অনলাইন গেম-এ আসক্তি বাড়ছে ক্রমশ। বাস, মেট্রোর কামরায় প্রায় সকলেই মুখ গুঁজে থাকেন পছন্দের লুডো কিংবা দাবায়। এমনকি, ঘর সাজানোর রকমারি ভাবনা কিংবা বুদ্ধিতে শান দেওয়ার পাজ়ল নিয়েও তাঁরা কাটিয়ে দেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বাবা-মা যতই বকাবকি করুন না কেন, নতুন প্রজন্মের কাছে এই গেমই হয়ে উঠতে পারে রোজগারের পথ। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের হিসাব অনুযায়ী, ৫০ কোটি গেমার রয়েছেন এই দেশে। তরুণেরাই তার ৪৩ শতাংশ।এই সংখ্যা দ্রুত ৭২ কোটির ঘর ছুঁতে চলেছে।
কিন্তু এই গেম নিয়ে কি পড়াশোনাও করা যায়? কারা পান গেমিং নিয়ে পড়ার সুযোগ? কোথায় পড়ানো হয়? প্রশ্ন অনেক, উত্তর মোটামুটি সহজই—
কোথায় পড়ানো হয়?
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইআইআইটি) নাগপুর, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ডিজ়াইন-এ গেমিং সংক্রান্ত কোর্স করানো হয়। এই দু’টি সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বেশ কিছু বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গেমিং বিষয়টি স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরে পড়ানো হয়।
যে কোনও বিষয়ে দ্বাদশ উত্তীর্ণ হওয়ার পর, গেমিংয়ের নানা বিষয় নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।
— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
খরচ কেমন?
স্নাতক স্তরে গেমিং, অ্যানিমেশন অ্যান্ড গেমিং, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড গেম ডেভেলপমেন্ট, গেম ডিজ়াইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, গেম আর্ট অ্যান্ড ডিজ়াইন নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে খরচ হতে পারে ৬ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা।
স্নাতকোত্তর স্তরে গেম ডিজ়াইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, কম্পিউটার গ্রাফিক্স অ্যান্স ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি, গেমিং, গেম ডেভেলপমেন্ট-এর মতো বিষয়ে কোর্স করানো হয়। কোর্সের চাহিদা অনুযায়ী খরচ ১ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
কোন দক্ষতার প্রয়োজন?
গেম তৈরির জন্য পাইথন, সি-এর মতো প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ়, ডেটা স্ট্রাকচার অ্যান্ড অ্যালগোরিদম, লাইভ স্ট্রিমিং-এর মতো বিষয়ে দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন।
বর্তমানে কৃত্রিম মেধা এবং মেশিন লার্নিং-এর কারণ গেমিং দুনিয়াতে সংযোজিত রয়েছে একাধিক নতুন বিষয়। গেম ডিজ়াইন বা ডেভেলপমেন্ট-এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ন্যারেটিভ ডিজ়াইন, ক্যারেক্টার ডিজ়াইন, টুডি বা থ্রিডি আর্টিস্ট, সাউন্ড ডিজ়াইন-এর মতো বিভাগও। এর জন্য প্রযুক্তিগত দক্ষতার সঙ্গে প্রয়োজন সৃজনশীল ভাবনাও। ডিগ্রি অর্জনের পর এই সমস্ত বিভাগেই চাকরির সুযোগ রয়েছে। তবে, তার জন্য নিজের তৈরি করা একাধিক মডেল গেম-এর নমুনা থাকা প্রয়োজন।
— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
কাজের সুযোগ কেমন?
সাধারণত কোনও গেম তৈরি হওয়ার পর তা কতটা সফল হল, তা পরীক্ষার জন্য ডিজ়াইনার বা ডেভেলপাররাই খেলেন। কিছু কিছু সংস্থা এ জন্য আলাদা গেম টেস্টার-ও রাখেন। তাঁরা সবুজ সঙ্কেত দিলে গেম বাজারে ছাড়া হয়।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা গেম খেলেন, এমন ব্যক্তিরাও চুক্তির ভিত্তিতে চাকরির সুযোগ পেয়ে থাকেন। বাস্তব নির্ভর গেমের ক্ষেত্রে গেমারের চাহিদার সামঞ্জস্য বুঝতে লাইভ স্ট্রিমিং-এর জন্য দরকার হয় গেমিং ইনফ্লুয়েন্সারদেরও। এই কাজের জন্য যাঁরা গেম খেলেন এবং সঠিক মতামত দিতে পারেন, তাঁদেরই নিয়োগ করা হয়। তাই এ ভাবেও নিছক শখকে পেশায় বদলানোর সুযোগ পেতে পারেন।