সদ্যোজাতকে কোলে নিয়েই নথি যাচাইয়ের জন্য ছুটে এসেছেন সুপর্ণা পাল, পিয়ালি ঘোষ। বিশেষ ভাবে সক্ষম সনৎ হালদারও লাঠি সম্বল করে মুর্শিদাবাদ থেকে এসেছেন। ২০১৬ সালের পর ২০২৫-এ তাঁরা আরও একবার নিয়োগের পরীক্ষায় বসেছিলেন। এঁরা সকলে শিক্ষক হতে চান। কিন্তু লাগাতার দুর্নীতির অভিযোগ, মামলার জটে কেটেছে দীর্ঘ ন’বছর। অবশেষে তাঁরা ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাক পেয়েছেন।
মঙ্গলবার নথি যাচাইকরণের জন্য মুর্শিদাবাদ, হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে বহু চাকরিপ্রার্থী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এসএসসি-র দফতরে এসেছেন। তাঁদের প্রত্যেকেই চাকরি পাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। ২০১৬-র প্রার্থী ঝুনু ভদ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “নথি যাচাই পদ্ধতিতে কোনও ত্রুটি রাখছে না কমিশন। সবই খুঁটিয়ে দেখছে। এত লড়াই করে ক্লান্ত, মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছি। তাই শেষ পর্যন্ত সব ঠিক হবে কি না, বুঝতে পারছি।”
বিভিন্ন জেলা থেকে নথি যাচাইয়ের জন্য এসেছে পুরোনো চাকরিপ্রার্থীরা। নিজস্ব চিত্র।
চাকরিহারা শিক্ষকদের আন্দোলনের অন্যতম মুখ মেহবুব মণ্ডলের দাবি, এত নথি যাচাই করা হচ্ছে। তার পর যেন সকলেই চাকরিটা পায়। কেউ যেন বাদ না পড়ে।
পুরোনো প্রার্থীরাও চাকরি পান, চাইছেন নতুনেরা। তবে, চাকরি শেষ পর্যন্ত পাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে তাঁদের মনেও। নতুন চাকরিপ্রার্থী সুখেন্দু ঘোষ বলেন, “নিয়ম মেনেই পরীক্ষা দিয়েছি। নথি যাচাইয়ের জন্য ডাকও পেয়েছি। কিন্তু অভিজ্ঞতা নেই, তাই ডেমোনস্ট্রেশনের ১০ নম্বর পাব না। এতে নতুনরা কতটা সুযোগ পাবেন, সেটা বুঝতে পারছি না। যদি সরকার আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করে, তা হলে সকলেই সমান ভাবে সুযোগ পাবেন।”
বুধবার স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ইংরেজি বিষয়ের চাকরিপ্রার্থীদের নথি যাচাই হতে চলেছে। প্রায় ১,২০০ প্রার্থীকে ডেকে পাঠিয়েছে কমিশন। মঙ্গলবার নথি যাচাই প্রক্রিয়ায় যোগ দিয়েছিলেন ৭০০-র বেশি প্রার্থী। তবে, এ দিন অনুপস্থিত ছিলেন ৬ জন। শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, চলতি সপ্তাহের শেষে নবম ও দশমের পরীক্ষার ফল প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে।
এসএসসি মঙ্গলবার প্রায় ৭০০-র বেশি চাকরিপ্রার্থীকে নথি যাচাইয়ের জন্য ডেকে পাঠিয়েছে। তাঁদের ইন্টারভিউয়ের জন্য বেছে নিয়েছে কমিশন। পুরনো চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে সুযোগ পেয়েছেন নতুনরাও। তবে, অভিযোগ, সেই তালিকায় বেশ কিছু ‘অযোগ্য’ বা ‘দাগি’ প্রার্থীদের নামও রয়েছে। যদিও কমিশনের তরফে বারবার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, কোনও ‘দাগি’র নাম থাকলে তা নথি যাচাইকরণের সময় বাদ দেওয়া হবে। সেই কারণেই ইন্টারভিউয়ের আগে নথি যাচাই করা হচ্ছে।
সমস্ত নথি দেখতে চাইছে কমিশন। নিজস্ব চিত্র।
মঙ্গলে কমিশনের দফতরে ১৫ টি আলাদা আলাদা টেবিল ১০০ জন করে প্রার্থীর নথি যাচাই করা হচ্ছে। তবে, নথি যাচাইয়ের পর তার কোনও ‘রিসিপ্ট কপি’ প্রার্থীদের দেওয়া হয়নি, বদলে কর্মরত আধিকারিকেরা একটি খাতায় তাঁদের সই করতে বলেছেন।
বিশেষ ভাবে সক্ষম চাকরিপ্রার্থী সনৎ-এর কথায়, “২০১৬ সালে একবার আমি পরীক্ষায় বসে ছিলাম। সে বার কোনও সুযোগ পাইনি। তারপর দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষা হয়নি, ইচ্ছে থাকলেও শিক্ষকতার সুযোগ পাইনি। টিউশন পড়াতাম, কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য সেই সুযোগও কমেছে। ৩৮ বছর হয়ে গেছে, এ বার না পেলে ভাগ্যকে মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।”
সদ্যোজাতকে কোলে নিয়ে পিয়ালি বলেন, “২০১৬-র পর ২০২৫-এও পরীক্ষা দিলাম অসুস্থ অবস্থাতেই। নথি যাচাইয়ের জন্য ডাক আসায় এক মাসের সন্তানকে সঙ্গে নিয়েই আসতে হয়েছে। এত কিছুর পর চাকরিটা পাবো তো?”
উত্তরের আশায় বাকিরাও।