Advertisement
E-Paper

তৃণমূলের বাধায় সেই নন্দীগ্রামেই ঢুকতে ব্যর্থ মুকুল

খাতায়-কলমে তিনি এখনও তৃণমূল সাংসদ। কিন্তু সেই মুকুল রায়ই দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে নন্দীগ্রামের মাটিতে পা রাখতে পারলেন না! শনিবার সকাল থেকে বিকেল, দফায় দফায় বাধা পেয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হলেন তৃণমূলের সদ্য প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৫ ২০:৪০
ভাঙাবেড়ায় মুকুল রায়ের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

ভাঙাবেড়ায় মুকুল রায়ের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

খাতায়-কলমে তিনি এখনও তৃণমূল সাংসদ। কিন্তু সেই মুকুল রায়ই দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে নন্দীগ্রামের মাটিতে পা রাখতে পারলেন না! শনিবার সকাল থেকে বিকেল, দফায় দফায় বাধা পেয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হলেন তৃণমূলের সদ্য প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।

২০০৭-এর ১৪ মার্চ পুলিশি অভিযানে নিহতদের স্মরণে প্রতি বছর এই দিনটিতে ‘নন্দীগ্রাম দিবস’ পালন করে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি। শনিবার মূল অনুষ্ঠানটি হয় সোনাচূড়ায় ভাঙাবেড়া সেতুর কাছে শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে। তার আগে গোকুলনগরের অধিকারী পাড়ায় ১৪ মার্চের শহিদ বেদিতে মালা দেন তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। সোনাচূড়ায় শহিদ স্মরণ শুরু হয় বেলা সাড়ে ১১টায়। তার আগেই সকাল ১০টা নাগাদ টেঙ্গুয়া মোড়ের কাছে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা। এঁরা সকলেই এলাকায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থক হিসেবে পরিচিত। বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল ‘মুকুল রায় গো ব্যাক’ লেখা প্ল্যাকার্ড ও কালো পতাকা। ‘বিজেপি-র দোসর মুকুল রায়কে নন্দীগ্রামে ঢুকতে দেওয়া হবে না’ বলে স্লোগানও ওঠে। রাস্তা আটকাতে ফেলা হয় টায়ার।

টেঙ্গুয়ার কাছে জমায়েত হয়েছে জেনে মুকুল আর ওই পথে আসেননি। মোট ৮ গাড়ির কনভয় নিয়ে মুকুল তেখালির পথ ধরেন। কিন্তু বেলা ১২টা ১০ মিনিট নাগাদ তেখালি সেতুর সামনে ফের ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা মুকুলের গাড়ি আটকে দেন। এখানেও মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে ঘন ঘন স্লোগান উঠতে থাকে। গাড়ি থেকে নেমে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলতে যান মুকুল। কিন্তু বিশেষ লাভ হয়নি। মুকুলের পিছনের গাড়িতে থাকা হলদিয়ার বিধায়ক শিউলি সাহা-সহ মুকুলের আরও কয়েক জন সঙ্গী নেমে আসেন। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে তাঁদের কথা কাটাকাটি, ধস্তাধস্তি হয়। মুকুলকে ঠেলাঠেলিও করা হয়। শিউলি বলেন, “আমি নন্দীগ্রামের মেয়ে। আজকের দিনে শহিদ বেদিতে মালা দিতে যাব।” কিন্তু বিক্ষোভকারীরা সাফ জানিয়ে দেন, কোনও মতেই মুকুল ও তাঁর সঙ্গীদের নন্দীগ্রামের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হবে না।

বাধার মুখে তেখালি ছাড়ে মুকুলের কনভয়। গাড়িগুলি চলে যাওয়ার সময় কাঠের টুকরো দিয়ে মেরে শিউলির গাড়ির পিছনের কাচ ভেঙে দেয় বিক্ষোভকারীরা। এর পর সঙ্গীদের নিয়ে চণ্ডীপুরের কাছে চলে আসেন মুকুল। সেখানে বেশ কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করেন তাঁরা। ইতিমধ্যে বেলা দেড়টা নাগাদ সোনাচূড়ায় শহিদ স্মরণের মূল অনুষ্ঠান শেষ হয়। সেখানে শুভেন্দু ও শিশির অধিকারী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিছু ক্ষণ পরে আসেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।

