Advertisement
E-Paper

তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬এ ধারা বাতিল সুপ্রিম কোর্টে

সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে মন্তব্য করে হাজতবাস করতে হয়েছে, এমন ঘটনা বিরল নয়। যে ধারার বলে পুলিশ মন্তব্যকারীকে গ্রেফতার করত পারত মঙ্গলবার তথ্যপ্রযুক্তি আইনের সেই ৬৬এ ধারাটিকেই বাতিল করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। এই আইন কার্যকর থাকার ফলে বাক্ স্বাধীনতা লঙ্ঘিত হচ্ছে, হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে নাগরিকের মৌলিক অধিকারেও। তাই এই আইন বাতিলের দাবি আগেই উঠেছিল। এ দিন শীর্ষ আদালত সেই দাবিকে স্বীকৃতি দিল। এত দিন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করার জন্য যে কাউকে গ্রেফতার করার সংস্থান এই আইনে ছিল। এ দিন আইনের সংশ্লিষ্ট সেই ধারাটি তুলে দিল সুপ্রিম কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৫ ১১:৩৮

সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে মন্তব্য করে হাজতবাস করতে হয়েছে, এমন ঘটনা বিরল নয়। যে ধারার বলে পুলিশ মন্তব্যকারীকে গ্রেফতার করত পারত মঙ্গলবার তথ্যপ্রযুক্তি আইনের সেই ৬৬এ ধারাটিকেই বাতিল করে দিল সুপ্রিম কোর্ট।

এই আইন কার্যকর থাকার ফলে বাক্ স্বাধীনতা লঙ্ঘিত হচ্ছে, হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে নাগরিকের মৌলিক অধিকারেও। তাই এই আইন বাতিলের দাবি আগেই উঠেছিল। এ দিন শীর্ষ আদালত সেই দাবিকে স্বীকৃতি দিল। এত দিন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করার জন্য যে কাউকে গ্রেফতার করার সংস্থান এই আইনে ছিল। এ দিন আইনের সংশ্লিষ্ট সেই ধারাটি তুলে দিল সুপ্রিম কোর্ট।

রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি জে চেলামেশ্বর এবং বিচারপতি আর এফ নরিম্যানের ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন জানিয়ে দেয়, আইনের ওই ধারা নাগরিকদের বাক্ স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের মৌলিক অধিকারকে খর্ব করছিল। বেঞ্চের মতে, ওই ধারায় ব্যবহৃত ‘বিরক্তিকর’, ‘অসুবিধাজনক’ এবং ‘আপত্তিকর’ বলে যে শব্দগুলি রয়েছে তা খুবই অস্পষ্ট। আইন প্রয়োগকারীদের ক্ষেত্রেও তা সমস্যাজনক বলে এ দিন মন্তব্য করে শীর্ষ আদালত। কেননা, এই শব্দগুলির প্রকৃত কোনও সংজ্ঞা নেই। এক এক জনের কাছে তার মানদণ্ড এক এক রকমের। আদালত জানায়, এক জনের কাছে যা আপত্তিজনক, অন্য জনের কাছে তা আপত্তিকর না-ও হতে পারে। সব দিক বিবেচনা করেই এই ধারা বিলোপের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে আদালতের মত। এ দিন বেঞ্চ বলে, “সরকার এসেছে, গিয়েছে। কিন্তু, ৬৬এ ধারা একই রকম ভাবে রয়ে গিয়েছে।”

৬৬এ ধারা বিলোপের কথা বললেও তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৯এ এবং ৭৯ ধারা বহাল রেখেছে শীর্ষ আদালত। ৬৯এ ধারা মোতাবেক, ইন্টারনেট ও কম্পিউটার ব্যবহার করে পাঠানো কোনও বার্তা বা মন্তব্যকে ‘ব্লক’ করার অধিকার সরকারের আছে। আর ৭৯ ধারায় বলা হয়েছে, বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত ২০১২-র ১৮ নভেম্বর। মুম্বইয়ে বালাসাহেব ঠাকরের মৃত্যুর পরে গোটা শহর বনধের চেহারা নেয়। ফেসবুকে তারই সমালোচনা করেন শাহিন ধাদা নামে এক তরুণী। রিণু শ্রীনিবাস নামে আর এক তরুণী শাহিনের করা মন্তব্যকে ‘লাইক’ করেন। এর পরেই ঠানের পালঘরের ওই দুই তরুণীকে গ্রেফতার করে মহারাষ্ট্র পুলিশ। সেই ঘটনায় গোটা দেশে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। মূলত এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শ্রেয়া সিঙ্ঘল নামে দিল্লির এক ছাত্রী সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন। আবেদনে ২০০০ সালে তৈরি তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৬৬এ ধারা খারিজের আর্জি জানানো হয়।

শুধু মহারাষ্ট্র নয়, ওই আইনের বলে এ রাজ্যের অম্বিকেশ মহাপাত্রকেও গ্রেফতার করা হয়। ওই বছরেরই ১২ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুকুল রায় এবং দীনেশ ত্রিবেদীর একটি রঙ্গচিত্র ই-মেলে ফরোয়ার্ড করার অভিযোগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র এবং তাঁর এক প্রতিবেশী সুব্রত সেনগুপ্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই ঘটনাতেও তোলপাড় হয়েছিল গোটা দেশ। শ্রেয়ার আবেদনে অম্বিকেশবাবুদের কথাও উল্লেখ করা হয়। এ দিনের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন অম্বিকেশবাবুও। তিনি বলেন, “এই ধারা আগেই খারিজ হওয়া উচিত ছিল। এর ফলে সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার এব মানবাধিকার রক্ষিত হবে।”

এর পরে ২০১৩-র ১৬ মে সুপ্রিম কোর্ট এক নির্দেশে জানিয়ে দেয়, উচ্চপদস্থ কোনও পুলিশকর্তার অনুমতি ছাড়া সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্যের অভিযোগে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। আইজি, ডেপুটি কমিশনার বা পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কোনও কর্তার অনুমতি নিয়ে তবেই ৬৬এ ধারায় কাউকে গ্রেফতার করা যাবে বলে জানিয়ে দেয় শীর্ষ আদালত।

এর পরেও গত ১৮ মার্চ সমাজবাদী পার্টির নেতা আজম খানের বিরুদ্ধে ফেসবুকে মন্তব্য করে গ্রেফতার হতে হয় এক যুবককে। এই বিষয়েও সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ দায়ের করা হয়। শীর্ষ আদালত উত্তরপ্রদেশ পুলিশের কাছে বিষয়টি নিয়ে সবিস্তার রিপোর্ট তলব করে।

এ দিন রায় শোনার পর শ্রেয়া বলেন, “এখনও আদালতের নির্দেশ হাতে পাইনি। দেখে যা বলার বলব। তবে এটুকু বলতে পারি, নাগরিকদের বাক্ স্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকারকে ফের স্বীকৃতি দিল সুপ্রিম কোর্ট।”

sc Supreme Court Information Technology Act, 2000 section 66A IT Act Justice J Chelameswar Justice Rohinton
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy