মেহদি হাসান বিশ্বাস
খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডের সূত্রে রাজ্যে জঙ্গি সংগঠন জামাত যোগ ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। এ বার জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগে কলকাতারই এক যুবক গ্রেফতার হওয়ায় এই শহর তথা এই রাজ্যের সঙ্গে আন্তর্জাতিক এই জঙ্গি যোগও প্রকাশ্যে এল।
ইসলামিক স্টেটের টুইটার হ্যান্ডেল নিয়ন্ত্রণ করার অপরাধে শনিবার গ্রেফতার করা হল বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা মেহদি মসরুর বিশ্বাসকে। এ দিন সকালে তাঁকে হেফাজতে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছে কর্নাটক পুলিশ। তবে শুধুমাত্র মেহদির গ্রেফতারি ছাড়া অন্য কোনও তথ্য দিতে অস্বীকার করেছে প্রশাসন। তবে পুলিশের দাবি, জেরায় মেহদি স্বীকার করেছে সে টুইটার অ্যাকাউন্টটি চালাত।
মেহদির বাবা-মা থাকেন কলকাতায়। শুক্রবার রাতে বেঙ্গালুরুতে বসে কৈখালিতে উদ্বেগে থাকা বাবা মাকে আশ্বস্ত করে ছেলে জানিয়েছিল, তার ই-মেল অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা হয়েছে। এ সব নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। কিন্তু, শনিবার সকালেই আগের রাতের চিত্রটা বিলকুল বদলে গেল। ছেলের ফোনে বার বার ফোন করে তাঁরা শোনেন, সেটির সুইচ বন্ধ করা আছে। এর পরে ওই বৃদ্ধ দম্পতি জানতে পারেন, তাঁদের একমাত্র ছেলে মেহদিকে জঙ্গি সংগঠন আইএসের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মহারাষ্ট্র-সহ দেশের পশ্চিমের রাজ্যগুলি থেকে কিছু যুবকের আইএস-এ যোগ দেওয়া নিয়ে এমনিতেই চিন্তায় ছিল দিল্লি। এর সঙ্গে এ বার যোগ হল দক্ষিণ ভারত এবং কলকাতাও। শুক্রবার ব্রিটেনের ‘চ্যানেল ফোর’ দাবি করে ‘শামি উইটনেস’ নামে একটি টুইটার হ্যান্ডেলের মাধ্যমে পশ্চিমি জঙ্গি সংগঠন আইএসের হয়ে প্রচার চালাত মেহদি। চ্যানেলটির দাবি, মেহদি নিজেই তাদের দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে স্বীকার করেছে সে কথা। সাক্ষাত্কারের যে অংশবিশেষ প্রকাশিত হয়েছে তাতে মেহদি দাবি করেছেন, তিনি এই কাজ করে কোনও অন্যায় করেননি। তার আরও দাবি, “আমি কাউকে আঘাত করিনি। কোনও রকম আইন ভাঙিনি। কোনও ভাবেই হিংসা অথবা যুদ্ধে উস্কানি দিইনি। ভারতের কোনও বন্ধু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে দেশকে বিপাকে ফেলিনি। আমি কোনও অস্ত্রও সঙ্গে রাখি না। তা হলে আমার অপরাধটা কী? তবে এর পরেও যদি আমাকে গ্রেফতার করা হয়, আমি বাধা দেব না।”
হঠাত্ই শেষ হয়ে যাওয়া মিনিট দু’য়েকের এই ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসতেই নড়চড়ে বসে প্রশাসন। চ্যানেলটি সাক্ষাত্কারে ‘মেহদি’ নাম বললেও এটি যে টুইটার নিয়ন্ত্রকের আসল নাম তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে থাকা বেঙ্গালুরু পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত তার গ্রেফতারি নিয়ে প্রশাসনের তরফে কিছুই জানানো হয়নি। অবশেষে তাকে গ্রেফতারির কথা জানায় পুলিশ।
কর্নাটকের জঙ্গি যোগ অবশ্য নতুন কিছু নয়। ২০০৭ সালে লন্ডনে বিস্ফোরক বোঝাই একটি গাড়ি নিয়ে আত্মঘাতী হামলা চালায় কাফিল আহমেদ। বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা কাফিল ডক্টরেটের ছাত্র ছিল। রাজ্যের দুই ভাই রিয়াজ এবং ইকবালের হাত ধরেই উত্থান ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের। আইএস-এর হাতে এখনও আটক জনা চল্লিশেক ভারতীয় শ্রমিক। তাই প্রায় ১৮ হাজার ‘ফলোয়ার’ এবং মাসে কুড়ি লক্ষ লোকের দেখা এই টুইটার হ্যান্ডেলের নিয়ন্ত্রককে নিয়ে তদন্তে কোনও ফাঁক রাখতে চাইছে না পুলিশ। বিষয়টি এনআইএ এবং আইবি-র নজরেও আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার এম এন রেড্ডি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy