স্বামীর সম্পত্তি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বিয়ের দিন থেকেই মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল জাহানুরের। আর তাই মাথাব্যাথার কারণটাকেই মূল থেকে উপরে ফেলে দেওয়ার ফন্দি আটতে শুরু করে সে। এই কাজে জাহানুরের পাশে দাঁড়ায় তার বাপের বাড়ির লোকজনেরাও। শেষমেশ সম্পত্তি বেহাত হয়ে যাওয়া রুখতে স্বামীর প্রথম পক্ষের স্ত্রী-র আট বছরের সন্তানকে মেরে রান্নাঘরের মেঝেতে পুঁতে রাখার অভিযোগ ওঠে জাহানুর ও বাপের বাড়ির কয়েকজনের বিরুদ্ধে। পুলিশ জানায়, ইমরান হাসান (৮) নামে একটি শিশুকে খুন করে মেঝেতে পুঁতে রাখা হয়েছিল। অভিযুক্ত ওই মহিলা দিল্লিতে রয়েছেন। তাকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশের একটি দল রওনা দিয়েছে। বাকিদেরও খোঁজ চলছে। ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের হেমতাবাদে।
কী ঘটেছিল?
পুলিশ জানায়, রান্নাঘরের মাটির মেঝে খুঁড়ে পাঁচ ফুট নীচ থেকে ওই শিশুটির কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছে। শিশুটিকে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় গর্ত খুঁড়ে পুঁতে রাখা হয়েছিল। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানিয়েছে, খুলির পিছনে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তা থেকে পুলিশের অনুমান ভারী কিছু দিয়েই তার মাথায় আঘাত করে খুন করা হয়েছে। সম্পত্তির লোভে একটি শিশুকে খুন করে মেঝেতে পুঁতে রাখার ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, রায়গঞ্জের হেমতাবাদ থানা এলাকার বাসিন্দা খালিফুল ইসলামের সঙ্গে বছর ছয়েক আগে জাহানুরের বিয়ে হয়েছিল। জাহানুর খানিফুলের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। প্রথম পক্ষের স্ত্রী মরজিনা তার সন্তানকে ফেলে রেখে অন্য এক পুরুষের সঙ্গে চলে যায়। এর পরেই ছেলের দেখাশোনা করার জন্য খালিফুল আর একটি বিয়ে করেছিল। ঘটনার সূত্রপাত সেই থেকেই।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ছেলের দেখাশোনার জন্য বিয়ে করলেও জাহানুর প্রথম থেকেই ইমরানকে পছন্দ করত না। কর্মসূত্রে বছরের বেশির ভাগ সময়েই খালিফুলকে দিল্লিতে কাটাতে হত। সে কারণে ইমরানের প্রতি খালিফুলও খুব একটা নজর দিতে পারত না। পরে দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী জাহানুরের একটি কন্যা সন্তান হলে ইমরানের উপরে অত্যাচার আরও বেড়ে যায়।
পুলিশের দাবি, জাহানুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, কন্যাসন্তান হওয়ার পরে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে যাওয়ার ভয়টা তার মাথায় চেপে বসেছিল। সব সময়েই মনে হত স্বামী খালিফুল তার সব সম্পত্তি ছেলে ইমরানের নামেই লিখে দেবে। তার এবং তার একমাত্র মেয়ের কপালে সম্পত্তির কোনও অংশই জুটবে না।
অভিযোগ, এর পরেই বাপের বাড়ির লোকেদের সঙ্গে সে ইমরানকে খুন করার ছক কষতে শুরু করে। ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল খুন করার পর ইমরানকে রান্নাঘরের মেঝেতে পুঁতে রাখা হয়। কর্মসূত্রে খালিফুল সে সময়ে দিল্লিতে ছিল। বাড়ি ফিরে ছেলের খোঁজ না পেয়ে হেমতাবাদ থানায় জাহানুর-সহ চার জনের নামে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করে খালিফুল। পরে এই ঘটনায় পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছিল। কিন্তু উপযুক্ত প্রমাণ না মেলায় দেড়মাস পর তারা সকলেই জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়।
কিন্তু ছেলে ইমরানের আচমকা নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পিছনে যে সত্ মায়ের হাত রয়েছে তা ভালই টের পাচ্ছিল খালিফুল। বারবার জেরা করার পরে বুধবার জাহানুর খুনের ঘটনাটি স্বীকার করে নেয়। এর পরেই পুলিশ এসে রান্নাঘরের মেঝে থেকে শিশুটির কঙ্কাল উদ্ধার করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy