কুর্দিস্তানের একটি ত্রাণ শিবিরে খাবারের অপেক্ষায় ইরাকের ইয়াজিদি মহিলারা। ছবি: এফপি।
ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আবার গণহত্যার অভিযোগ উঠল। এ বার ঘটনাস্থল উত্তর ইরাকের সিনজার শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে কোচো গ্রাম। শুক্রবার দুপুরে এই গ্রামে ঢুকে আইএস জঙ্গিরা অন্তত ৮০ জন পুরুষকে হত্যা করে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। একই সঙ্গে গ্রামের মেয়েদের অপহরণ করা হয়। পাশাপাশি শনিবার সকালে আইএস-এর দখলে থাকা মসুল জলবিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুনরুদ্ধারের জন্য আমেরিকা বিমান হানা চালিয়েছে। কুর্দ যোদ্ধাদের সঙ্গে যৌথ ভাবে এই অভিযান চালানো হচ্ছে।
উত্তর ইরাকে আইএস-এর অভিযান শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের (খ্রিস্টান ও ইয়াজিদি) উপরে অত্যাচার চালানোর অভিযোগ উঠতে থাকে। খ্রিস্টানরা পালিয়ে প্রাণ বাঁচাতে পারলেও প্রধানত জরাথ্রুস্টিয়ান ধর্মালম্বী ইয়াজিদিদের বেশ কয়েকটি দল জঙ্গিদের সামনে পড়ে যায়। তাদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়। শহর থেকে সিনজার পাহাড়ে পালানোর পথে আইএস জঙ্গিদের হামলায় প্রায় ৫০০ জন ইয়াজিদির মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল। আটক হয়েছিলেন প্রায় ৩০০ জন ইয়াজিদি নারী। তার পরে এ বার কোচো গ্রামে গণহত্যা চালাল আইএস জঙ্গিরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচ দিন ধরে কোচো গ্রাম অবরোধ করে রেখেছিল আইএস জঙ্গিরা। এই গ্রামে প্রধানত ইয়াজিদিদের বাস। ইয়াজিদিদের ধর্মান্তকরণের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু গ্রামবাসীরা তাতে রাজি হননি। শুক্রবার দুপুরে আইএস জঙ্গিরা গ্রামে ঢুকে পড়ে। তার পরে গ্রামের পুরুষদের আলাদা করে একটি স্কুল বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁদের নির্বিচারে হত্যা করে আইএস জঙ্গিরা। ঘটনায় অন্তত ৮০ জনের প্রাণ গিয়েছে বলে খবর। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে এই হত্যালীলা চলে বলে জানা গিয়েছে। গ্রামের মহিলাদের বাসে করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়। একটি সূত্রে খবর, কোচো গ্রামের মেয়েদের তেল আফরায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তেল আফারে আইএস-এর বিদেশি জঙ্গিদের ঘাঁটি।
প্রায় একই ভাবে ইয়াজিদি অধ্যুষিত কাওজু গ্রামে হামলা চালাতে যাচ্ছিল আইএস জঙ্গিদের একটি দল। কিন্তু কুর্দ যোদ্ধারা খবর পেয়ে তা মার্কিন সেনাকে জানিয়ে দেয়। এর পরে কাওজুগামী আইএস জঙ্গিদের দু’টি সাঁজোয়া গাড়িতে বিমান আক্রমণ চালায় মার্কিন বায়ুসেনা, রক্ষা পান কাওজুবাসীরা। এতে দু’টি গাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। তবে হতাহতের সংখ্যা এখনও জানা যায়নি। পাশাপাশি মসুল বাঁধ দখল মুক্ত করতেও আঘাত হেনেছে আমেরিকা। কুর্দ যোদ্ধারা বাঁধটি উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। কয়েক দিন আগেই বাঁধটি আইএস জঙ্গিরা অধিকার করেছিল। মসুল বাঁধের লকগেট খুলে দিলে বিশাল এলাকা জলমগ্ন হয়ে অনেকের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। প্রয়োজনে আইএস জঙ্গিরা এই ধরনের কাজও করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা।
অন্য দিকে, শুক্রবার নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ আইএস এবং সিরিয়ায় সক্রিয় নুসরা ফ্রন্টের ছ’জনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির প্রস্তাব সর্বসম্মতিতে পাশ হয়েছে। এঁরা আইএস ও নুসরা ফ্রন্টকে অর্থ ও অস্ত্র পেতে সাহায্য করত বলে অভিযোগ। এই ছ’জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি এঁদের বিদেশ ভ্রমণের উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর ফলে আইএস-এর অর্থ সংগ্রহে সমস্যা হবে বলে রাষ্ট্রপুঞ্জের দাবি। পাশাপাশি একই দিনে ব্রাসেলস-এ ইরাকের পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে বসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি দেশের সদস্যরা। সেখানে আইএস জঙ্গিদের হঠাতে কুর্দদের অস্ত্র সাহায্য করার বিষয়টি দেশগুলির নিজের সিদ্ধান্তের উপরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। চেক রিপাবলিকের তরফে জানানো হয়েছে চলতি মাসের শেষের দিকে তারা কুর্দদের অস্ত্র পৌঁছে দিতে পারবে। অন্য দিকে, জার্মানির আইন অনুযায়ী এ ভাবে অস্ত্র সাহায্য করা নিষিদ্ধ। তবে আইনের মধ্যে থেকে যত দূর সম্ভব সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে জার্মানি।
শুক্রবার আইএস-এর দখলে থাকা ইরাকের কয়েকটি অঞ্চলে বসবাসকারী সুন্নিদের সঙ্গে তাদের বিরোধের খবর পাওয়া গিয়েছে। পাশাপাশি ইরাকের সুন্নিদলগুলি নতুন প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবিদি-র সঙ্গে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy