কথা রাখলেন সবাই!
শাহরুখ থেকে অমিতাভ বচ্চন, সুজিত সরকার থেকে ইরফান খান, জয়া ভাদুড়ি থেকে তনুজা প্রত্যেকে।
ঠিক সেই মেয়েটির মতো! ছেলে না হওয়ার কারণে সপ্তম শ্রেণিতে ওঠার পর যে তার বাবার কাছে শুনেছিল, পড়াশোনার জন্য তোমার পিছনে আর খরচা করে কী হবে! কিন্তু সেই মেয়েই পরে বাবার হাতে তুলে দিয়েছিল তার প্রথম আয় করা পঞ্চাশ লাখ টাকার চেক। ইচ্ছে, একাগ্রতা এবং প্রচেষ্টার ঠিকঠাক মিশেল যে ‘জয়’ এনে দেয়, তার সাক্ষী রইল সোমবার সন্ধ্যার কলকাতা।
কথা রেখেছেন অমিতাভ। এই নিয়ে পর পর তিন বার তিনি কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির হলেন। এ বার যদিও উৎসবে আসতে রাজি ছিলেন না তিনি। তবে আইএসএল-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁকে সরাসরি পাকড়াও করেন মুখ্যমন্ত্রী। কথা দিয়েছিলেন সপরিবার আসবেন। জয়া-অভিষেক-ঐশ্বর্যকে নিয়ে এসেছেন। পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য আরাধ্যা যদিও মঞ্চে ওঠেনি।
এ দিন বিগ-বি ‘ভারতীয় চলচ্চিত্রে নারী’ বিষয়ে অনেক কথা বলেন। তাঁর সেই দীর্ঘ বক্তব্যে উঠে আসে ভারতীয় চলচ্চিত্রের যাত্রাপথ। এক এক করে বিভিন্ন ছবির নাম করে তিনি বুঝিয়ে দেন, কী ভাবে বিষয় বৈচিত্র্যের পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক ভাবেও আধুনিক হয়েছে ভারতীয় সিনেমা। ব্যাখ্যা করেন, নারীশক্তি কী ভাবে উঠে এসেছে সমাজের দর্পণ হিসেবে। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে বাংলা সিনেমার উত্থানও। নারীশক্তির কথা বলতে গিয়ে তিনি ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’র (কেবিসি) একটি অভিজ্ঞতার কথাও দর্শকদের সঙ্গে ভাগ করে নেন। বিগ-বি জানান, তাঁর সামনের ‘হট সিট’-এ সে দিন ছিলেন এক নারী। সপ্তম শ্রেণি পাশ করার পর তাঁর বাবা তাঁকে বলেছিলেন, পড়াশোনার পিছনে তিনি আর মেয়ের জন্য এক পয়সাও খরচা করতে পারবেন না। কারণ হিসেবে মেয়েকে জানিয়েছিলেন, ‘তুমি মেয়ে। তোমার পিছনে এত খরচা করব, শেষে তুমি বিয়ের পর আমাদের ছেড়ে চলে যাবে। তুমি তো আর ছেলে নও যে আয় করে আমাদের উপকারে লাগবে!’ জেদ চেপে যায় মেয়ের। বাড়ি ছেড়ে সে চলে যায়। মেয়েটি হট সিটে বসে অমিতাভকে জানিয়েছিলেন, এর পর তিনি নিজের চেষ্টায় পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন। বড় হয়েছেন। অমিতাভ বলেন, “সেই মেয়ে ‘কেবিসি’তে ওই দিন পঞ্চাশ লাখ টাকার চেক পেয়েছিল। সেটা নিয়ে কী করেছিল জানেন? চেকটা তার বাবার হাতে তুলে দিয়েছিল।” মুহূর্তের স্তব্ধতা। বিগ বি-র চোখে জল।
কথা রেখেছেন শাহরুখ। কেননা, ২০তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম শুনল তাঁর বাংলা সম্ভাষণ। গত বছর এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই তিনি কথা দিয়েছিলেন, জয়াজি-র (জয়া বচ্চন) কাছে শিখে পরের বার বাংলায় বলবেন। কথা মতো শুরুতেই তিনি উচ্চারণ করেছেন বাংলা শব্দ। তবে বেশি দূর না এগিয়ে ফের ফিরে গিয়েছেন স্বচ্ছন্দের ইংরেজিতে। কলকাতার উৎসব বলে এ দিন বাংলাতেই বলার চেষ্টা করেছেন ঐশ্বর্যা, অভিষেক। অতিথি জয়া এবং তনুজা তো বেশ ঝরঝরে বাংলাতেই বলে গেলেন। বাংলায় শুরু করলেন ইরফান খানও। তাঁর ‘ধন্যবাদ’ উচ্চারণে করতালির রোল পড়ে যায় স্টেডিয়ামে।
কথা রেখেছেন সুজিত। তাঁর পরিচালিত ‘পিকু’র শ্যুটিং চলছিল এই শহরে। আমন্ত্রণ পেয়ে জানিয়েছিলেন, দুপুর দু’টোর মধ্যে কাজ শেষ করে হাজির হবেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। এসেছিলেন। এসেছিলেন অন্য অতিথিরাও। অস্ট্রেলিয়ার চলচ্চিত্র পরিচালক পল কক্স, অমল পালেকর, প্রসেনজিৎ, গৌতম ঘোষ, রাইমা সেন, দেব, শুভশ্রী, সায়ন্তিনী, মাধবী মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা রায়, রঞ্জিত মল্লিক, কোয়েল, সন্দীপ রায়, মৌসুমী মুখোপাধ্যায়, পরমব্রত, ইন্দ্রাণী হালদার, জিৎ— নেতাজি ইন্ডোর তখন চাঁদের হাট। প্রায় ‘হাউজফুল’ ইন্ডোরে তখন হাজির মন্ত্রী, আমলা থেকে শুরু করে প্রচুর সাধারণ মানুষ। সবাইকে স্বাগত জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন তাঁর বক্তব্যে বলিউডকে এ রাজ্যে এসে শ্যুটিং করার অনুরোধ করেন। নতুন সৈকত তো বটেই, দার্জিলিং-তরাই-ডুয়ার্সেও তিনি চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাজ করার আহ্বান জানান।
সকলেই কথা রেখেছেন। রাখতে পারলেন না শুধু এক জন। শরীর খারাপ যে ‘পিকু’র। তাই কথা দিয়েও আসা হল না দীপিকা পাডুকনের!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy