সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কল্যাণে রাষ্ট্রের তরফে যে উদ্যোগ, তাকেই এককথায় জননীতি বা পাবলিক পলিসি বলা হয়। জেলা থেকে জাতীয় স্তরে জনস্বার্থে সার্বিক উন্নয়নের জন্যই জননীতি প্রণয়ন করা হয়। যা বাস্তবায়নের দায়িত্বও থাকে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের উপর।
জননীতি সংক্রান্ত পাঠক্রমের চাহিদা কেন বেড়েছে?
ক্রমশ প্রযুক্তির উন্নতি হচ্ছে। ডিজিটাল যুগে আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বেড়েছে জটিলতা। মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, চাকরির সমস্যা তো রয়েছেই। পাশাপাশি রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন, ডিজিটাল সুরক্ষার মতো নানা সমস্যা। সে সবের দ্রুত সমাধান করতে হলে প্রয়োজন যথাযথ নীতি প্রণয়ন। সে কাজ পরিচালনার জন্য প্রয়োজন দক্ষ নীতিনির্ধারক এবং বিশ্লেষক।
আবার সমাজসচেতন যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে সামাজিক বৈষম্য বিষয়ে নানা ধারণা কাজ করে। অনেকেই সমাজবদলের স্বপ্ন দেখেন। তাঁরা যদি প্রশাসকের ভূমিকা পালন করতে চান, তা হলে এই জননীতি বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। গত কয়েক বছরে জননীতি সংক্রান্ত কোর্সের চাহিদা তাই বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে চাকরির পরিসরও।
স্নাতক পাঠ্যক্রম—
দেশের সরকারি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এখনও স্নাতক স্তরে জননীতি সংক্রান্ত পাঠ্যক্রম চালু হয়নি। সাধারণত, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্নাতক পাঠ্যক্রমে এ বিষয়ে কিছু পাঠ দেওয়া হয় পড়ুয়াদের।
তবে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরে জননীতি পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
স্নাতকোত্তর কোথায় পড়ানো হয়?
স্নাতকোত্তর স্তরে দেশের একাধিক প্রতিষ্ঠানে পড়ানো হয় এ সংক্রান্ত নানা কোর্স। এর মধ্যে এক দিকে যেমন রয়েছে মাস্টার অফ আর্টস (এমএ)-এর কোর্স, তেমনই রয়েছে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট (পিজি) ডিপ্লোমা কোর্স বা এক্জ়িকিউটিভ পিজি ডিপ্লোমা কোর্সও।
যে সমস্ত নামী বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানে স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
১) জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়, নয়া দিল্লি।
২) টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্সেস, মুম্বই।
৩) অম্বেডকর বিশ্ববিদ্যালয়, দিল্লি।
৪) আইআইটি, বম্বে।
৫) আইআইএম, মুম্বই।
৬) আইআইএম, কলকাতা।
৭) আইআইএম, কোজ়িকোড়।
৮) আইআইটি, খড়্গপুর।
আরও পড়ুন:
স্নাতকোত্তরের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা—
যে কোনও বিষয়ে স্নাতক স্তরে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর থাকলেই পাবলিক পলিসি নিয়ে স্নাতকোত্তরে ভর্তির আবেদন করতে পারেন পড়ুয়ারা। যে সমস্ত পেশাদারেরা এ সংক্রান্ত কোর্স করতে চান, তাঁদের ক্ষেত্রে পেশাগত অভিজ্ঞতার সুনির্দিষ্ট মাপকাঠি থাকে। প্রয়োজন হয় জিআরই, জিম্যাট, আইইএলটিএস-এ প্রাপ্ত নম্বরও।
কী পড়ানো হয়?
সংশ্লিষ্ট পাঠক্রমে জননীতি সংক্রান্ত নানা তত্ত্ব যেমন পড়ানো হয়। তেমনি কী ভাবে জননীতি প্রণয়ন করা হয়, তা-ও শেখানো হয়। এ ছাড়া, পাঠক্রমে
১) জননীতি পরিকল্পনা,
২) নীতি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া, বিধিনিষেধ, তার সমাধান,
৩) সরকারি প্রতিষ্ঠান, প্রশাসনিক কাঠামো, ক্ষমতা বণ্টন,
৪) বিভিন্ন দেশের জননীতির তুলনামূলক আলোচনা,
৫) অর্থনৈতিক এবং সামাজিক নীতি,
৬) নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক এবং আইনি দিক,
৭) পরিসংখ্যান এবং তথ্য বিশ্লেষণ,
৮) নগর পরিকল্পনা নীতি,
৯) স্বাস্থ্য নীতি,
১০) গ্রামীণ উন্নয়ন নীতি,
১১) প্রযুক্তি সম্পর্কিত নীতি,
১২) কূটনীতি
১৩) ডিজিটাল গভর্ন্যান্স
১৪) সুরক্ষা নীতি
১৫) শিক্ষানীতি শেখানো হয়।
গবেষণার সুযোগ—
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে গবেষণার সুযোগও মিলতে পারে। পড়ুয়ারা ভর্তির সুযোগ পাবেন পিএইচডি প্রোগ্রামে।
চাকরির সুযোগ—
কোর্স শেষে পড়ুয়ারা সরকারি এবং বেসরকারি ক্ষেত্রের বহু সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ পেতে পারেন। কাজ করতে পারেন নীতি নির্ধারণ, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে।
পড়ুয়ারা বিভিন্ন সরকারি মন্ত্রক বা প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক পদে কাজ করতে পারেন। আবার ইউপিএসসি বা রাজ্যের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার মাধ্যমে নানা পদে চাকরির সুযোগ পেতে পারেন। এ ছাড়া, জাতিসঙ্ঘ, বিশ্ব ব্যাঙ্ক, ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড-এর মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে পারেন। পাশাপাশি, নানা স্বেচ্ছাসেবি সংস্থা, কর্পোরেট সংস্থার কর্পোরেট সোশ্যাল রেস্পন্সিবিলিটির জন্য, সংবাদসংস্থা-য় কাজেরও সুযোগ মিলবে। এ ছাড়া উচ্চতর শিক্ষার জন্য বা উদ্যোগপতি হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যও এই কোর্স পড়ুয়াদের সাহায্য করবে।
কোন কোন পদে চাকরির সুযোগ?
১) পলিসি অ্যানালিস্ট
২) প্রোগ্রাম বা প্রজেক্ট অফিসার
৩) লেজিসলেটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট
৪) রিসার্চ অফিসার
৫) কনসালট্যান্ট
৬) রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট
৭) পলিসি রিসার্চার
৮) প্রোগ্রাম ম্যানেজার
৯) পলিসি স্পেশ্যালিস্ট
১০) প্রোগ্রাম অ্যানালিস্ট
১১) পলিসি অ্যাডভোকেট
১২) পাবলিক অ্যাফেয়ার্স স্পেশ্যালিস্ট
১৩) পলিসি জার্নালিস্ট-সহ নানা পদে চাকরির সুযোগ মিলবে।