Advertisement
E-Paper

কলকাতার কালোয় ঢেকে যাচ্ছে শিশুর ফুসফুস

কাশতে কাশতে মাঝেমধ্যেই দম বন্ধ বয়ে যায় ৭ বছরের ঋকের। বাবা-মাকে সারা রাত জেগে কাটাতে হয় ছেলের জন্য। ১০-১৫ মিনিট খেলতে না খেলতেই হাঁপিয়ে ওঠে ৯ বছরের রোহন। এমন হাঁফ ধরে যায় যে মাঝেমধ্যে অক্সিজেনও দিতে হয় ছেলেটিকে। রোহন আর মাঠেই যেতে চায় না তখন। না। ঋক আর রোহনের কোনও কঠিন ব্যাধি বা কিছুই হয়নি। এরা সবাই কলকাতার বায়ুদূষণের শিকার। শিশুদের জন্য ক্রমশই ভয়াবহ হয়ে উঠছে এই শহরের পরিবেশ।

মধুরিমা দত্ত

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৫ ১৯:০৫

কাশতে কাশতে মাঝেমধ্যেই দম বন্ধ বয়ে যায় ৭ বছরের ঋকের। বাবা-মাকে সারা রাত জেগে কাটাতে হয় ছেলের জন্য। ১০-১৫ মিনিট খেলতে না খেলতেই হাঁপিয়ে ওঠে ৯ বছরের রোহন। এমন হাঁফ ধরে যায় যে মাঝেমধ্যে অক্সিজেনও দিতে হয় ছেলেটিকে। রোহন আর মাঠেই যেতে চায় না তখন। না। ঋক আর রোহনের কোনও কঠিন ব্যাধি বা কিছুই হয়নি। এরা সবাই কলকাতার বায়ুদূষণের শিকার। শিশুদের জন্য ক্রমশই ভয়াবহ হয়ে উঠছে এই শহরের পরিবেশ। ক্রমাগত বাড়তে থাকা যানবাহন এবং তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকা দূষিত ধোঁয়া শিশুর ভবিষ্যতের সামনে খাড়া করে দিচ্ছে এক প্রশ্নচিহ্ণ। সাম্প্রতিক এক বেসরকারি সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে, ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে ৩৫ শতাংশই ফুসফুসের বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত।

আক্রান্ত শিশু-কিশোরদের ২৬ শতাংশেরই ফুসফুসের অবস্থা সন্তোষজনক নয়। বাকি ৯ শতাংশের অবস্থা আরও খারাপ। বায়ুদূষণে সব থেকে বেশি আক্রান্ত চারটি মহানগরের মধ্যে একমাত্র মুম্বইয়ের অবস্থা তুলনামূলক ভাবে ভাল। মুম্বইতে ফুসফুসের সমস্যায় আক্রান্ত ছেলেমেয়ের সংখ্যা ২৭ শতাংশ, যেখানে বেঙ্গালুরু এবং দিল্লিতে এই সংখ্যা ৩৬ এবং ৪০ শতাংশে এসে পৌঁছেছে। এই সমীক্ষা গত সোমবার প্রকাশ পায় সারা ভারত জুড়েই। সমীক্ষাটি চালানো হয় চার হাজার শিশু-কিশোরের উপর। রিপোর্টে জানা গিয়েছে, যে সব ছেলেমেয়ে খোলা যানবাহনে বেশি যাতায়াত করে তারাই সব থেকে বেশি আক্রান্ত। দিল্লিতে খোলা যানবাহনে যাতায়াতকারী শিশু-কিশোরদের মধ্যে ৯২ শতাংশই ফুসফুসের রোগে ভুগছে, যেখানে বাস বা ঢাকা কোনও মাধ্যমে নিয়মিত যাতায়াতকারীদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি মাত্র ৮ শতাংশ। মুম্বই (৭৯ শতাংশ খোলা যানবাহনে, ২১ শতাংশ ঢাকা যানবাহনে), বেঙ্গালুরু (৮৬ শতাংশ খোলা যানবাহনে, ১৪ শতাংশ ঢাকা যানবাহনে), কলকাতার (৬৫ শতাংশ খোলা যানবাহনে, ৩৫ শতাংশ ঢাকা যানবাহনে) ক্ষেত্রে ছবিটা খানিকটা একই রকম।

সোমবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে সমীক্ষাটি প্রকাশ করা হয়। এই অনুষ্ঠানে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত জানান, কলকাতার ক্ষেত্রে ঘটনাটি অস্বাভাবিক কিছুই নয়। যানবাহনের দূষণ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ বারে বারেই করা হয়েছে। তিনি বলেন, “এই শহরের মাত্র ৫ শতাংশ এলাকা জুড়ে রাস্তাগুলো ছড়িয়ে আছে এবং তারও বেশ কিছুটা অংশ আবার সঠিক ভাবে ব্যবহৃত হয় না। তাই গাড়ির ধোঁয়ার দূষণটা একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। শহরের মোট গাড়ির অর্ধেকেরও বেশি বহু দিনের পুরনো এবং‌ সেগুলি কোনও রকম ধোঁয়া বা জ্বালানির পরীক্ষা-নিরীক্ষার ধারও ধারে না। এমনকী, কলকাতায় ‘গ্রিন চ্যানেল’ শুরুর প্রচেষ্টাটিও ব্যর্থ হয়েছে। ফলস্বরূপ এই সামগ্রিক অবক্ষয়।”

• ঘনঘন কাশি

• শ্বাসনালির

সংক্রমণ

নিউমোনিয়া

হাঁপানি

• সংকীর্ণ রাস্তাঘাট

যানবাহনের ক্রমান্বয়ে

বাড়তে থাকা দূষণ

বৃক্ষচ্ছেদন

গ্রিন চ্যানেলের ব্যর্থতা

যে শিশুকিশোরদের উপর সমীক্ষাটি করা হয় তাদের প্রত্যেকেরই স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হয়। যার মূল উদ্দেশ্যই ছিল তাদের ফুসফুসের শ্বাসবায়ু গ্রহণ ও বর্জনের ক্ষমতা, শ্বাসকার্যের দ্রুততার একটি পরিষ্কার রূপরেখা পাওয়া। যে কোনও দূষণে শিশুরাই সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার মধ্যে বায়ুদূষণের ক্ষতিকর দিকটা শিশুদের ক্ষেত্রে ভয়াবহ। কারণ, অপরিণত শ্বাসযন্ত্রে ছোট থেকেই দূষিত ধোঁয়া প্রবেশ করতে থাকলে পরবর্তীকালে সমস্যা জটিল হয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রবল, বলেন পালমনোলজিস্ট পার্থসারথি ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়: “দূষণের উত্তরোত্তর বৃদ্ধি বস্তুত ফুসফুসের বাড়তে থাকা সমস্যাগুলির মূল কারণ। কলকাতায় যানবাহনের সংখ্যা এবং শিশু-কিশোরদের শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা সমান্তরালে বেড়ে চলেছে। যত ক্ষণ না আমরা দূষণ নিয়ন্ত্রণে জোরালো কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছি, তত ক্ষণ অন্য কোনও ভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।”

কলকাতার ৪০ শতাংশ শিশু-কিশোরই ফুসফুসের বিভিন্ন সমস্যায় জেরবার। কলকাতার আর এক পালমনোলজিস্ট অনির্বাণ মিত্রের মতে, গাড়ির ধোঁয়াই কলকাতায় দূষণের একমাত্র কারণ নয়, অনেকগুলো কারণের অন্যতম। দূষণ আসলে উন্নয়নেরই ছায়াসঙ্গী, অনির্বাণবাবু জানান। তাঁর কথায়, “আমরা সম্পূর্ণ ভাবে উন্নয়ন থেকে সরে আসতে পারব না ঠিকই, কিন্তু পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব।”

kolkata air pollution kolkata baby lungs kolkata massive air pollution children lung capacity kolkata children kolkata unbearable air pollution madhurima dutta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy