Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অবশেষে ১৪৪ ধারা মুক্ত মাখড়া

মাখড়া নিয়ে ‘ল্যাজেগোবরে’ প্রশাসন শেষমেশ ওই এলাকা থেকে ১৪৪ ধারা উঠিয়ে নিল। গত ২৬ অক্টোবর অনির্দিষ্ট কালের জন্য জারি করা ওই নির্দেশের জেরে বীরভূমের মঙ্গলডিহি এবং বাতিকার পঞ্চায়েতের সমস্ত গ্রামই কার্যত ‘অবরুদ্ধ’ হয়ে ছিল। সোমবার প্রশাসনিক এই সিদ্ধান্তে স্বভাবতই খুশি গ্রামবাসীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাড়ুই শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৪ ১৫:০২
Share: Save:

মাখড়া নিয়ে ‘ল্যাজেগোবরে’ প্রশাসন শেষমেশ ওই এলাকা থেকে ১৪৪ ধারা উঠিয়ে নিল। গত ২৬ অক্টোবর অনির্দিষ্ট কালের জন্য জারি করা ওই নির্দেশের জেরে বীরভূমের মঙ্গলডিহি এবং বাতিকার পঞ্চায়েতের সমস্ত গ্রামই কার্যত ‘অবরুদ্ধ’ হয়ে ছিল। সোমবার প্রশাসনিক এই সিদ্ধান্তে স্বভাবতই খুশি গ্রামবাসীরা।

গত কয়েক দিনের মতো এ দিন সকালেও এলাকা ঘেরা ছিল পুলিশ--র‌্যাফে। দায়িত্বে ছিলেন বীরভূমের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনন্দ রায়। দুপুর পৌনে ১২টা নাগাদ ফোনে তাঁকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী। সঙ্গে সঙ্গে উঠিয়ে নেওয়া হয় মাখনায় ঢোকার পথে ত্রিস্তর পুলিশি ব্যারিকেড। খুশিতে ফেটে পড়েন বাসিন্দারা।

এলাকা থেকে ১৪৪ ধারা উঠে যেতেই গ্রামে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেন বিজেপি-র বীরভূম জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল। তাঁর নেতৃত্বে বিজেপি নেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ এক প্রতিনিধি দল এ দিন দুপুরে মাখড়ায় যায়। নিহত তৌসিফ আলির পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তাঁরা। গ্রামবাসীদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। দলীয় চাপের মুখে নতি স্বীকার করেই যে প্রশাসন এক প্রকার বাধ্য হয়ে এলাকা থেকে ১৪৪ ধারা উঠিয়ে নিয়েছে সে কথাও জানান তাঁরা।

এ দিন সকালে গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করে বিজেপি-র মহিলা মোর্চা। মাখড়া থেকে দু’আড়াই কিলোমিটার দূরে টোকিপুরে সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ তাঁরা জমায়েত হন। পুলিশি নজর ছিল মোর্চার কর্মকাণ্ডের উপর। বীরভূমের মোর্চা সভানেত্রী স্বাগতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ওই প্রতিনিধি দল এর পরে মাখড়ার দিকে এগোতে থাকে। বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ রাধাইপুরের কাছে এসে যখন মোর্চার মিছিল পৌঁছেছে, ঠিক তখনই ১৪৪ ধারা উঠিয়ে নেওয়ার নির্দেশ আসে। এ দিন দুধকুমারদের ওই দলের সঙ্গে তৌসিফের বাড়িতে যান মোর্চার প্রতিনিধিরাও।

কেন ১৪৪ ধারা?

ঘটনার সূত্রপাত গত ২৪ অক্টোবর। ওই দিন মঙ্গলডিহি পঞ্চায়েতের চৌমণ্ডলপুর গ্রামে বোমা উদ্ধার করতে গিয়ে আক্রান্ত হয় পুলিশ। গুরুতর জখম হন পাড়ুই থানার ওসি প্রসেনজিৎ দত্ত। এর পরে ওই এলাকায় পুলিশি তল্লাশি শুরু হয়। গ্রামের লোকজন অভিযোগ করেন, তল্লাশির নামে পুলিশ তাণ্ডব চালাচ্ছে। আতঙ্কে ঘর ছাড়েন অনেকে। এই পরিস্থিতিতে ২৬ অক্টোবর পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখতে ওই গ্রামে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেন জেলা বিজেপি-র নেতারা। ওই দিন তাঁরা গ্রামে পৌঁছনোর আগে পাড়ুই থানার তরফে গোটা এলাকায় গাড়িতে প্রচার চালানো হয়, ‘এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে’। মঙ্গলডিহি তো বটেই, পাশের বাতিকার পঞ্চায়েতকেও তার আওতায় জুড়ে দেয় প্রশাসন। ওই দিন বিজেপি-র প্রতিনিধি দল চৌমণ্ডলপুরে পৌঁছলে তাঁদের ১৪৪ ধারার কারণ দেখিয়ে গ্রামে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। তাঁরা ফিরেও আসেন। সেই শুরু।

এর পর গত ২৭ তারিখ বাতিকার পঞ্চায়েতের মাখড়ায় রাজনৈতিক সংঘর্ষে তিন জন নিহত হলে ফের প্রশ্নের মুখে পড়ে পুলিশের জারি করা এই নির্দেশ। অভিযোগ, ১৪৪ ধারার মধ্যে বাইরে থেকে শ’য়ে শ’য়ে লোক ঢুকে পড়ে তাণ্ডব চালায় মাখড়ায়। গুলিতে মারা যান গ্রামের যুবক তৌসিফ আলি। শুধু তাই নয়, ওই দিনের ঘটনায় নিহত শেখ সোলেমানের বাড়ি দুবরাজপুরে। তিনিও গুলিতেই মারা যান। ১৪৪ ধারার মধ্যেই এত লোক কী ভাবে গ্রামে ঢুকে সন্ত্রাস চালাল পুলিশের চোখের সামনে? কী ভাবেই বা চলল গোলাগুলি? ওঠে এই সব প্রশ্ন।

এর পরে মাখড়া কার্যত শ্মশানে পরিণত হয়। আতঙ্কে গ্রাম ছাড়তে শুরু করেন অনেকে। গ্রামবাসীদের পাশে দাঁড়াতে রাজ্যের সব ক’টি রাজনৈতিক দল মাখড়ায় যাওয়ার চেষ্টা করলেও তাদের ওই ১৪৪-এর ‘জুজু’ দেখিয়ে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। কয়েকটি রাজনৈতিক প্রতিনিধি দলকে গ্রেফতার করা হয়। রাজনৈতিক দলের কর্মী তো বটেই, সমাজকর্মীদেরও গ্রেফতার করা হয় গ্রামে ঢোকার চেষ্টায়। অন্য রাজনৈতিক দলগুলির পাশাপাশি স্থানীয়রাও প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। প্রশ্ন ওঠে, কবে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরবে মাখড়া-সহ গোটা এলাকায়? গত শনিবার চৌমণ্ডলপুরে দাঁড়িড়ে প্রশাসনকে এক সপ্তাহ সময় দিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। কিন্তু সমস্ত প্রতিবাদ-আন্দোলন প্রশাসন ১৪৪ ধারার অজুহাতে ‘সামলে’ নিয়েছে। এ বার সেই ‘জুজু’মুক্ত হল মাখড়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

makhra 144
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE