Advertisement
E-Paper

কলেজ পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যে নজর দিচ্ছে আইআইটি খড়্গপুর, কী হাল কলকাতার বিশ্ববিদ্যালয়গুলির?

সদ্য স্কুলের গণ্ডি পেরনো নবাগতদের মনে থাকে খানিক শঙ্কা ও ভীতির ছাপ। সে ক্ষেত্রে রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও ধীরে ধীরে নড়ে বসেছে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৫ ১৯:১১
প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

পড়াশোনার ইঁদুর দৌড় শুরু হয় সেই ছোটবেলায়। যদিও ইদানীং পড়ুয়াদের মানসিক চাপ কমাতে নানা পদক্ষেপের কথা ভাবা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই পঠনপাঠন এবং অন্য কার্যক্রমে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে, যাতে পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যে কোনও প্রভাব না পড়ে।

তবু, সমস্যা তো রয়েছেই। সদ্য স্কুল পেরিয়ে কলেজে আসা পড়ুয়াদের জন্য ‘র‌্যাগিং’ এক বিভীষিকা। গত তিন-চার দশকেও কমেনি দাপট। রাজস্থানের কোটা থেকে খড়্গপুর আইআইটি বা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়— একের পর এক পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যু, আত্মহত্যার ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে শিক্ষামহলকে। তার উপর রয়েছে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্লীলতাহানি বা ধর্ষণের মতো ঘটনা। নড়ে বসছেন কর্তৃপক্ষ।

গত মে মাসেই আইআইটি খড়্গপুরে আত্মহত্যা করেছেন ২২ বছরের এক পড়ুয়া। তার পর ১০ সদস্যের একটি কমিটি গড়েছেন কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি আরও একটি পদক্ষেপ করছে আইআইটি খড়্গপুর। নবাগতরা যাতে প্রতিষ্ঠানের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন, সে জন্য কৃত্রিম মেধানির্ভর (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে এখানে। পাশাপাশি চালু হবে ‘ক্যাম্পাস মাদার্স প্রোগ্রাম’। বিশেষ এই কর্মসূচির লক্ষ্য পড়ুয়াদের একাকিত্ব দূর করা। এ ক্ষেত্রে সহায়ক হবেন শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা।

প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর সুমন চক্রবর্তী বলেন, “শিক্ষিকারা অনেকেই মা, তাঁরাই পড়ুয়াদের হতাশা দূর করার জন্য এগিয়ে আসতে পারেন।” তবে, এই কর্মসূচিতে যাঁরা যোগ দিতে আগ্রহী হবেন, তাঁদের বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে হবে পেশাদার মনোবিদের কাছে। তার পর তাঁরাই পড়ুয়াদের নানা সমস্যার কথা শুনবেন। বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করবেন।

কিন্তু কী ভাবছে কলকাতার বিশ্ববিদ্যালয়গুলি?

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অমিতাভ দত্ত বলেন, “সারা দেশে যাদবপুরেই প্রথম কাউন্সেলিং সেন্টার তৈরি করা হয়েছিল। পড়ুয়াদের অনেকের ক্ষেত্রেই মানসিক স্বাস্থ্যসমস্যা তৈরি হতে পারে। কর্তৃপক্ষ পাশে থাকার চেষ্টা করেন সব সময়।”

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে নতুন পড়ুয়ারা ভর্তির হওয়ার পরই তিন সপ্তাহের ‘ইনডাকশন প্রোগ্রাম’-এর আয়োজন করা হয়। পড়াশোনা-গবেষণা সম্পর্কিত খুঁটিনাটি জানানোর পাশাপাশি স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্যও পাঠ দেওয়া হয় পড়ুয়াদের। গত কয়েক বছর ধরে যাদবপুরে চলছে ‘টিচার-মেন্টর প্রোগ্রাম’ও। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে প্রতি ২০-২৫ জন পড়ুয়া পিছু একজন শিক্ষক বা শিক্ষিকাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যক্তিগত নানা সমস্যার কথাও তাঁদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারেন পড়ুয়ারা। মেন্টর বা শিক্ষকের মনে হলে, কোনও পড়ুয়াকে তিনি কাউন্সেলিং সেন্টারে পাঠান। এর পর পড়ুয়ার মানসিক স্বাস্থ্যের কথা বিচার করে বিশেষজ্ঞরা তাঁকে ডিবেটিং সোসাইটি, মাউন্টেনিয়ারিং সোসাইটি, বা কালচারাল সোসাইটির মতো সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পরামর্শ দেন। এই সমস্ত সংগঠন চলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে।

প্রায় এ রকম ব্যবস্থা রয়েছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়েও। সেখানেও পড়ুয়াদের মনের খেয়াল রাখতে রয়েছেন অভিজ্ঞ কাউন্সেলর। চালু আছে ‘মেন্টর-মেন্টি’ প্রোগ্রাম। অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র-জুনিয়র ‘বন্ডিং’, এমনই দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনারের। তিনি বলেন, “আমাদের ক্যাম্পাসের পড়ুয়ারা অনেক সচেতন। পাশাপাশি, শিক্ষক-শিক্ষিকা, পড়ুয়া, শিক্ষাকর্মী প্রত্যেকেই প্রত্যেকের সাহায্য করেন। মনের হাত ধরে চলার ক্ষেত্রে তাই এখানে তেমন সমস্যা হয় না।” একইসঙ্গে তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় এই কর্মসূচিগুলি যথাযথ ভাবে কার্যকর হচ্ছে কি না, তা-ও প্রতি বছর খতিয়ে দেখা হয়।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বেশ কিছু ব্যবস্থাপনা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন, “আমাদের আলাদা ভাবে ‘মেন্টাল হেলথ কাউন্সেলিং সেন্টার’ নেই। তবে অন্য ব্যবস্থা রয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা মাঝেমধ্যে নানা সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করি।” জানা গিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরই তিনদিন ‘কমেন্সমেন্ট সেরিমনি’-র আয়োজন করা হয়। পড়ুয়াদের উজ্জীবিত করাই এই অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য। এ ছাড়া, প্রায় প্রতি বছর হয় ‘ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম’।

টেকনো ইন্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও রয়েছে ‘মেন্টরিং প্রোগ্রাম’। সেখানে শিক্ষকদের সঙ্গেই পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়েও আলোচনা করতে পারেন পড়ুয়ারা। এ ছা়ড়া, রয়েছে ‘মনসিজ সেন্টার’ এবং সাইকোলজি সেল। শিক্ষকেরা পড়ুয়াদের মধ্যে কোনও মানসিক উদ্বেগ বা সমস্যা দেখলে তাঁদের সেই সেল অথবা ‘মনসিজ সেন্টার’-এ পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সমীরণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা প্রতিনিয়ত খেয়াল রাখার চেষ্টা করি, কার কী সমস্যা হচ্ছে। এর পর সেই মতো ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়।”

তবে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যরক্ষার বিষয়ে আলাদা করে কোনও ব্যবস্থা নেই বলেই জানা গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবাশিস দাস বলেন, “আলাদা কোনও ব্যবস্থা না থাকলেও মনোবিদ্যা বিভাগে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। যেখানে শুধু পড়ুয়ারা নন, যে কোনও ব্যক্তি মানুষ আসতে পারেন।” তবে রেজিস্ট্রারের দাবি, প্রয়োজন মনে হলে ভবিষ্যতে এ বিষয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।

Indian Institute of Technology Kharagpur students mental health mental health care in WB Universities Jadavpur University
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy