Advertisement
E-Paper

ভয়াল কম্পনে নেপাল যেন ধ্বংস উপত্যকা, মৃত বেড়ে ১৫০০

ভূমিকম্পে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে হু হু করে। শনিবার রাতের মধ্যেই সংখ্যাটা ১৫০০-এ পৌঁছেছে বলে নেপাল প্রশাসন সূত্রে খবর। তারা আরও জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে। আহতের সংখ্যা নিয়ে এখনও কোনও নিশ্চিত তথ্য মেলেনি। তবে সংখ্যাটা হাজারের কম নয়। ভূমিকম্পে শনিবার সকালেই কেঁপে ওঠে গোটা নেপাল। ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে-র (ইউএসজিএস) এক কর্তা জানিয়েছেন, রিখটার স্কেলে ওই কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৮। এর পরেও বেশ কয়েক বার কেঁপে ওঠে গোটা দেশ। ভূমিকম্পের আঁচ পড়ে ভারত-সহ পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং চিনেও। কম্পনের উত্সস্থল কাঠমান্ডু থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে লামজুং।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৫ ১৭:১৬
ভূমিকম্পের পরিণতি। ছবি: রয়টার্স।

ভূমিকম্পের পরিণতি। ছবি: রয়টার্স।

ভূমিকম্পে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে হু হু করে। শনিবার রাতের মধ্যেই সংখ্যাটা ১৫০০-এ পৌঁছেছে বলে নেপাল প্রশাসন সূত্রে খবর। তারা আরও জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে। আহতের সংখ্যা নিয়ে এখনও কোনও নিশ্চিত তথ্য মেলেনি। তবে সংখ্যাটা হাজারের কম নয়।

ভূমিকম্পে শনিবার সকালেই কেঁপে ওঠে গোটা নেপাল। ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে-র (ইউএসজিএস) এক কর্তা জানিয়েছেন, রিখটার স্কেলে ওই কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৮। এর পরেও বেশ কয়েক বার কেঁপে ওঠে গোটা দেশ। ভূমিকম্পের আঁচ পড়ে ভারত-সহ পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং চিনেও। কম্পনের উত্সস্থল কাঠমান্ডু থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে লামজুং। কম্পনের জেরে নেপালের বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। তবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঠমান্ডু। কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দর থেকে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলিও বিভিন্ন শহর থেকে তাদের কাঠমান্ডুগামী সমস্ত উড়ান বাতিল করে দেয়।

ইউনেস্কো-র ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা পাওয়া কাঠমান্ডুর দরবার স্কোয়্যার সম্পূর্ণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাঠমান্ডুর মুখ্য আকর্ষণ ধারারা মিনারও ভেঙে পড়েছে। সেখানে আটকে পড়েন বহু পর্যটক। ঘন বসতিপূর্ণ এই শহরে প্রচুর বাড়ি ভেঙে পড়ে। বেশ কিছু রাস্তায় দেখা দেয় গভীর ফাটল। নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, শুধুমাত্র কাঠমান্ডুতেই বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নেপালের প্রেসিডেন্ট রামবরণ যাদবের সঙ্গে কথা বলেছেন। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা এই মুহূর্তে দেশের বাইরে রয়েছেন। মোদীর সচিবালয় সূত্রে খবর, তিনি কৈরালার সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। নেপালের পাশাপাশি ভারতের বেশ কিছু জায়গায় এই ভূমিকম্পের প্রভাব পড়ে। মোদী বেশ কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গেও টেলিফোনে কথা বলেন।

ভূমিকম্পের উত্সস্থল লামজুং আদতে পোখরা উপত্যকার মধ্যে পড়ে। সেখানে ক্ষয়ক্ষতির কথা জানাতে গিয়ে নেপাল পুলিশের এক মুখপাত্র কমল সিংহ বান বলেন, ‘‘কম ঘনবসতিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও পোখরায় বেশ কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে। শুধুমাত্র গোর্খা জেলাতেই ১০-১২ জন প্রাণ হারিয়েছেন।’’ ওই এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় হতাহতের সংখ্যা নির্দিষ্ট ভাবে জানানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে, তথ্য জোগাড়ের চেষ্টার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী পৌঁছনোর চেষ্টা করছে বলে তাঁর দাবি।

কাঠমান্ডুতে ১৯ শতকে নির্মিত ঐতিহাসিক ধারারা মিনার ভেঙে পড়ায় আটকে পড়েন শ’খানেক পর্যটক। বছর দশেক আগে ওই মিনারটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এই মিনারের ন’তলায় ছিল একটি ব্যালকনি। এখান থেকে গোটা শহরকে সুন্দর ভাবে দেখা যেত। কিন্তু, কম্পনের জেরে গোটা মিনারটি ভেঙে পড়ে। পুলিশ সূত্রে খবর, সেখান থেকে দেহ উদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে।

নেপালে ভারতীয় দূতাবাসের মুখপাত্র অভয় কুমার এ দিন দুপুরে বলেন, ‘‘বহু পুরনো বাড়ির দেওয়াল ভেঙে পড়ে। ভূমিকম্প পরবর্তী কম্পন এখনও অনুভূত হচ্ছে। সব মানুষই রাস্তায় নেমে এসেছেন।’’ ভূমিকম্প সংক্রান্ত দু’টি হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। কাঠমান্ডুর সিভিল হাসপাতালের চিকিত্সকেরা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ৩৬ জনকে উদ্ধার করে সেখানে নিয়ে আসা হয়। যদিও সকলেই তত ক্ষণে মারা গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

ভূমিকম্পের জেরে গোটা দেশের অবস্থা খুবই খারাপ চেহারা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন নেপালের তথ্যমন্ত্রী মীনেন্দ্র রিজাল। বিপর্যয় মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞ সংস্থাগুলিকে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘পরিস্থিতি সামলাতে বিপর্যয় মোকাবিলায় দক্ষ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির সাহায্য এই মুহূর্তে বড়ই প্রয়োজন।’’


সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন

নেপালের এই ভূমিকম্পের জেরে কেঁপে ওঠে গোটা উত্তর ভারত-সহ মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশা, সিকিম এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি। প্রত্যেকটি রাজ্যেই ভেঙে পড়েছে বহু ঘরবাড়ি। হতাহত হয়েছেন অনেকেই। তবে, নির্দিষ্ট ভাবে কোনও সংখ্যা এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত জানা যায়নি। ভূমিকম্প হওয়ার পর পরই উত্তরপ্রদেশের সমস্ত স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। একটি প্রাথমিক স্কুলে দেওয়াল চাপা পড়ে তিন জন শিশুর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে।

এ দিনের ভূমিকম্প প্রবল ভাবে টের পাওয়া গিয়েছে দিল্লিতেও। রাজধানীর বেশ কিছু বাড়িতে ফাটল দেখা দেয়। নয়ডাতেও বাড়ি-ঘরদোরের উপর ভূমিকম্পের প্রভাব পড়েছে বলে সূত্রের খবর। রাজস্থানের জয়পুর, অজমেঢ়-সহ বেশ কিছু জায়গা ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে প্রাণহানির কোনও খবর মেলেনি। উত্তরাখণ্ড-পঞ্জাব-হরিয়ানার পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে ভূমিকম্পের প্রভাব পড়েছে।

পশ্চিমবঙ্গও ভূমিকম্পের জেরে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েকশো ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়িতে দেওয়াল চাপা পড়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। ফাটল দেখা দিয়েছে প্রচুর পাকা বাড়িতে। বাদ যায়নি শহর কলকাতাও। সেখানেও বেশ কিছু বাড়ি হেলে পড়েছে। ফাটলও দেখা দিয়েছে বহু বাড়ি এবং শপিং মলে। টুইট বার্তায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। অন্য কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের পাশাপাশি মমতার সঙ্গেও এ দিন দুপুরে টেলিফোনে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘‘অনেক বহুতল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফাটল দেখা দিয়েছে বেশ কয়েকটি উড়ালপুলেও। প্রধানমন্ত্রীকে সবটাই জানিয়েছি।’’

ভারতীয় বায়ুসেনা উদ্ধারকাজের জন্য এয়ারক্র্যাফ্ট এবং হেলিকপ্টার নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর। এভারেস্টে স্বচ্ছ ভারত অভিযানে যাওয়া সেনা জওয়ানেরা নিরাপদে আছেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁরা সরাসরি নেপালে গিয়ে উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছেন। বাংলা এবং অসম থেকে যাওয়া পর্বতারোহীরা সকলেই নিরাপদে আছেন বলে খবর মিলেছে। এভারেস্টের একটি বেসক্যাম্প সম্পূর্ণ ভাবে ধূলিসাত্ হয়ে গিয়েছে বলে সূত্রের খবর। তবে, এই ঘটনায় কেউ হতাহত হয়েছেন কি না তা এখনও জানা যায়নি।

উৎসস্থল কাঠমান্ডু থেকে ৭৭ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে

গভীরতা ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৪.৮ কিলোমিটার গভীরে

তীব্রতা রিখটার স্কেলে ৭.৮

কারণ এই অঞ্চলে ভারতীয় টেকটনিক প্লেট উত্তর দিকের ইউরেশিয়ার প্লেটের তলায় ঢুকে যাওয়া (সাবডাকশন)

শহর কম্পনের মাত্রা কাঠমান্ডু প্রচণ্ড ভক্তপুর অতি তীব্র কীর্তিপুর অতি তীব্র নাগারকোট অতি তীব্র ভরতপুর অতি তীব্র পোখরা তীব্র গোরখপুর মধ্যম মুজফ্‌ফপুর মধ্যম

শহর কম্পনের মাত্রা

কাঠমান্ডু প্রচণ্ড

ভক্তপুর অতি তীব্র

কীর্তিপুর অতি তীব্র

নাগারকোট অতি তীব্র

ভরতপুর অতি তীব্র

পোখরা তীব্র

গোরখপুর মধ্যম

মুজফ্‌ফপুর মধ্যম

তথ্য সূত্র: ইউনাটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস)

হেল্পলাইন
+৯৭৭৯৮৫১১০৭৭০২১
+৯৭৭৯৮৫১১৩৫১৪১

nepal earthquake nepal valley of death devastating earthquake latest bengali news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy