পুজোর বোনাস-সহ একাধিক বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়াল কলকাতার পাঠভবন স্কুলের কর্মচারী ইউনিয়ন। মঙ্গলবার এ বিষয়ে স্কুলেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন চতুর্থ শ্রেণির এক দল কর্মী। স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয় ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষিকার ঘরে। অভিযোগ, এর পরই পুলিশ ডেকে তাঁদের হঠিয়ে দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। দাবি করা হয়, ফের এমন বিক্ষোভ দেখালে গ্রেফতার করা হবে।
ঘটনার সূত্রপাত গত বছর। চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের অভিযোগ ২০২৪ সালের পর থেকেই তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে, খর্ব করা হচ্ছে অধিকার। অভিযোগ, গত বছরই তাঁদের পুজো বোনাস এক ধাক্কায় অনেকখানি কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এর বিরুদ্ধে তাঁরা স্কুলে বিক্ষোভ দেখান। বাধ্য হয়েই কর্তৃপক্ষ সে বার পুরনো হারে বোনাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এ বার ফের গত বছরের মতো কম হারে বোনাস পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই।
আরও পড়ুন:
শুধু তাই নয়, কর্মচারীদের অভিযোগ, মহিলা কর্মচারীদের বার্ষিক ছুটি অনৈতিক ভাবে কাউকে কিছু না জানিয়ে ৪০ দিন থেকে কমিয়ে ১৫ দিন করে দেওয়া হয়েছে। শুধু মাত্র হোয়াটস্অ্যাপ করেই এ বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর বিরুদ্ধে তারা জোরালো আন্দোলন করবেন বলেও জানিয়েছে কর্মচারী সংগঠন।
জানা গিয়েছে, এই চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের মধ্যে ২২ জন স্থায়ী কর্মী, ১১ জন চুক্তিভিত্তিক। তাঁদের অভিযোগ, নানা ভাবে মানসিক হেনস্থা করে থাকেন কর্তৃপক্ষ। মহিলা কর্মীদের কাজের সময় বদলে দেওয়া হয় যখন তখন। অনুষ্ঠান উপলক্ষে অতিরিক্ত কাজের বিনিময়ে কিছু টাকা দেওয়া হয় পুরুষ কর্মীদের, কিন্তু মহিলাদের দিতে অস্বীকার করা হয়।
আরও পড়ুন:
যদিও এ সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন পাঠভবনের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষিকা ভারতী চট্টোপাধ্যায়। পুজো বোনাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সরকারি নিয়ম অনুযায়ী উৎসবভাতা হিসাবে ৬,৮০০ টাকা পাওনা হয়। আমরা ইতিমধ্যে চুক্তিভিত্তিক মহিলা কর্মচারীদের ১০ হাজার টাকা, গ্রুপ-সি কর্মীদের ২০ হাজার টাকা, গ্রুপ-ডি কর্মীদের ২৫ হাজার টাকা দিয়েছি। ওঁরা দাবি করছেন, এই ভাতা ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা করতে হবে। এটা অসম্ভব।”
ছুটি প্রসঙ্গেও তিনি জানান, কোনও ভাবেই বার্ষিক ৪০ দিন ছুটি পাওনা হতে পারে না। কর্মচারীদের দাবিকে অনৈতিক বলেই দাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। এ দিন ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষিকার কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয় আন-এডেড ইনস্টিটিউশনস (এডুকেশনাল) ওয়র্কস অ্যান্ড এমপ্লয়িজ় ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শান্তনু সেনগুপ্তের নামে। এ প্রসঙ্গে সংগঠনের সভাপতি মধুজা সেনরায় বলেন, “পাঠভবনে অনৈতিক পরিচালন সমিতি কাজ করছে, যার কোনও আইনি ভিত্তি নেই। নানা অছিলায় কর্মচারীদের অধিকার হরণ করা হচ্ছে। আজ পুলিশ ডেকে কর্মচারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতে পাঠভবনের কর্মীরা ভয় পেয়ে পিছিয়ে আসবেন না।” তাঁর দাবি, আলোচনায় কাজ না হলে আন্দোলনের ঝাঁঝ আরও বাড়বে।