লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত কুর্দবাহিনী। ছবি: রয়টার্স
ইরাকে বিমান হানা বজায় রাখল আমেরিকা। সঙ্গে চলল ত্রাণসামগ্রী ফেলার কাজও। পেন্টাগন সূত্রে খবর, শুক্রবার রাতে সিনজার পর্বতে আটকে পড়া ইয়াজিদিদের জন্য বিমান থেকে খাবার ও পানীয় জলের প্যাকেট ফেলা হয়। একই সঙ্গে ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া-র (আইএসআইএস) অগ্রগতি আটকাতে ড্রোন হানা চালানো হল।
বৃহস্পতিবার প্রয়োজনে সীমিত বিমান আক্রমণ চালানোর অনুমতি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তার পরে, শুক্রবার সকালে উত্তর ইরাকে আইএসআইএস-এর গোলাবারুদের সংগ্রহে বিমান আক্রমণ চালায় আমেরিকা। এখান থেকে উত্তরে কুর্দদের আরবিল শহরের উপরে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল আইএসআইএস জঙ্গিরা। দু’টি এফ-১৮ সুপার হর্নেট যুদ্ধবিমান জঙ্গিদের অবস্থানের উপরে ২২৭ কেজির বোমা ফেলে। ইরাকের সরকারি সূত্রে খবর, এই মার্কিন হানায় আইএসআইএস-এর ৪৫ জন জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে, আহত প্রায় ৬০ জন। শুক্রবার রাতেই আমেরিকার ড্রোন একটি আইএসআইএস জঙ্গি-কনভয়ের উপরে হামলা চালায়। সঙ্গে আক্রমণ করা হয় একটি ‘মর্টার পজিশন’-এর উপরেও। এ ভাবে আইএসআইএস জঙ্গিদের অগ্রগতি ঠেকানো যাবে বলে আমেরিকার আশা। তবে আইএসআইএস জঙ্গিদের নির্মূল করতে ইরাকি সেনাকেই ব্যবস্থা নিতে হবে বলে আমেরিকা জানিয়েছে। এই জন্য কুর্দ পেশমেরগা যোদ্ধাদের সঙ্গে ইরাকি শিয়া সেনাদের একযোগে নামতে হবে। বাগদাদে সর্বদল সরকার গঠন হলে তা সহজ হবে বলে মনে করছে আমেরিকা। তাই বিমান আক্রমণের পাশাপাশি সর্বদল সরকারের জন্য ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মালিকি-র উপরে চাপও বজায় রাখছে আমেরিকা।
বিমান হামলার পাশাপাশি সিনজার পর্বতে আটকে পড়া ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য একটি সি-১৭ এবং একটি সি-১৩০ মালবাহী বিমান থেকে ৭২ বান্ডিল ত্রাণ সামগ্রী ফেলা হয়। এই মালবাহী বিমানদু’টিকে পাহারা দিচ্ছিল দু’টি এফ-১৮ সুপার হর্নেট। এই ৭২ বান্ডিলে প্রায় ২৮,২২৪টি মিলিটারি র্যাশনের প্যাকেট এবং ১৫২২ গ্যালন জলের প্যাকেট ছিল। সিনজার পর্বতে প্রায় ৫০,০০০ ইয়াজিদি আটকে আছেন। এদের মধ্যে অনেকেই ক্ষুধায়-তৃষ্ণায় কাতর। বিশেষ করে শিশুদের অবস্থা খুবই খারাপ। এদের পথ আগলে দাঁড়িয়ে আছে আইএসআইএস। অনেকাংশে জরাথ্রুস্টিয়ান ধর্মালম্বী ইয়াজিদিদের, শয়তানের উপাসক বলে মনে করে আইএসআইএস-এর সুন্নি জঙ্গিরা। ফলে ইয়াজিদিরা এই জঙ্গিদের কবলে পড়লে গণহত্যা ঘটতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা।
কিন্তু আমেরিকার বিমান হামলায় এখনও পর্যন্ত আইএসআইএস-এর অগ্রগতি ঠেকানো যায়নি। শুক্রবারই তারা মসুলের উত্তরে ইরাকের সর্ববৃহৎ জলবিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রটি দখল করে নেয়। অন্য দিকে, আমেরিকার বিমান হামলায় তাদের অগ্রগতি ঠেকানো যাবে না বলে দাবি আইএসআইএস জঙ্গিদের। তারা গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধে অভ্যস্ত। ফলে এই ধরনের আক্রমণ তাদের কিছুই করতে পারবে না বলে তাদের দাবি। আইএসআইএস-এর লক্ষ্য উত্তর ইরাকে কুর্দ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল দখল। এখানে বেশ কিছু তেলের খনি আছে। এই খনিগুলির দখল নিতে পারলে নিজেদের যুদ্ধের জন্য রসদ সংগ্রহ করা সহজ হবে বলে মনে করছে আইএসআইএস। এর আগে উত্তর ইরাকের বাইজি তেল শোধনাগারটি দখল করতে তারা মরিয়া চেষ্টা চালায়। কিন্তু ইরাকি সেনা তাদের ঠেকাতে সক্ষম হয়।
কুর্দ শহর আরবিলে বহু মানুষের বাস। এত দিন পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পশ্চিম ইরাকে গৃহযুদ্ধ চললেও উত্তর ইরাকের কুর্দ প্রধান এই অঞ্চলটি মোটামুটি শান্তই ছিল। ফলে ইরাকের অন্যত্র থেকে ঘরছাড়া অনেক ইরাকি এখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এখানে থাকেন কর্মসূত্রে আসা অন্য দেশের বাসিন্দারাও। যেমন, এই অঞ্চলে কর্মসূত্রে প্রায় ১৫ হাজার ভারতীয়ের বাস। ইরাকে আটকে পড়া ৪৬ জন ভারতীয় নার্স এই আরবিল শহর থেকেই বিমানে ভারতে ফিরেছিলেন। এই শহরে মার্কিন কনস্যুলেটও আছে। ফলে আইএসআইএস-এর অগ্রগতি চিন্তায় ফেলছে সবাইকেই। পাশাপাশি তেলের খনিগুলি দখল হয়ে গেলে তেলের দাম বাড়বে। সে ক্ষেত্রে ভারতের মতো যে সব দেশ তেলের আমদানির উপরে অনেকাংশে নির্ভরশীল তাদের অর্থনীতির উপরে চাপ বাড়বে বলে আশঙ্কা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy