ইরাকে অপহৃত ভারতীয় শ্রমিকদের মধ্যে এক জনের মৃত্যু হয়েছে বলে মঙ্গলবার বিভিন্ন মহলে খবর ছড়ায়। যদিও এখনও পর্যন্ত ভারত সরকার এই খবরের সত্যতা স্বীকার করেনি। এ দিন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন জানান, নাজাফে অপহৃত ভারতীয় শ্রমিকদের মধ্যে এক জনের হৃদরোগে মৃত্যুর সংবাদ এসেছে। সরকার নানা সূত্রে খবরটির সত্যতা যাচাইয়ের চেষ্টা করছে। ইরাকে কর্মরত কোনও ভারতীয়ের মৃত্যু হলে যে সংস্থায় তিনি কাজ করেন তারা ভারত সরকারকে জানায়। এ ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত খবরটি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, ৩৯ জন অপহৃত ভারতীয়কে ফিরিয়ে আনতে সব রকমের চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে সৌদি আরব-সহ আশপাশের দেশগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। ওই অঞ্চলে সক্রিয় মানবাধিকার সংগঠনগুলির সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র জানান, এখনও পর্যন্ত ১২০ জন ভারতীয় ইরাকে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এর মধ্যে তিকরিত-এ আটকে থাকা ৪৬ জন নার্সও রয়েছেন। ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুমে প্রায় ৩০০টি সাহায্যের আবেদন এসেছে। যদিও আপাতত আটকে থাকা এবং অপহৃতদের এক সঙ্গে ইরাক থেকে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা তৈরি হয়নি বলে জানান প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি। এ দিকে, ইরাকে আটকে থাকা কর্মীদের পরিবারের তরফে অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি কর্মীদের পাসপোর্ট আটকে রেখে তাঁদের বাড়ি ফিরতে বাধা দিচ্ছেন। কারণ, বেশ কিছু ক্ষেত্রে কর্মীদের বৈধ ভিসা না থাকা সত্ত্বেও কাজে নেওয়ায় এই সব সংস্থাকে শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে।
এ দিন মার্কিন বিদেশ সচিব জন কেরি উত্তর ইরাকে কুর্দদের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে যান। ইরবিল শহরে কুর্দ প্রেসিডেন্ট মাসুদ বারজানির সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়েছে। ইরাকের এই পরিস্থিতিতে কুর্দ প্রেসিডেন্ট স্বায়ত্তশাসনের বদলে পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি করেছিলেন। কেরি এ দিনের বৈঠকে তাঁকে নতুন ইরাক সরকারে সামিল হতে অনুরোধ করেন বলে খবর। তবে কুর্দরা সেই দাবি মানবে কি না তা এখনও নিশ্চিত নয়। আইএসআইএস-এর হামলার মধ্যেই কুর্দ যোদ্ধারা কিরকুক দখল করে নেয়। কিরকুক স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের বাইরে হলেও এটি তাদের আধ্যাত্মিক রাজধানী বলে কুর্দদের দীর্ঘ দিনের দাবি। তা ছাড়া এই অঞ্চলে খনিজ তেলের বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে। এই ভাণ্ডার দখলে এলে কুর্দরা আর অর্থনৈতিক ভাবে বাগদাদের উপরে নির্ভরশীল থাকবে না বলে বিশেষজ্ঞদের মত। কিন্তু কুর্দরা সরে গেলে ইরাকে নতুন সরকার গঠন এবং ইরাকের অখণ্ডতা রক্ষা আরও কঠিন হয়ে পড়বে বলে মার্কিন প্রশাসন সূত্রে খবর।
সোমবার মার্কিন বিদেশ সচিবের সঙ্গে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নূর আল মালিকি-র বৈঠক হয়। সেখানে সবাইকে নিয়ে দ্রুত নতুন সরকার গঠনের জন্য মালিকি-র কাছে জন কেরি অনুরোধ করেন বলে খবর। বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে জন কেরি জানান, মালিকি এবং অন্য নেতারা ইরাকে সংঘর্ষ থামাতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ মাসের শেষের দিকে নতুন ইরাকি সরকার গঠন করা সম্ভব বলে জন কেরি আশা প্রকাশ করেন। ইরাকের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য ধারাবাহিক ভাবে সব রকমের সাহায্য করার প্রতিশ্রুতিও দেন।
এ দিন আইএসআইএস-এর জঙ্গিরা অবশেষে বাইজি তেল শোধনাগার দখল করতে পেরেছে বলে দাবি করেছে। এখানে ইরাকের মোট তেল উত্পাদনের এক-তৃতীয়াংশ উত্পাদিত হয়। মূলত উত্তর ও পশ্চিম ইরাকের তেল সরবরাহ এর উপরে নির্ভরশীল। যদিও ইরাকি সরকার এখনও এই দাবি স্বীকার করেনি। পাশাপাশি, সিরিয়া-ইরাক সীমান্তে আল-ওয়ালিদ চেকপোস্টের পতন হয়েছে। এর ফলে সিরিয়া থেকে অস্ত্র ও জঙ্গিদের আসা-যাওয়া সহজ হবে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। বাগদাদের তারমিয়া অঞ্চলে এ দিন একটি সুন্নি পরিবারের উপরে এক বন্দুকধারী হামলা চালায়। হামলায় এক জন পুুরুষ, এক মহিলা এবং তিন জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে।