Advertisement
E-Paper

ভূকম্পে মৃত বেড়ে ৩৭২৬, বাড়ছে জল-খাবার-ওষুধের সঙ্কটও

সারা রাত জেগে রইল কাঠমান্ডু। চার দিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। শহর জুড়ে বিদ্যুত্ নেই কোথাও। কাছাকাছি সব জায়গাতেই ঘরদোর, দেওয়াল, স্থাপত্যের ভাঙাচোরা বা ধসে পড়া অবস্থা। শহরের যেখানে যেটুকু ফাঁকা রয়েছে সেখানে তৈরি হয়েছে সব অস্থায়ী আস্তানা। রাস্তাঘাটের উপরে নানা রঙের প্লাস্টিক খাটানো তাঁবু। এর মধ্যেই নেমেছে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। সঙ্গে ফের কম্পনের আতঙ্ক। আর এ ভাবেই ধ্বংসস্তূপের ভেতর ভুতুড়ে একটা রাত কাটালো কাঠমান্ডু।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ১৩:০১
তাঁবুর আশ্রয়ে বিপর্যস্ত জীবন। ছবি: এএফপি।

তাঁবুর আশ্রয়ে বিপর্যস্ত জীবন। ছবি: এএফপি।

সারা রাত জেগে রইল কাঠমান্ডু।

চার দিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। শহর জুড়ে বিদ্যুত্ নেই কোথাও। কাছাকাছি সব জায়গাতেই ঘরদোর, দেওয়াল, স্থাপত্যের ভাঙাচোরা বা ধসে পড়া অবস্থা। শহরের যেখানে যেটুকু ফাঁকা রয়েছে সেখানে তৈরি হয়েছে সব অস্থায়ী আস্তানা। রাস্তাঘাটের উপরে নানা রঙের প্লাস্টিক খাটানো তাঁবু। এর মধ্যেই নেমেছে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। সঙ্গে ফের কম্পনের আতঙ্ক। আর এ ভাবেই ধ্বংসস্তূপের ভেতর ভুতুড়ে একটা রাত কাটালো কাঠমান্ডু।

সোমবার সকাল থেকে বৃষ্টি যদিও থেমেছে। উঠেছে ঝকঝকে রোদ্দুরও। প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী, মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭২৬। এ ছাড়াও এভারেস্টের বেসক্যাম্পে মারা গিয়েছেন ২২ জন। আহত প্রায় সাত হাজার। কোনও হাসপাতালেই জায়গা নেই। ন্যূনতম চিকিত্সা পরিষেবা দিতে মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে অস্থায়ী তাঁবুর ভিতরেই খোলা হয়েছে অপারেশন থিয়েটার।

জল নেই। ওযুধ নেই। খাবার নেই। ওষুধের দোকান থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান— সবই বন্ধ। নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কর্তা লক্ষ্মীপ্রসাদ ঢকলের কথায়: ‘‘কোথাও বিদ্যুত্ নেই। নেই জলও। এই দুই পরিষেবা জরুরি ভিত্তিতে স্বাভাবিক করাই আমাদের প্রাথমিক লক্ষ। তবে খাদ্যের জোগান ঠিক রাখাটাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। দোকানিরা তো দোকান খুলতে পারছেন না! ফলে, খাবারের সঙ্কট দেখা দিতে পারে।’’

এরই মধ্যে কম্পন এবং সঙ্কটের আশঙ্কায় শহর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার হিড়িক দেখা দিয়েছে। একটু নিশ্চিত আশ্রয়ের খোঁজে শ’য়ে শ’য়ে মানুষ কাঠমান্ডু থেকে চলে যেতে চাইছেন আরও ফাঁকা জায়গায়। যেখানে বেঁচে থাকার আতঙ্ক অন্তত কিছুটা কমবে! মুক্ত আকাশের নীচে দু’রাত কাটানোর পর তাঁরা আর থাকতে চাইছেন না এই মৃত্যু উপত্যকায়। শহর থেকে বাইরে যাওয়ার রাস্তাগুলিতে সকাল থেকেই তাই ভিড় জমেছে। বাস, ট্রাক, ছোট গাড়ি— সবেতেই ভিড়। কোলে-কাঁখে শিশুদের দেখা গিয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। কাঠমান্ডুতে একটি মুদির দোকান চালান কৃষ্ণ মুক্তারি। তিনিও শহরছাড়াদের দলে। বললেন, ‘‘আমরা পালাচ্ছি। এখানে কী করে থাকব? বাচ্চা রয়েছে। রাতে তাদের টানাহেঁচড়া করা সম্ভব নয়!’’

আতঙ্কে সারা রাত ঘুমোতে পারেননি বছর চৌত্রিশের রবি শ্রেষ্ঠা। পেশায় ব্যবসায়ী। বললেন, ‘‘বাড়ি দুলছে। বৃষ্টির জল ঢুকে পড়ছে। তার মধ্যে কখন ফের কেঁপে উঠবে রয়েছে সেই আতঙ্ক। কী করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।’’ এর পরেই তাঁর সংযোজন, ‘‘ভগবান কেন আমাদের এমন ভোগান্তি দিতে চাইছেন, জানি না!’’

এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র কাঠমান্ডুতেই মারা গিয়েছেন প্রায় দেড় হাজার মানুষ। সিন্ধুপাল চকে মৃত ৮৭৫ জন। প্রশাসনের আশঙ্কা এই সংখ্যা আরও বাড়বে। দেহ সত্কার করতে গণচিতার আয়োজন করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশের উদ্ধারকারী দল পৌঁছেছে নেপালে। ফিল্ড হাসপাতাল, ওষুধ, কম্বল, প্রায় ৫০ টন জল, ২২ টন খাবার এবং অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে ভারত থেকে ১৩টি সেনা বিমান পাঠানো হয়েছে। এর পাশাপাশি জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর প্রায় ৭০০ সদস্যও সেখানে পৌঁছেছেন।

চিন থেকে আপত্কালীন সাহায্য নিয়ে ৬০টি দল পাঠানো হয়েছে। পাকিস্তান প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, চারটি সি-১৩০ বিমান নেপালে পাঠাচ্ছে তারা। ৩০ বেডের একটি ফিল্ড হাসপাতাল, অনুসন্ধান এবং উদ্ধারকারী দল-সহ নানা ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ওই বিমানগুলির এ দিন পৌঁছনোর কথা। পেন্টাগনের তরফে জানানো হয়েছে, ৭০ জনের এক দল নিয়ে মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি বিমান এ দিন কাঠমান্ডু পৌঁছেছে। নেপালের অনুরোধে অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন এবং নিউজিল্যান্ডও বিশেষজ্ঞ উদ্ধারকারী দল পাঠাচ্ছে সেখানে।

এ দিন লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ জানিয়েছেন, ভারতে ভূমিকম্পে এখনও পর্যন্ত ৭২ জনের প্রাণ গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৫৬ জন বিহারের, উত্তরপ্রদেশের ১২, পশ্চিমবঙ্গের তিন এবং রাজস্থানের এক জন রয়েছেন। তাঁর আরও দাবি, এ দিন সকাল পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার ভারতীয়কে নেপাল থেকে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এ ছাড়াও নেপালে আটকে পড়া বিদেশিদের ভারতে আসার জন্য বিশেষ ‘ফ্রি ভিসা’র ব্যবস্থাও করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাজনাথ। নেপালের ত্রাণকার্যে সাংসদদের এক দিনের বেতন দিয়ে সাহায্য করতে লোকসভায় এ দিন অনুরোধ করেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু। সভার প্রত্যেকে বিষয়টিতে সম্মত হয়েছেন বলে সূত্রের খবর।

nepal death toll 3218 earthquake death toll crossed 3000 nepal food medicine crisis nepal is hell nepal water crisis earthquake latest news latest bengali news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy