জয়েন্ট্র এন্ট্রাস এগজ়ামিনেশন (মেনস)-এর দ্বিতীয় সেশনের পরীক্ষায় রাজ্যে যুগ্ম ভাবে প্রথম হলেন অর্চিষ্মান নন্দী। অথচ এই পরীক্ষার প্রস্তুতি প্রায় নষ্ট হয়ে যেতে বসেছিল আচমকা দুর্ঘটনার কারণে। সর্বভারতীয় স্তরে ২৪ জন এনটিএ স্কোর ১০০ পার্সেন্টাইল পেয়েছেন, যাঁদের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন অর্চিষ্মান। দেবদত্তা মাঝিরও এনটিএ স্কোর ১০০ পার্সেন্টাইল। খড়্গপুরের চাঙ্গুয়াল গ্রামে অর্চিষ্মানের বাড়িতে এখন আনন্দের আবহ।
অর্চিষ্মানের বাবা মিঠুন নন্দী জানিয়েছেন, ২৯ জানুয়ারি প্রথম সেশনের পরীক্ষার তিন দিন আগেই দুর্ঘটনা ঘটে ছেলের। সপরিবারে কলকাতা যাওয়ার পথে উলুবেড়িয়া চেক পয়েন্টের কাছে সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তাঁদের গাড়ি। পেছন থেকে ডাম্পার এসে ধাক্কা মারলে গুরুতর আহত হয় পিছনের সিটে থাকা অর্চিষ্মান। সেই আতঙ্ক কাটিয়ে চিকিৎসা করিয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার জন্য তাঁরা উৎসাহ এবং সাহস যোগাতে থাকেন ছেলেকে। পেরেন্টাল কাউন্সেলিং-ও করান তাঁরা। একটি বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মী হিসাবে বর্তমানে ভুবনেশ্বরে কর্মরত মিঠুন। তিনি বলেন, “এত বড় দুর্ঘটনার পরও জেইই মেনসের প্রথম সেশনে ৯৯.৯৮৭৫৭ পার্সেন্টাইল স্কোর করেছিল অর্চিষ্মান। দ্বিতীয় সেশনের ফলাফলে রাজ্যের সেরা দু’জন কৃতী হিসাবে আমার ছেলে জায়গা করে নিয়েছে, এটাই আমার কাছে গর্বের।”

পড়াশোনার সঙ্গে গান-বাজনা বা খেলার অভ্যাসও রয়েছে। নিজস্ব চিত্র।
অর্চিষ্মানের মা অনিন্দিতা নন্দী বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের কর্মী। তিনি ছেলের এই সাফল্য উচ্ছ্বসিত। তিনি জানিয়েছেন, প্রাথমিক স্তরের পড়াশোনা বাংলা মাধ্যমে হলেও পরবর্তীতে সিআইএসসিই এবং সিবিএসই বোর্ডের অধীনে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করেছেন অর্চিষ্মান। একাধিক বার স্কুল এবং পড়াশোনার মাধ্যম বদলে গেলেও মেধার জোরে ছেলে নিজের লক্ষ্যে স্থির থেকেছে।
উল্লেখ্য, অনিন্দিতার বাবা বঙ্কিমবিহারী মাইতি আইআইটি খড়্গপুরের প্রাক্তনী ছিলেন। দাদুর কাছেই বেশির ভাগ সময়টা পড়াশোনা করেছেন অর্চিষ্মান। তাই অঙ্ক, পদার্থবিদ্যা, রসায়নে তিনি বরাবরই ভাল। পাশাপাশি, এর আগে আইসিএসই ২০২৩-এ ৯৯ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন খড়্গপুরের এই কৃতী।

সপরিবারে অর্চিষ্মান। নিজস্ব চিত্র।
নিজেকে অল রাউন্ডার হিসাবে তৈরি করতে চান অর্চিষ্মান। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে আইআইটি খড়্গপুরে পড়াশোনা করা তাঁর লক্ষ্য। কিন্তু পড়াশোনার সঙ্গে তবলা বাজানো, কবিতা লেখা এবং আবৃত্তি করা, নিয়মিত ভাবে ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, ফুটবল, ক্যারাম খেলায় তিনি নিজেকে ব্যস্ত রাখতে ভালোবাসেন। তাঁর কথায়, “শরীর সুস্থ থাকলেই মন সুস্থ থাকবে।” প্রসঙ্গত, দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইনের ‘এডুগ্রাফ এইট্টিন আন্ডার এইট্টিন’-এর ২০২৪-এর প্রথম ৫০ কৃতীদের দলেও জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি।
চলতি বছরের দ্বিতীয় সেশনের পরীক্ষা দিয়েছিলেন ৯,৯২,৩৫০ জন। সর্বভারতীয় স্তরে সব থেকে বেশি এনটিএ স্কোর ১০০ পার্সেন্টাইল পেয়েছেন রাজস্থানের পড়ুয়ারা। পশ্চিমবঙ্গ থেকে এই তালিকায় নাম রয়েছে অর্চিস্মান নন্দী এবং দেবদত্তা মাঝির।