গত কয়েক বছরে শিক্ষা ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স ও ডেটা সায়েন্স-এর চাহিদা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় সমস্ত চাকরিই তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে। অনেকাংশেই এগুলি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডেটা সায়েন্স দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সেই চাহিদার কথা মাথায় রেখেই ২০২৩ সাল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাঠ্যক্রমে যুক্ত হয়েছে এই দু’টি বিষয়। কিন্তু স্কুল পেরোনোর পর এই বিষয়গুলি নিয়ে পড়ার সুযোগ মেলে কোথায় কোথায়, পেশাগত সুযোগই বা কেমন, দেখে নেওয়া যাক।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স বা এআই):
এটি কম্পিউটার সায়েন্স-এরই একটি বিভাগ। উন্নত ধরনের এআই যন্ত্র তৈরি করতে সাহায্য করে। সে সব যন্ত্র নিজেরা শিখতে এবং নিজেদের শেখাতে পারে। যাতে তারা মানুষের থেকে অনেক কম সময়ে, অনেক বেশি তথ্য নিয়ে কাজ করতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে আধুনিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নত করা সম্ভব। একই ভাবে সম্ভব হাসপাতাল তৈরি, কৃষিকাজ এবং খাদ্য সরবরাহের উন্নতি, উদ্বাস্তু পুনর্বাসনে সাহায্য করা, এবং পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণের মতো বিষয় সহজ করা। এই কোর্সের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক ভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়টির উপর জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন। মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শেখার সুযোগ থাকে এবং ব্যবহারিক অনুশীলনেরও সুযোগ এ ক্ষেত্রে থাকতে পারে।
ডেটা সায়েন্স:
এই বিষয়টিও কম্পিউটার সায়েন্সের একটি অংশ। নেটমাধ্যমে কোনও একটি বিষয় বা বস্তুর খোঁজ করার পর, সেই বিষয় বা বস্তু সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য দেখা যায় নেটমাধ্যমের পেজ-এ। তখন আর খোঁজও করতে হয় না। এই কাজটি করে ডেটা সায়েন্স-এর সাহায্যে। ব্যবসায়িক দক্ষতা, মেশিন লার্নিং কৌশল, অ্যালগরিদম এবং গণিতের মিশ্রণে ডেটা সায়েন্স অনেক তথ্য বা ডেটা-র মধ্যে থেকে নিখোঁজ তথ্যগুলি খুঁজে পেতেও সহায়তা করে। ডেটা সায়েন্স-এর পাঠ্যক্রম মূলত ৩টি বিষয় নিয়ে গঠিত। বিগ ডেটা, মেশিন লার্নিং এবং ডেটা সায়েন্স মডেলিং। এর মধ্যে থাকে, পরিসংখ্যান, কোডিং, বিজনেস ইনটেলিজেন্স, ডেটা স্ট্রাকচার, গণিত, মেশিন লার্নিং এবংঅ্যালগরিদম।
আরও পড়ুন:
রাজ্যে কোন কোন প্রতিষ্ঠানে পড়ানো হয়—
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় (ডেটা সায়েন্সে মাস্টার অফ টেকনোলজি ডিগ্রি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে স্পেশালাইজ়েশন পড়ার সুযোগ)।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (মাস্টার অফ কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন পড়ার সুযোগ)।
রাজ্যের মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি (ব্যাচেলর অফ টেকনোলজি/ মাস্টার অফ টেকনোলজি/ স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা পড়ার সুযোগ)।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (আইআইটি), খড়্গপুর (বিভিন্ন গবেষণামূলক কোর্স ও উচ্চ স্তরে পড়ার সুযোগ থাকে)।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (আইআইইএসটি), শিবপুর (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা , মেশিন লার্নিং ও ডেটা সায়েন্স ভিত্তিক কোর্স পড়ার সুযোগ থাকে)।
এই প্রতিষ্ঠানগুলিতে পড়ার জন্য অনেক কোর্সের ক্ষেত্রে গ্র্যাজুয়েট অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট উত্তীর্ণ হতে হয়। এ ছাড়াও দেশের বাইরেও এই বিষয় দু’টি নিয়ে পড়ার সুযোগ থাকে। অনলাইন সার্টিফিকেট কোর্সের মধ্যে দিয়েও এই বিষয়গুলির সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব।
চাকরির কী সুযোগ রয়েছে—
বর্তমানে প্রায় সব পেশার ক্ষেত্রই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডেটা সায়েন্স নির্ভর। ডিগ্রি অর্জনের পর নানা আইটি সংস্থা, ব্যাঙ্ক, ই-কমার্স ক্ষেত্র, গবেষণার সংক্রান্ত কাজে যুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকে। ডেটা সায়েন্টিস্ট, ডেটা অ্যানালিস্ট, রিসার্চ সায়েন্টিস্ট-সহ আরও পদে যুক্ত হয় কাজ করার সুযোগ থাকে। এ ছাড়াও যদি অধ্যাপনার ইচ্ছে থাকে তা হলে এই বিষয় ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী অধ্যাপকের কাজে যুক্ত হওয়া যায়।