লিখিত অভিযোগ দায়ের করছেন আহতের মেয়ে আমিরন বিবি।
ভাড়া দিতে না পারায় এক মহিলা যাত্রীকে চলন্ত ট্রেন থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠল টিকিট পরীক্ষকের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার সকালে মালদহের আদিনা স্টেশনে। পুলিশ জানিয়েছে, আহতের নাম বেইফুল বিবি। বাড়ি মালদহের একলাখিতে। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে উত্তেজিত জনতা মালদহের একলাখি স্টেশনে ভাঙচুর চালায়। বিক্ষোভের কারণে বেশ কিছু ক্ষণ আটকে থাকে কয়েকটি লোকাল ট্রেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন সকালে মালদহের আদিনা স্টেশন থেকে কলকাতা-বালুরঘাট গৌড়লিঙ্ক এক্সপ্রেসে ওঠেন বছর পঁয়তাল্লিশের বেইফুল বিবি। মহিলার সঙ্গে তাঁর মেয়ে ও নাতনি ছিল। বিনা টিকিটে সংরক্ষিত কামরায় উঠে পড়ায় টিটিদের সঙ্গে তাঁর বচসা বেধে যায়। মহিলার মেয়ে আমিরন বিবি জানান, তাড়াহুড়োয় টিকিট কাটা হয়ে ওঠেনি। ট্রেনে ওঠার পরেই কামরার মুখে চার জন টিটির একটি দল তাঁদের ঘিরে ফেলে টিকিট দেখাতে বলে। তাঁদের মধ্যে এক জন মহিলা টিটিও ছিলেন। তাঁর কথায়, টিটিরা ৫১০ টাকা ভাড়া দিতে বলেন। কিন্তু তাঁদের কাছে মাত্র ১০০ টাকা ছিল। এই নিয়ে বচসা শুরু হয়। বচসা চলাকালীন আচমকা এক জন টিকিট পরীক্ষক বেইফুল বিবিকে ধাক্কা মেরে ট্রেন থেকে ফেলে দেন। গুরুতর আহত অবস্থায় আদিনা ও একলাখি স্টেশনের মাঝে লাইনের ধারে তিনি পড়ে থাকেন। এর পর ট্রেনটি একলাখি স্টেশনে পৌঁছলে ট্রেনের যাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
এর পরেই উত্তেজিত যাত্রীরা চার জনের মধ্যে তিন জন টিটিকে ধরে গণপিটুনি দেয়। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন এলাকার বাসিন্দারাও। স্টেশন মাস্টারের ঘর ভাঙচুর করা হয়। বিক্ষোভ-অবরোধের জেরে দীর্ঘ ক্ষণ আটকে থাকে বালুরঘাট ডিইএমইউ লোকাল।
একলাখি স্টেশনে উত্তেজিত জনতার ভিড়।
অভিযুক্ত চার টিকিট পরীক্ষক স্বপনকুমার রায়, গোপাল মাঝি, রোহনপ্রসাদ রায় ও তনুশ্রী ঠাকুরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন আহতের মেয়ে আমিরন বিবি। এই অভিযোগ অস্বীকার করে টিটি স্বপনবাবু জানান, ঘটনাটি অনিচ্ছাকৃত ভাবে ঘটেছে। বচসার সময় এক জন টিকিট পরীক্ষকের হাত লেগে ওই মহিলা পড়ে যান। তাঁর দাবি, এর পরে তাঁরা ট্রেন থামানোর অনেক চেষ্টাও করেন। কিন্তু ট্রেন একদম একলাখি স্টেশনে গিয়েই দাঁড়ায়।
স্টেশন মাস্টার জুয়েল লাকরা বলেন, “খবর দেওয়ার অন্তত ৪৫ মিনিট পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। তত ক্ষণ টিটিদের আমার ঘরে রেখে কোনও রকমে মারমুখী জনতাকে সামলাই।” উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের ডিআরএম বরুণ কুমার শর্মার কথায়, বিনা টিকিটের যাত্রিসংখ্যা বাড়তে থাকায় সব স্টেশনেই কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওই যাত্রীরা বিনা টিকিটে উঠেছিলেন। তিনি বলেন, “ভাড়া মেটাতে না পেরে ওই মহিলাই ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন। এই ঘটনায় টিটিদের কোনও দোষ নেই।”
অন্য দিকে, টিটিদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত বিক্ষোভ চলবে বলে দাবি উত্তেজিত জনতার।
ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy