স্বজনদের ফেরার অপেক্ষায়। ছবি: পিটিআই।
অপহৃত ৪০ জন ভারতীয় শ্রমিককে ফেরাতে যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বৃহস্পতিবার জানালেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। উত্তর ইরাকের মসুলে নির্মাণশিল্পে কর্মরত এই শ্রমিকেরা বুধবার থেকে নিখোঁজ।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, ‘ইসলামিক স্টেট ইরাক অ্যান্ড দ্য সিরিয়া’ (আইএসআইএস) মসুলের দখল নেওয়ার পর থেকেই এই শ্রমিকদের খোঁজ মিলছে না। আশঙ্কা, এই শ্রমিকদের অপহরণ করা হয়েছে। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও পণের দাবি আসেনি বলে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর।
ইরাকে প্রায় ১০ হাজার ভারতীয় কাজ করছেন। এর মধ্যে প্রায় ১০০ জন ইরাকের গৃহযুদ্ধে আটকে পড়েছেন। ইরাকি সরকার, রাষ্ট্রসঙ্ঘের ‘অ্যাসিস্ট্যান্স মিশন ইন ইরাক’ এবং ইরাকে কাজ করছে এমন নানা মানবাধিকার সংগঠনের মাধ্যমে এই শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেন, “আমি নিজে পুরো ব্যাপারটি দেখছি। শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার জন্য সব রকমের চেষ্টা করা হচ্ছে।” সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডু বলেন, “শ্রমিকদের অপহরণ নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হয়েছে। সরকার ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে। তাঁদের দ্রুত মুক্তির জন্য সব পথই খোলা রাখা হচ্ছে।”
অধিকাংশ অপহৃত শ্রমিকই পঞ্জাবের বাসিন্দা। তাঁরা মসুলে ‘তারিখ নূর-উল-হুদা’ সংস্থার অধীনে কাজ করতেন বলে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর। বুধবার পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদল এই শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার জন্য বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি জানিয়েছেন, এঁদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে সুষমা স্বরাজ তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন। শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার সব খরচ পঞ্জাব সরকার বহন করতে চেয়েছে। পঞ্জাবের মুখ্যসচিবকে শ্রমিকদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে বলা হয়েছে।
ইতিমধ্যে ইরাকে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত সুরেশ রেড্ডিকে সমন্বয় রক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। তিনি বাগদাদে পৌঁছে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। ইরাক ছাড়াও ইরান, আমেরিকা, ইজরায়েল সরকারের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। অপহৃত শ্রমিকদের কোথায় রাখা হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তরে এ দিন বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা যাবে না। তবে ভারতীয় শ্রমিকেরা ভালই আছেন বলে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর। আকবরউদ্দিন আরও জানান, বিদেশ মন্ত্রকের ২৪ ঘণ্টার হেল্পলাইনে অনেক ফোন আসছে। ঘটনাটিকে নতুন সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ বলে কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা বলেন, “আশা করছি, নতুন সরকার শ্রমিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার জন্য সব রকম চেষ্টা করবে।”
অপহৃত শ্রমিক মনজিন্দর সিংহ পঞ্জাবের মজিথা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর বোন গুরপিন্দর কউর জানান, ট্রাভেল এজেন্টের প্রলোভনে পা দিয়ে তাঁর ভাই ইরাকে গিয়েছিলেন। দু’দিন আগে ভাই তাঁকে শেষ বার ফোন করেছিল বলে তিনি জানান। ইরাকে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে। যদিও বিদেশমন্ত্রক থেকে এখনও ভাইয়ের বিষয়ে নির্দিষ্ট ভাবে কিছু জানতে পারেননি বলে তিনি জানান। বিদেশমন্ত্রীর কাছে ভাইয়ের দ্রুত মুক্তির আবেদনও করেছেন তিনি। আর এক আটকে পড়া শ্রমিক মোহিন্দর কউরের মা জানিয়েছেন, বিদেশমন্ত্রী তাঁর ছেলেকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে এই শ্রমিকদের বড় অংশ বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই ইরাকে কাজ করতে গিয়েছিল বলে তাঁর আশঙ্কা। অন্য এক শ্রমিক জতিন্দার সিংহের মা জানান, রবিবার তাঁর সঙ্গে ছেলের শেষ কথা হয়। এই তিন জন ছাড়া অমৃতসরের নিকটবর্তী এই গ্রামের হরসিমরঞ্জিত সিংহ, গুরুচরণ সিংহ, কমলজিত্ সিংহও মসুলে অপহৃত হয়েছেন। অপহৃত শ্রমিকদের কয়েক জন আত্মীয় সুষমা স্বরাজের সঙ্গে দেখা করবেন বলে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর। এ দিকে তিকরিতে আটকে পড়া ৪৬ জন ভারতীয় নার্স নিরাপদে আছেন। রেড ক্রিসেন্ট এ দিন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
ইরাকে আইএসআইএস জঙ্গিদের সঙ্গে ইরাকি সেনার সংঘর্ষ চলছে। মসুলে জঙ্গিরা যে শরিয়া আইন বলবত্ করেছিল তা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়েছে। স্থানীয় জনগণের চাপেই এই সিদ্ধান্ত বলে অনেকে মনে করেছেন। এ দিন জঙ্গির আবার বাইজি তেল শোধনাগারে আক্রমণ চালায়। এই হামলায় ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ইরাকি প্রশাসন জানিয়েছে। তিকরিতের কাছে আলামে জঙ্গিরা ইরাকি সেনাকে লক্ষ করে মর্টার হামলা চালায়। এখানে জঙ্গিরা বড়সড় আক্রমণ চালাতে পারে বলে আশঙ্কা। এ দিন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মালিকিকে ফোন করে সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে বলেছেন। আমেরিকার চিফ অফ আর্মি স্টাফ মার্টিন ডেম্পসি জানিয়েছেন, আমেরিকার কাছে ইরাক বায়ুসেনার সাহায্য চেয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে আমেরিকার প্রশাসন সূত্রে খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy