Advertisement
E-Paper

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ভাঙড়ে নিহত ২, কঠোর ব্যবস্থার নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর

তৃণমূল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ঘিরে ভাঙড়ে প্রবল সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে দুই তৃণমূল সমর্থকের। গোটা এলাকা কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। শনিবার সকাল থেকে দফায় দফায় গুলি চলে, ব্যাপক বোমাবাজিও হয়। এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ জানায়, নিহতদের নাম বাপন মণ্ডল ও রমেশ ঘোষাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৪ ১৮:২৭
(বাঁ দিকে) নিহত বাপন মণ্ডলের দেহ ঘিরে রেখেছে পরিবারের লোকজন। (ডান দিকে) নিহত রমেশ মণ্ডল। ছবি: সামসুল হুদা।

(বাঁ দিকে) নিহত বাপন মণ্ডলের দেহ ঘিরে রেখেছে পরিবারের লোকজন। (ডান দিকে) নিহত রমেশ মণ্ডল। ছবি: সামসুল হুদা।

তৃণমূল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ঘিরে ভাঙড়ে প্রবল সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে দুই তৃণমূল সমর্থকের। গোটা এলাকা কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। শনিবার সকাল থেকে দফায় দফায় গুলি চলে, ব্যাপক বোমাবাজিও হয়। এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ জানায়, নিহতদের নাম বাপন মণ্ডল ও রমেশ ঘোষাল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকায় মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিশবাহিনী। নামানো হয় র‌্যাফ। তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম এবং তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দলীয় সূত্রে খবর, মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। তিনি দলীয় স্তরে মুকুল রায়কে গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি, প্রশাসনকে বলেছেন, কোনও রকম শিথিলতা নয়, দোষীদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনও ভেদাভেদ চলবে না।

সরাসরি গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা স্বীকার না করেও তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্ট্যোপাধায় বলেন, ‘‘এটি খুবই গুরুতর ঘটনা। এটা যেহেতু দলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, দলের জেলা নেতৃত্বকে দ্রুত রিপোর্ট পাঠাতে বলেছি। রিপোর্ট পেলে আমি, মুকুল রায়, সুব্রত বক্সি, অরূপ বিশ্বাস এবং শোভন চট্ট্যোপাধ্যায় আলোচনা করব, প্রশাসনিক স্তরে পুলিশ যেমন দোষীদের বিরুদ্ধে ববস্থা নেবে, তেমনই দলের কেউ দোষী হলে দলীয় স্তরেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এ দিন দুপুরে ঘটনাস্থলে পৌঁছন জেলা পুলিশ সুপার প্রবীনকুমার ত্রিপাঠী। তিনি বলেন, “একটা গণ্ডগোলের জেরে দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। এক জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”

পুলিশ জানিয়েছে, ভাঙড় ২ নম্বর ব্লকের ব্যেঁওতা-১ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সত্যজিত্ মণ্ডল ওরফে পাঁচুর অপসারণ ঘিরে বহু দিন থেকেই এলাকায় চাপানউতোর চলছিল। শুক্রবার রাতেও তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে ঝামেলা হয়। এ দিন সকালে ফের বোমাবাজি শুরু হয় এলাকায়। পাঁচুবাবু তৃণমূল ব্লক সভাপতি অহিদুল ইসলামের অনুগামী। মাসখানেক আগে তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন পঞ্চায়েতের বেশ কয়েক জন সদস্য। পাঁচুবাবুকে সরিয়ে নতুন পঞ্চায়েত প্রধান হওয়ার কথা তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ সৌমেন নস্করের।

পুলিশ ও বাসিন্দাদের কথায়, অনাস্থা প্রস্তাব আনার পর থেকেই আরাবুল ও তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর মধ্যে ঝামেলা চলছিল। অভিযোগ, এ দিন সকালে পাঁচু ঘনিষ্ঠ রমেশ ঘোষালের বাড়িতে চড়াও হয় এলাকায় আরাবুলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত কিছু লোক। তাঁর পরিবারের লোকজন জানান, রমেশবাবুকে মারধর করে গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। এর পর পাঁচু মণ্ডলের বাড়িতে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। পুলিশ জানায়, দু’পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি চলে। এই সংঘর্ষে মৃত্যু হয় বাপন মণ্ডল নামে সৌমেন নস্করের এক অনুগামীর। সৌমেন গোষ্ঠীর অভিযোগ, পাঁচু মণ্ডলের সমর্থকদের ছোড়া গুলিতেই মৃত্যু হয়েছে বাপনবাবুর।

এই ঘটনার পরেই উত্তেজনা ছড়ায় গোটা এলাকায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাপন মণ্ডলের দেহ আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম ও তাঁর দলের লোকজন। এলাকার দু’-তিনটি বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। নিহত রমেশবাবুর বাড়ি ও দোকানেও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তাঁর পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, পুলিশের সামনেই রমেশবাবুকে গুলি করে দুষ্কৃতীরা। রমেশবাবুর মেয়ে পারমিতা ঘোষাল জানান, ঘটনার দু’দিন আগে বাজারের মধ্যে তাঁর বাবাকে মারধর করে সৌমেন গোষ্ঠীর লোকজন। ঘটনার কথা জানিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগও করেন তিনি। এর পরেই অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য রমেশবাবু ও তাঁর পরিবারের উপর চাপ দিতে থাকে দুষ্কৃতীরা। তিনি বলেন, “ওরা বাবাকে খুব মারছিল। ভাইফোঁটার আসন থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ওরা বাবাকে গুলি করে। পুলিশ দেখেও কিছু বলেনি।”

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম বলেন, “ঊর্দ্ধতন নেতৃত্ব পুরো বিষয়টির দিকে নজর রাখছেন। রমেশ আমার ঘনিষ্ঠ। পাঁচুর নেতৃত্বেই হামলা হয়েছে। আমি ঘটনার পরে এসেছি। এই ঘটনার সঙ্গে আমি বা আমার অনুগামীরা জড়িত নই। পুলিশকে সব জানিয়েছি। যা বলার পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলবেন।”

এই ঘটনার পর পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ আনে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীই। দু’পক্ষেরই দাবি পুলিশের সামনেই এই তাণ্ডব চলে। তবে জেলা পুলিশ সুপার প্রবীনকুমার ত্রিপাঠী জানিয়েছেন, এ দিন ঠিক কী ঘটেছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

যদিও আরাবুলের এই বক্তব্য উড়িয়ে দিয়ে পাঁচু মণ্ডল বলেন, “রমেশের বাড়িতে হামলা চালানোর পর আরাবুলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা আমার বাড়িতে চড়াও হয়। আমাকে ও আমার ছেলেকে লক্ষ করে গুলি ছোড়ে। আমি রাস্তা দিয়ে দৌড়তে থাকি। উল্টো দিকে দেখি, আরাবুলের আশ্রিত আর একটি দল আমার দিকে ধেয়ে আসছে ও গুলি চালাচ্ছে। আমি ও আমার ছেলে পাশের নয়ানজুলিতে ঝাঁপিয়ে প্রাণ বাঁচাই। আমাকে ছোড়া গুলি লক্ষভ্রষ্ট হয়ে বাপনের গায়ে লাগে। ওরা বাপনকে তুলে নিয়ে চলে যায়। আমরা কোনওক্রমে প্রাণে বাঁচি।”

tmc group clash arabul islam panchu mondal soumen naskar bhangor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy