এমস ভুবনেশ্বরে পড়তে চান। পরীক্ষার জন্য শেষ দু’বছরে প্রস্তুতি নিলেও কখনওই টানা পড়াশোনা করতে ভালবাসতেন না তিনি। ভালবাসেন ক্রিকেট, ফুটবল এবং দাবা। অংশুমানের বাবা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, মা ঘর সামলান। সাফল্যের জন্য বাবা-মা এবং শিক্ষকদের সব কৃতিত্ব দিয়েছেন তিনি।
দেশের মধ্যে ১১০ তম স্থান দখল করে নিয়েছেন নীহার হালদার। বিধাননগরের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা। বরাবরই মেধাবী এই কৃতি। সিবিএসইতে রাজ্য থেকে প্রথম স্থানাধিকারী ছিলেন। দ্বাদশেও ৯৬.৬ শতাংশ নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলন। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতাই তাঁর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নকে আরও মজবুত করে। ছোট থেকে যতবারই অসুস্থতার জন্য হাসপাতাল গিয়েছেন, চিকিৎসকদের যাদু ছোঁয়ায় সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। মনে হয়েছে, নিজেও কারও জীবনে এই ভূমিকা পালন করতে পারেন। দুঃসময়ে মানুষের কাছে আশ্রয় হয়ে উঠতে পারেন। আর সেই ইচ্ছে পূরণের প্রথম ধাপে সফল নীহার। তিনি বলেন, “এখন এমস দিল্লি থেকে উচ্চশিক্ষা করতে চাই। ওখানে চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে নানা ধরনের গবেষণা হয়, সেটাও একটা বাড়তি আকর্ষণ।”
এ ছাড়াও মেধাতালিকায় রাজ্য থেকে আরও এক বাঙালি র্যাঙ্ক করেছেন। অনীক ঘোষ, রয়েছেন ৬৭তম স্থানে।
উল্লেখ্য, এ বছর ৪ মে নিট ইউজি-র আয়োজন করা হয়েছিল। দেশ এবং বিদেশের মোট ৫৬৬টি শহরে পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ৫,৪৬৮টি। এ বছর পরীক্ষার জন্য নাম নথিভুক্ত করেছিলেন ২,২৭,৬০৬৯ জন। পরীক্ষা দিয়েছিলেন ২,২০,৯৩১৮ জন। পুরুষ এবং মহিলা পরীক্ষার্থী ছিলেন যথাক্রমে ৯৬৫৯৯৬ এবং ১৩১০০৬২ জন। এ ছাড়া, রূপান্তরকামী পরীক্ষার্থী ছিলেন ১১ জন। সব মিলিয়ে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এ বারে ছিল কম।