বিকেল ৩টে নাগাদ ফের কনভয় নিয়ে নন্দীগ্রামে ঢোকার চেষ্টা করেন মুকুল। এ বার তিনি চণ্ডীপুর থেকে খেজুরির হেঁড়িয়া, বটতলা হয়ে ভাঙাবেড়া সেতুর রাস্তা ধরেন। কিন্তু ভাঙাবেড়া সেতুর কাছে পৌঁছতেই ফের মুকুলকে আটকে দেয় ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির লোকজন। ফের স্লোগান ওঠে ‘মুকুল রায় গো ব্যাক’, ‘ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি জিন্দাবাদ’। এ বার আর মুকুল বা শিউলি কেউই গাড়ি থেকে নামেননি। গাড়ি ঘুরিয়ে তাঁরা চলে যান বটতলায়। সেখানেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুকুল বলেন, “২০০৭ সালের ১৪ মার্চ আমি নন্দীগ্রামে এসেছিলাম। সে দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এসেছিলেন। সে দিনও আমাকে আটকে দিয়েছিল সিপিএম। গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তা করা যায় না। আমি এখানে কোনও অশান্তি চাই না। তাই ফিরে যাচ্ছি।” নন্দীগ্রাম কি তা হলে এখনও অবরুদ্ধ? মুকুলের জবাব, “আমার ক্ষেত্রে অন্তত তাই হল। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়। এ ভাবে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করা যায় না।”

মুকুলকে দফায় দফায় বাধা দেওয়ায় দলের কেউ জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন শুভেন্দু। তাঁর বক্তব্য, “এ দিনের স্মরণসভা আমাদের দলীয় কর্মসূচি ছিল না। এসইউসি-সহ অন্য দলের নেতারাও অনুষ্ঠানে ছিলেন। শহিদ বেদিতে মালা দিতে যে কেউ আসতে পারেন। তবে মুকুলবাবুকে বাধা দেওয়ার বিষয়টি জানা নেই। উনি আসছেন বলেও আমাদের জানাননি। সংবাদমাধ্যম থেকেই জেনেছি।” ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি শেখ সুফিয়ানেরও বক্তব্য, “যারা মুকুল রায়কে বাধা দিয়েছে, তারা আমাদের কেউ নয়। আর এই বাধাদানকে আমরা সমর্থনও করি না।”

যদিও মুকুলকে বিঁধতে ছাড়ছেন না তৃণমূলের মহাসচিব পার্থবাবু। তাঁর কথায়: “উনি কেনই বা এলেন, কেনই বা ফিরে গেলেন জানি না। তবে উনি আমাদের দলের সহকর্মী। এ ব্যাপারে দলকে অভিযোগ জানালে বিষয়টি দেখা হবে।” তাঁর আরও সংযোজন, “নন্দীগ্রামে অনেকে এসেছেন বলে দাবি করেন। কিন্তু আমরা জানি এখানকার আন্দোলনে ছিলেন আপামর মানুষ। অনেকে প্ররোচনা সৃষ্টি করছে। অনেক দল আসছে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।”

শিউলি এ দিন দাবি করেন, মুকুল যে নন্দীগ্রামে আসছেন, সে কথা পুলিশকে জানা হয়েছিল। এমনকী, এ দিন মেচেদা পর্যন্ত তাঁদের কনভয়ের সঙ্গে পুলিশ ছিল। শিউলির কথায়, “মেচেদার পরে পুলিশ কোথায় চলে গেল জানি না। যখন বার বার বাধা দেওয়া হচ্ছে, তখনও পুলিশকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু কেউ আসেনি।” একই সঙ্গে হলদিয়ার বিধায়কের প্রশ্ন, “আমি তো সাসপেন্ড হওয়া বা বহিষ্কৃত বিধায়ক নই। তা হলে কেন আমাদের বাধা দেওয়া হল।”

শিউলি ছাড়া পূর্ব মেদিনীপুর জেলার আর কোনও নেতাকে এ দিন মুকুলের সঙ্গে দেখা যায়নি। তবে মুকুল ঘনিষ্ঠ জেলা নেতা অখিল গিরি, বিধায়ক অমিয় ভট্টাচার্য, মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্ররা তাত্‌পর্যপূর্ণ ভাবে সোনাচূড়ার শহিদ স্মরণে ছিলেন না। প্রত্যেকেই ‘কাজে ব্যস্ত’ বলে অনুষ্ঠান এড়িয়ে গিয়েছেন।

mukul roy nandigram tmc opposes
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy