অনির্দিষ্টকালের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরে উত্সবে অস্ত্রহাতে শিশুরা। ছবি: এএফপি।
বুধবার থেকে গাজায় অনির্দিষ্ট কালের জন্য যুদ্ধবিরতি শুরু হল। ইজরায়েল, হামাস বিবদমান দু’তরফই এই যুদ্ধবিরতির পক্ষে। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরে গাজা এবং ওয়েস্টব্যাঙ্কের প্যালেস্তিননীয়রা উৎসব পালন করেছেন। হামাস এই যুদ্ধবিরতিকে নিজেদের জয় বলে বর্ণনা করেছে। ইজরায়েলের তরফে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গিয়েছে।
মঙ্গলবারই ইজরায়েলের এ বারে গাজা অভিযান ৫০তম দিনে পড়েছিল। চলতি বছরের জুনের শেষ দিকে তিন ইজরায়েলি কিশোরকে অপহরণ করে খুন দিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। খুনের অভিযোগে ওয়েস্টব্যাঙ্কে ধরপাকড় শুরু করে ইজরায়েল। হামাস এই হত্যার পিছনে রয়েছে বলে ইজরায়েলের অভিযোগ ছিল।
ইজরায়েলি কিশোরদের খুনের কয়েক দিন পরেই জেরুজালেমে এক প্যালেস্তিনীয় কিশোরকে হত্যা করা হয়। এর পরেই গাজা থেকে ইজরায়েল লক্ষ করে রকেট হামলা শুরু করে হামাস। জবাব দিতে পাল্টা হামলায় নামে ইজরায়েলে। ‘প্রোটেকটিভ এজ’ নামের এই ইজরায়েলি অভিযানে প্রথমে আকাশ ও পরে স্থলপথে গাজায় হামলা চালানো হয়। এই হামলায় প্রায় ২২০০ জন প্যালিস্তিনীয়ের প্রাণ গিয়েছে। যার মধ্যে আছে চারশোরও বেশি শিশু। প্রাণ হারিয়েছেন ৬৭ জন ইজরায়েলি। যার মধ্যে ৬৪ জন ইজরায়েলি সেনা।
এ বারে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবও মিশরের পক্ষ থেকে আনা হয়েছে। এর আগে মিশরের দেওয়া দু’বারের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রাথমিক ভাবে সফল হলেও, কোনও সুদূরপ্রসারী আশ্বাস না মেলায় আবার সংঘর্ষ শুরু হয়। এ বারের প্রস্তাবে হামাসের একটি বড় দাবি ছিল, মিশরের সঙ্গে তাদের রাফা সীমান্ত খুলে দিতে হবে। অবশেষে মিশর সরকার রাজি হয়েছে। আপত্তি করেনি ইজরায়েলও। তবে এই সীমান্তটির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে ফাতহা ও হামাসের যৌথ সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী। ঠিক হয়েছে, দ্বিতীয় দফায় গাজায় একটি সমুদ্রবন্দর এবং ভূমধ্যসাগরে গাজার মৎস্যজীবীদের মাছ ধরার বিষয়ে মিশরের মধ্যস্থতায় দু’পক্ষের আলোচনা হবে।
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে সমর্থন করে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র জেন পাস্কি বলেন, “আমরা এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে প্রবল ভাবে সমর্থন করছি।” এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান কি-মুনও। তবে তাঁর মুখপাত্র জানিয়েছেন, মূল সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে সমাধান করা না গেলে আবার হিংসা শুরু হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা।
অনির্দিষ্ট কালের যুদ্ধবিরতির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে গাজা এবং ওয়েস্টব্যাঙ্কে উৎসব শুরু হয়ে যায়। বাজি ফাটানো হয়। গাজার জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। আশ্রয়শিবির ছেড়ে অনেকে বাড়ি ফিরতে শুরুও করেছেন। হামাসের মুখপাত্র সামি আবু জুহরি বলেন, “আমরা প্রতিরোধের জয় ঘোষণা করছি। আমরা গাজার জয় ঘোষণা করছি।” যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব অনুযায়ী রাফা সীমান্ত খুলে দেওয়ায় গাজার অর্থনৈতিক সমস্যার কিছুটা সুরাহা হবে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। মিশর ও ইজরায়েলের আশঙ্কা, এই সীমান্ত দিয়ে আবার অস্ত্র আনতে পারে হামাস।
ইজরায়েল জানিয়েছে, খুলে দেওয়া সীমান্ত দিয়ে শুধু অসামরিক পণ্য, ইমারতি দ্রব্য ও ত্রাণসামগ্রী যেতে দেওয়া হবে। তবে অনির্দিষ্টকালের যুদ্ধবিরতিতে ইজরায়েলের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গিয়েছে। নিত্যদিনের রকেট হামলা থেকে সাধারণ বাসিন্দারা স্বস্তি পেয়েছেন। যুদ্ধের জন্য ঝিমিয়ে পড়া ইজরায়েলের পর্যটন শিল্প আবার ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা। কিন্তু হামাসকে নিরস্ত্র করার লক্ষ্য পূরণ হয়নি বলে ইজরায়েলি গণমাধ্যমের একাংশ সমালোচনা করেছে। এর ফলে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর উপরে ডানপন্থী নেতাদের চাপ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা। সে ক্ষেত্রে বিবদমান দু’পক্ষের মধ্যে সামনের আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়া কঠিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy