সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে একুশে জুলাইয়ের বিশাল সমাবেশ ছিল কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলায়। আর সকাল থেকেই রাস্তায় উধাও বাস বা অটো। রাস্তায় যে ক’টি বাস দেখা গেছে, তাতে শাসকদলের দলীয় কর্মী সমর্থকদের ভিড়। রাস্তায় যানবাহন কম থাকায়, সময় মতো স্কুল পৌঁছোতে পারল না বহু ছাত্র-ছাত্রী। আবার অনেকে স্কুলে এলেও মিড ডে মিলে ডিম, ডাল, ভাত সয়াবিনের বদলে জুটল কেক ও ঠান্ডা পানীয়।
প্রধান শিক্ষক সংগঠনের রাজ্যর সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, ‘‘শহর থেকে শহরতলি এমনকি জেলাতেও সর্বত্রই বাস ছিল কম। নিত্যযাত্রীদের চলাফেরার জন্য অন্যান্য যানবাহনও বেশি চোখে পড়েনি। ফলে স্কুলের জন্য বেরিয়েও গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে পড়ুয়াদের। স্কুলের সময় পেরিয়ে যাওয়ায়, ফিরে যেতে হয়েছে বহু পড়ুয়াকে। এটা পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে একটা হয়রানি।’’
মিড ডে মিলের রান্নায় শিক্ষকরা। নিজস্ব চিত্র।
বেসরকারি স্কুলগুলি এই সমাবেশের কথা মাথায় রেখে আগে থেকে অনলাইন ক্লাস করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আবার কোনও কোনও স্কুল মর্নিং শিফটে ক্লাসের পর দ্রুত ছুটি ঘোষণা করেছে। কিন্তু খোলা ছিল রাজ্যের সমস্ত সরকারি, সরকার পোষিত এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলি।
শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে ১০০ বছরের পুরনো স্কুল পার্ক ইনস্টিটিউশন। যেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা ৫০০র বেশি। কিন্তু সোমবার উপস্থিত রইল মাত্র ৭৫ জন। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ছাত্র এসেছিল ২৪ জন।
পার্ক ইনস্টিটিউশন এর প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা বলেন, ‘‘শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে স্কুল হওয়ায় শুধু আশপাশের পড়ুয়া নয়। দূর থেকেও অনেক পড়ুয়া এই স্কুলে পড়তে আসে। যাদের বাড়ি থেকে স্কুল হাঁটা পথে সেই সমস্ত পরিবারের পড়ুয়ারা এসেছিল।’’
উত্তরের মতো দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর এলাকায় সকাল থেকে দফায় দফায় মিছিলকে ঘিরে ছিল যানজট। অনেক অভিভাবকই সন্তানদের পাঠাতে চাননি স্কুলে। দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম স্কুল ভবানীপুর মিত্র ইনস্টিটিউশনে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ১২০০। ক্লাসে উপস্থিত ছিল মাত্র ১০৫ জন। পড়ুয়াদের মিড ডে মিলে খাবার অন্যান্য দিনের তুলনায় ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। দেওয়া হল শুকনো খাবার কেক, বিস্কুট ও ঠান্ডা পানীয় জুস।
এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাজা দে বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলটা যে হেতু ভবানীপুরে। হাজরা, রাসবিহারী, কালীঘাট থেকে প্রচুর মিছিল ধর্মতলার উদ্দেশে যায়। তারপর এই রাস্তায় কোন গাড়ি চলে না। বহু পড়ুয়া রয়েছে যারা বজবজ, মেটিয়াবুরুজ, বাটানগর, ঠাকুরপুকুর থেকে এখানে পড়তে আসে। বাস না থাকায় তাঁরা কেউ আসতে পারেনি।’’
উত্তর ২৪ পরগনার লেকটাউনের বাঙুর এলাকার নারায়ণার নারায়ণদাস বাঙ্গুর স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ১৩২৫। স্কুলে এল মাত্র ৩২৫ জন পড়ুয়া। স্কুলে মিড ডে মিলে যে রাঁধুনি থাকেন তাঁর সকাল ও দুপুর মিলিয়ে ৯ জন। এদিন তাদের মধ্যে এসেছিল মাত্র চারজন। দুপুরে এসেছিল একজন। তাই পড়ুয়াদের মিড ডে মিলের খাবার রান্না ও পরিবেশনে এগিয়ে আসে শিক্ষকরাও।
দক্ষিণ কলকাতা চেতলা বয়েজ স্কুলে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া সংখ্যা ১১৮। উপস্থিত ছিল মাত্র ৭০ জন। প্রধান শিক্ষক শুভ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘‘উপস্থিতির হার কম ছিল। পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে ভেবেছিলাম যে এ বারে শুকনো খাবার পাঠাবে। কিন্তু মিড ডে মিলে যা খাবার আসে তা পাঠানো হয়েছিল।’’