Advertisement
E-Paper

পাকিস্তানে সেনা-স্কুলে তালিবান হামলা, হত অন্তত ১৩০, খতম ছয় জঙ্গিও

অসলোর মঞ্চে নোবেল শান্তি পুরস্কার নিতে গিয়ে মালালা ইউসুফজাই আরও অনেক মালালার কাহিনি শুনিয়েছিল। কিন্তু তখনও সে জানত না, যে জঙ্গি বুলেটের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে লড়াইটাকে বিশ্বের আঙিনায় নিয়ে ফেলেছে সে, সেই জঙ্গি বুলেটই ঝাঁঝরা করে দেবে তারই দেশের শতাধিক স্কুলপড়ুয়াকে!

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৮:৫০
শেষ শয্যায়। তালিবানি হামলার বলি। ছবি: রয়টার্স।

শেষ শয্যায়। তালিবানি হামলার বলি। ছবি: রয়টার্স।

অসলোর মঞ্চে নোবেল শান্তি পুরস্কার নিতে গিয়ে মালালা ইউসুফজাই আরও অনেক মালালার কাহিনি শুনিয়েছিল। কিন্তু তখনও সে জানত না, যে জঙ্গি বুলেটের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে লড়াইটাকে বিশ্বের আঙিনায় নিয়ে ফেলেছে সে, সেই জঙ্গি বুলেটই ঝাঁঝরা করে দেবে তারই দেশের শতাধিক স্কুলপড়ুয়াকে!

পেশোয়ারে সেনা স্কুলে তালিবানি হামলায় হু হু করে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবরে, মৃতের সংখ্যা ১৩০। এর মধ্যে ১০০ জনের বেশি ওই স্কুলের পড়ুয়া। তাদের বেশির ভাগের বয়স ৯ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালিবান এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। স্কুলটিকে জঙ্গি মুক্ত করতে সাত ঘণ্টা ধরে সেনা অভিযান চলছে। এর মধ্যেই ছ’জন জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাক সেনার মুখপাত্র অসীম বাজওয়া। তবে এখনও লড়াই থামেনি। শেষ ব্লকে অভিযান চলছে। জঙ্গিরা স্কুলে ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইজ (আইইডি) ছড়িয়ে রাখায় সেনা অভিযানে বিলম্ব হচ্ছে। অন্তত ১৫টি বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছে।

পেশোয়ারে গিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তান থেকে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল না করা পর্যন্ত এই লড়াই চলবে। এ বিষয়ে কারও কোনও সন্দেহ থাকা উচিত নয়। এ নিয়ে অাফগানিস্তানের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা এক সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করব।’’ এই ঘটনার জন্য তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন তিনি। পেশোয়ার যাচ্ছেন পাক-সেনাপ্রধান রাহেল শরিফও। যাচ্ছেন পাকিস্তানের অন্যতম বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফ-এর প্রধান ইমরান খানও। এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ট্যুইটারে তিনি জানিয়েছেন, যাঁরা এই ঘটনায় আপনজনদের হারালেন তাঁদের সঙ্গে শোক ভাগ করে নিতে চান। শোকার্ত সদ্য নোবেলজয়ী কৈলাস সত্যার্থীও। তাঁর প্রাণের বিনিময়ে বন্দি শিশুদের মুক্তি দিতে তিনি তালিবানদের কাছে আর্জি জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার সকালে পেশোয়ার ‘আর্মি পাবলিক স্কুল’-এ জঙ্গি হামলা শুরু হয়। পেশোয়ারের ওয়ারসাক রোডের ওই স্কুলে সেনার পোশাক পরা বেশ কয়েক জন বন্দুকবাজ ঢুকে পড়ে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে থাকে। জঙ্গিরা সংখ্যায় ছয় থেকে সাত জন বলে সূত্রের খবর। সঙ্গে সঙ্গেই গুলির আঘাতে লুটিয়ে পড়েন বেশ কয়েক জন শিক্ষক ও খুদে পড়ুয়া। তবে ৫০০ জন পড়ুয়াকে স্কুলের বাইরে বের করে আনা সম্ভব হয়েছে। বাইরে বেরিয়ে তারা জানিয়েছে, স্কুলের অডিটোরিয়ামে সেনাকর্মীরা প্রাথমিক চিকিত্সার প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন। সেখানেও জঙ্গিরা ঢুকে পড়ে। বেরিয়ে আসার সময়ে স্কুল চত্বরে বেশ কয়েক জন সহপাঠী ও শিক্ষকের দেহ পড়ে থাকতে দেখেছে তারা। বেশ কয়েকশো পড়ুয়া ও শিক্ষক আটকে আছেন বলেও তারা জানিয়েছে। খবর পাওয়ার আধ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পাক সেনা। সেনার সঙ্গে জঙ্গিদের গুলির লড়াই শুরু হয়ে যায়। এখনও লড়াই চলছে। অঞ্চলটিকে পাক সেনা ‘সিল’ করে দিয়েছে। আকাশে সেনা-হেলিকপ্টার চক্কর কাটছে। স্কুলটি থেকে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের আওয়াজ এবং বার বার গুলির শব্দ এখনও শোনা যাচ্ছে।

পাক-আফগান সীমান্ত ঘেঁষা পাকিস্তানের উত্তর ওয়াজিরিস্তানে, তেহরিক-ই-তালিবানের বিরুদ্ধে জোরদার অভিযান ‘জরাব-ই-আজব’ চালাচ্ছে পাক সেনা। এটিই পাক-তালিবানদের মূল ঘাঁটি। পাক সেনার দাবি, সেনা অভিযানে সাফল্য মিলেছে। তেহরিক-ই-তালিবান-এর প্রচুর ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে। বেশ কয়েক দিন ধরেই এর বদলা নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে তেহরিক-ই-তালিবান। সেই বদলা নিতেই এ দিনের আক্রমণ বলে তেহরিক-ই-তালিবানের মুখপাত্র মহম্মদ উমর খোরাসানি জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শরিফ-এর মতও তাই। শরিফ বলেন, ‘‘সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের সময়ে এই ধরনের হামলা হতে পারে। এই লড়াইয়ে কোনও মতেই হারা সম্ভব নয়। দেশকে শক্তি হারালে চলবে না।’’ তিনি জানান, ছ’জন জঙ্গি এই হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে আত্মঘাতী জঙ্গিরাও আছে। সেনা জওয়ানদের সঙ্গে তুলনায় বড় পড়ুয়াদের হত্যা করার আদেশ দেওয়া হয়েছে জঙ্গিদের। তবে ছোটদের ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে বলে তাঁর দাবি। যদিও স্কুল চত্বরে পড়ে থাকা শিশুদের দেহ সে কথা বলছে না।প্রাদেশিক তথ্যমন্ত্রী মুস্তাক ঘনি জানিয়েছেন, এ দিনের হামলায় মৃতের সংখ্যা ১৩০ জন। এর মধ্যে ১০০-এর বেশি খুদে পড়ুয়া। হতাহতদের লেডি রিডিং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, আহতদের মধ্যে বেশ কয়েক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। পাশাপাশি, কয়েকশো পড়ুয়া এবং বেশ কয়েক জন শিক্ষককে পণবন্দি করার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেনার দাবি, লড়াই প্রায় শেষের পর্যায়ে। স্কুলের দু’জন কর্মী ও দুই পড়ুয়াকে উদ্ধার করা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন পাক-সেনার মুখপাত্র অসীম বাজওয়া। তবে পণবন্দিদের অবস্থা সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি।

পেশোয়ারে শিশুমেধ: নিন্দা বিশ্বজুড়ে

মালালা ইউসুফজাই

কৈলাস সত্যার্থী

ঠাণ্ডা মাথার অকারণ এই সন্ত্রাসবাদী হামলা দেখে আমার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে। আমি এই জঘন্য কাপুরুষোচিত ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। একই সঙ্গে পাকিস্তানের সরকার ও সেনার পাশে দাঁড়াচ্ছি। যে ভাবে এই হামলার প্রতিরোধে করা হয়েছে তা প্রশংসার দাবি রাখে। বিশ্বের অন্য মানুষের সঙ্গে মিলে শিশুদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি। এরা আমারই ভাই, বোন। আমাদের এই লড়াই হারলে চলবে না।

ওরা আমাকে হত্যা করে বন্দি শিশুদের মুক্তি দিক। যারা এই কাজ করেছে তারা আমার আপনার এবং ঈশ্বরের শত্রু। নিহত শিশুদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল। শিশুরাই হিংসার প্রথম বলি হয়। এক সঙ্গে এই হিংসার প্রতিরোধ করতে হবে।

নরেন্দ্র মোদী

ভ্লাদিমির পুতিন

পেশোয়ারের স্কুলে কাপুরুষোচিত হামলার তীব্র নিন্দা করছি। তাদের জন্য আমার হৃদয় ব্যথিত। আমরা তাদের পরিবারের শোক ভাগ করে নিতে চাই।

রাশিয়া সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের তীব্র নিন্দা করে। সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় পাকিস্তান সরকারকে সব ধরনের সাহায্য করবে রাশিয়া।

নওয়াজ শরিফ

ইমরান খান

পাকিস্তান থেকে সন্ত্রাসকে নির্মূল না করা পর্যন্ত লড়াই থামবে না। এ বিষয়ে কারও কোনও সন্দেহ থাকা উচিত নয়। আমি আফগানিস্তানের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এক সঙ্গে লড়াই করব।

পেশোয়ারের স্কুলের হামলায় স্তম্ভিত। অমানুষিক, বর্বর এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি।

school pakistan taliban
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy