সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে নামার আগেই বড়সড় ধাক্কা খেলেন আম আদমি পার্টি (আপ) সুপ্রিমো তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। সরকার, মুখ্যমন্ত্রী অথবা কোনও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘মর্যাদাহানিকর’ খবর প্রকাশ করলে সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে আইনি নোটিস জারি নিয়ে দিল্লি সরকারের ফতোয়ার উপর স্থগিতাদেশ জারি করল সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার এই নির্দেশ দেয় বিচারপতি দীপক মিশ্র এবং বিচারপতি প্রফুল্ল পন্থের ডিভিশন বেঞ্চ।
চলতি মাসের ৬ তারিখ দিল্লি সরকার এক নির্দেশিকা জারি করে জানায়, কোনও মন্ত্রী বা আমলা যদি মনে করেন সংবাদমাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও আপত্তিকর খবর প্রকাশিত হয়েছে, তিনি তা রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবকে জানাতে পারেন। স্বরাষ্ট্রসচিব মনে করলে আইন মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা করে সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে। নির্দেশিকাটি জারি হওয়ার পরই প্রতিবাদ ওঠে সব মহল থেকে। নির্দেশিকার বিরোধিতা করে কংগ্রেস এবং বিজেপি-র তরফে বলা হয়, কেজরীবাল যে একেবারেই সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না, এই ধরনের বিজ্ঞাপ্তিই তার বড় প্রমাণ। এর পরই নির্দেশিকাটির বিরুদ্ধে পাতিয়ালা হাউজ কোর্টে আবেদন করেন এক আইনজীবী। আবেদনে তিনি জানান, মানহানি সংক্রান্ত ভারতীয় দণ্ডবিধির যে আইনগুলি আছে, কেজরীবাল এই ধরনের নির্দেশিকার মাধ্যমে সেগুলির অবমাননা করেছেন। পাশাপাশি, নির্দেশিকার উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে শীর্ষ আদালতে একটি আলাদা আবেদনও জানান তিনি। এ দিন সেই আবেদনের ভিত্তিতেই নির্দেশিকাটির উপর স্থগিতাদেশ জারি করল সুপ্রিম কোর্ট। শুধু তা-ই নয়, ছ’সপ্তাহের ভিতর দিল্লি সরকারকে জবাবদিহি করতেও নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
শীর্ষ আদালতের এই রায়ের পর দিল্লি সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়, বিষয়টির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিজ্ঞপ্তিটি প্রত্যাহার করা হল।
নির্দেশিকা জারির পরই কেজরীবাল-সহ দিল্লির আপ সরকারকে এক হাত নিয়েছিল বিরোধীরা। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে ‘ভণ্ড’ এবং ‘গণতন্ত্র বিরোধী’ বলে আক্রমণ করে বিজেপি। এ দিন সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়ে বিজেপি নেতা সতীশ উপাধ্যায় বলেন, “সংবাদমাধ্যমকে ভয় পেয়েছে আপ। কেজরীবালের সব কীর্তি ফাঁস করতে শুরু করেছিল তারা। শুধুমাত্র বাক্সর্বস্ব না হয়ে দলের অভ্যন্তরের দুর্নীতি রোধ করা উচিত কেজরীবালের।”
রায়কে স্বাগত জানিয়েছে কংগ্রেসও। দিল্লির প্রদেশ কংগ্রেস প্রধান অজয় মাকেন বলেন, “সংবাদমাধ্যমের মুখ বন্ধ করার চক্রান্ত করেছিল কেজরীবালের নেতৃত্বাধীন আপ সরকার। বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করায় আমরা খুশি।”